ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু চরম অবহেলিত

ডা. পলাশ বসু
ডা. পলাশ বসু ডা. পলাশ বসু , চিকিৎসক ও শিক্ষক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সম্প্রতি দেখা গেছে একিউআই ইনডেক্সে ঢাকার বাতাস ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে দূষিত থেকেছে। এই দূষিত বাতাস শরীরে প্রবেশ করলে তাতে শ্বাসযন্ত্র, হৃদযন্ত্র, ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি চরম মাত্রায় পৌঁছে। বিষয়টি একদিকে পরিবেশগত অন্যদিকে ভীষণরকম জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত। ফলে এ বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত। কিন্তু প্রতিনিয়ত বাতাসের মান যেভাবে খারাপ হচ্ছে তাতে গুণগত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে করে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

বায়ুর মান সম্পর্কিত এ বিষয়ের সাথে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের অবস্থা কেমন-সে প্রশ্ন তোলাটাও ভীষণরকম জরুরি নয় কি? এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে? পরিকল্পনা থাকলেও তা কেমন-জনগণ তা জানেই না বলতে গেলে। আগের কথা দূরে সরিয়ে রেখে যদি করোনার এ সময়ে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে আমরা কথা বলি তাহলেও বিষয়টি খোলা চোখে যতটুকু দেখা যায়ে তাতে নানাবিধ প্রশ্ন সামনে এসে যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে সেসব বর্জ্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে কি না? এ তো গেল হাসপাতাল নিয়ে কথা। কিন্তু বাসাবাড়িতে এ সময়ে যে মেডিকেল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার কি হচ্ছে? আমরা যে ওয়ান টাইম মাস্ক ব্যবহার করছি বাসায় ফিরে সেগুলো কি করছি আমরা? বাড়িতে থেকে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের থেকে তৈরি মেডিকেল বর্জ্য কি হচ্ছে? নিশ্চয়ই বাসার সাধারণ ময়লার ঝুঁড়িতে তার স্থান হচ্ছে! সেসব বর্জ্য গিয়ে জমা হচ্ছে ল্যান্ডফিলগুলোতে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে দারুণভাবে। এসব বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করে তা ব্যবস্থাপনার জন্য কি কোনোরকম প্রচারণা বা জনসচেতনতা তৈরি করা গেছে? হলেও আমি অন্তত তা দেখিনি বা শুনিনি।

যতটুকু ধারণা করতে পারি তাতে বলা যায়, আমাদের দেশে মেডিকেল যে বর্জ্য প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে তা তো শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। একদম পুরো দেশেই তৈরি হচ্ছে। ফলে পুরো এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা কি তা ভাবছি? এগুলো সাধারণ ল্যান্ডফিলে জমা হলে তা থেকে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত যে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা কি আমরা জানি না? নিশ্চয় আমরা তা জানি। তাহলে এর ব্যবস্থাপনা কেন যথাযথ হচ্ছে না?

গবেষণা থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী (পত্রিকায় প্রকাশিত) প্রতি বছর চিকিৎসা বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫২ লাখ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪০ লাখই শিশু। তবে এ বিষয়ে আমাদের দেশে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই ঠিকই তবে বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি হাসপাতাল ও ৫ হাজার ৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৯০৩। সূত্র বলছে, প্রতিটি শয্যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১.৬৩ থেকে ১.৯৯ কেজি চিকিৎসা বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিদিন যে চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার ব্যবস্থাপনা কেমন হচ্ছে? যথাযথ হচ্ছে কি না? এক কথায় বললে উত্তরে বলতে হচ্ছে– না।

মেডিকেল বর্জ্য আসলে দুই ধরনের হয়-কঠিন ও তরল। কঠিন বর্জ্য ইনসিনারেট বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে ফেলতে হয়। তরল বর্জ্য ট্রিটমেন্ট করার পরে তা সাধারণ তরল বর্জ্যের মতো করে নিষ্কাশন করতে হয়। কিন্তু আমাদের হাসপাতালগুলোতে সে রকম ব্যবস্থাপনা আছে কি?

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জনবল, চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন জড়িত তেমনি তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাটাও জরুরি।করোনা এসে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা দেখেছি উন্নত দেশগুলো নিজেরা তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে এতদিন যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতো করোনাকালে তা কীভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে।

অনুন্নত দেশগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা সুস্থ, সুন্দর, স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের স্বার্থেই আমাদেরও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দারুণভাবে ভাবতে হবে। না হলে সংক্রামক রোগের বিস্তার নানাভাবে বাড়বে বৈ কমবে না।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।

এইচআর/ফারুক/এমএস

বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা সুস্থ, সুন্দর, স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের স্বার্থেই আমাদেরও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দারুণভাবে ভাবতে হবে। না হলে সংক্রামক রোগের বিস্তার নানাভাবে বাড়বে বৈ কমবে না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।