সিটি করপোরেশনের অনুমোদন: ভোগান্তি ও ব্যয় বাড়বে
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রমের পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত সভায় প্রস্তাব আকারে সিদ্ধান্ত হয়, অবকাঠামো নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের (রাজউক) পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হবে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিপত্র বা সরকারি আদেশ জারি না হলেও মন্ত্রী মহোদয়কে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
বিষয়টি আবাসন ব্যবসায়ী এবং যে বা যারা ব্যক্তিগত ভবন তৈরি করবেন তাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তা হবে অপরিণামদর্শী। ভিন্ন ভিন্ন তদারকি সংস্থার অনুমোদন শর্তের পারস্পরিক বৈপরিত্যের শিকার হবেন যারা ভবন নির্মাণ করবেন তারা। ফাইল চালাচালির নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে।
সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে এবং নতুনভাবে প্ল্যান পাস করতে সময় বেশি লাগবে। ভবন তৈরিতে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন, অতিরিক্ত জটিলতা-ভোগান্তি-বিড়ম্বনা এবং দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় সবই বাড়বে। এমনিতেই অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে। ব্যয় বৃদ্ধির নতুন নতুন খাত নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এ সিদ্ধান্তে ভালো কাজ কিছুই হবে না; বরং যারা প্ল্যান জমা দেবেন তাদের হয়রানি বাড়বে। ভবনের প্ল্যান পাস করতে গেলে রাজউকেই মানুষকে হয়রানি পোহাতে হয়। সেখানে নতুন করে অনুমোদনের দায়িত্ব পেলে অবকাঠামো যারা বানাবেন তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হবে সিটি করপোরেশনগুলো। সিটি করপোরেশনের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায়।
এমনিতেই সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণার শেষ নেই। জন্মসনদ জটিলতাসহ সারা বছর মশা, ডেঙ্গু, লেগেই থাকে। যদিও বর্তমান মেয়রদয় ব্যক্তি উদ্যোগে নানা ভালো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তথাপি সিটি করপোরেশনকে এ দায়িত্ব দিলে সেখানেও হয়রানি তৈরি হবে ভয়াবহভাবে।
রাজউক ৫০ বছর থেকে ঢাকায় ছোট-বড় সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে। রাজউকের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তদারকির দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হলে তারা পালন করবে কীভাবে? তাদের তো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জনবল নেই, কোনো কাঠামো নেই। সিটি করপোরেশন যে পারবে না, তা নয় কিন্তু সব কিছুই নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে আরও কয়েকগুণ।
নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণে অনুমোদনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পেলে তাতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হবে। আমরা রিহ্যাব থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেখানে আরও নতুন তদারকি সংস্থা যুক্ত করা হচ্ছে, যা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার জনগণের ভোগান্তি কমাতে চাচ্ছেন। এজন্য অনেক কিছু ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। সেখানে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দিলে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে না কমবে। সরকারকে হয় রাজউককেই দায়িত্ব দিতে হবে, না হয় সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। দুটো প্রশাসনকে একটি কাজের দায়িত্ব দিলে জনগণের ভোগান্তি শুধুই বাড়বে।
আবাসন খাত অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। এ ধরনের প্রস্তাব বিনিয়োগবান্ধব নয়। আমরা আবাসন খাতে বিনিয়োগকে সহজ করার দাবি জানাই। আমরা মন্ত্রীর প্রস্তাব আকারে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।
লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম), রিহ্যাব।
এইচআর/এএসএম