সমস্যা আর দুর্ভোগের শেষ কোথায়?
আমরা প্রতিনিয়ত কোন না কোন সমস্যায় পতিত হচ্ছি। একটি সমস্যা দূর না হয়ে বরং নতুন আরো কয়েকটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হঠাৎ করে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও জনদুর্ভোগ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন এবং আরো লিখবেন। আমি বরং সেদিকে না গিয়ে নিজেদের সতর্কতার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করতে চাই। কেননা সমস্যা আর দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
নতুন ভবনগুলোতে নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দিতে পারছে না। বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সমস্যা যেন আমাদের নিত্য দিনের জীবন সঙ্গী। বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে হবে। তবে আমরা যদি সবাই মিলে কিছুটা সতর্ক হই তাহলে হয়তো বা সমস্যগুলো থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। আমরা ইচ্ছে করলে প্রচলিত বৈদ্যুতিক বাল্ব-এর পরিবর্তে উজ্জ্বল আলো ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এনার্জি বাল্ব ব্যবহার করতে পারি। এতে আমরা যেমন আমাদের বৈদ্যুতিক খরচ এক চতুর্থাংশ কমাতে পারি তেমনি দেশকে লোডশেডিং এর অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা গোসলের পানি গরম করার জন্য বৈদ্যুতিক হিটার বা গ্যাসের চুলার পরিবর্তে সৌরচুল্লি ব্যবহার করতে পারি যা পরিবেশ বান্ধব, সাশ্রয়ী এবং বছর কালের বেশী স্থায়ী।
আমরা আমাদের ভবনগুলোকে এমনভাবে তৈরি করতে পারি যেখানে ব্যবহৃত শক্তিগুলোর যথাযথ ব্যবহার হবে। যেমন শীতকালে আমাদের ঘরের বিদ্যুতের আলোর তাপ ঘরের বাহিরে যাবে না ফলে ঘরগুলো উষ্ণ থাকবে। আমরা যখন ঘুমাতে যাই অথবা অফিস বন্ধ করি তখন আমাদের বৈদ্যুতিক বাল্ব, এসি ও গ্যাসের চুলাগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় সম্পদগুলোর অপচয় রোধে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা দৈনন্দিন কাজের পানির জন্য ঝর্না ব্যবহার করতে পারি যেন অবাধে পানির প্রবাহ না হয়ে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়। আবার চাষাবাদের জন্য প্লাবণ সেচ দিয়ে ঢালাওভাবে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করে ফোয়ারা পদ্ধতিতে সেচ দিলে পানির অপচয় রোধ হয়। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি এখন দুর্লভ বস্তু ।
সম্প্রতি ইত্যাদি অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের গাবুরা ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির জন্য কি হাহাকার তার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। কয়েক লিটার বিশুদ্ধ পানি তারা কয়েক ঘন্টা ব্যয় করে সংগ্রহ করেন। এক ফোটা বিশুদ্ধ পানির জন্য তাদের যে আর্তনাদ তা সত্যিই আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অথচ আমরা পানির অপচয়ের প্রতি দৃষ্টিই রাখি না। তাই বিশুদ্ধ পানি নষ্ট করার দিন আর নেই।
আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী জিনিসপত্র ব্যবহার করে মাসিক বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি মোকাবেলার জন্য আমরা আমাদের স্থানীয় হাসপাতাল গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহ মজুত রাখতে পারি যা আমাদেরকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করবে। আমরা জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ক্রয় করতে পারি। যে হারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। তাই জ্বালানির সাশ্রয় সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির এটাই সময়।
আমরা ঘরের সামান্য কিছু ক্রয় করার জন্য বাড়ির অদূরের কোন দোকানে গাড়ি নিয়ে না গিয়ে পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ব্যবহার করতে পারি। মুখমন্ডল বা শরীরে সাবান ব্যবহারে সময় পানির টেপটি আমরা কিন্তু বন্ধ করে দিতে পারি। ফলে পানির অপচয় কমবে। আমরা বায়ু শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি। প্লাসটিকের ব্যাগ ব্যবহার না করার উপদেশটি যদিও পুরাতন কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা কেউ-ই তা মান্য করি না। আমরা বারবার ব্যবহার করা যায় এমন বাজারের ব্যগ ব্যবহার করতে পারি। যা ভূমি ভরাটে প্লাসটিক ব্যাগের ব্যবহার থেকে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে সহযোগিতা করবে। আমরা অফিসে যাবার জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারি। অন্য জেলাগুলোতে যাবার জন্য ট্রেন ব্যবহার করতে পারি।
অধিক পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। গাছ হচ্ছে কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করার সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম।গাড়ির বিকল্প প্রাকৃতিক জ্বালানি অন্বেষণ শুরু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির চাহিদা তৈরি করতে হবে।
আমরা সবাই যদি সচেতন হই তাহলে অনেক কিছু আয়ত্বে আনা সম্ভব। আমাদেরকে এ বিষয়গুলো একে অপরকে জানাতে হবে। কেননা আপনি প্রাকৃতিক সম্পদ গুলোর অপচয় রোধ করছেন আর আপনার প্রতিবেশি যদি তা না করে থাকে তাহলে আপনি সচেতন ব্যক্তি নন। তাই প্রতিবেশীদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
এমনিতেই বর্তমানে নিত্যব্যবহৃত দ্রব্যমূল্য নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এরমধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ পড়েছে আরো বিপাকে। শহরের মানুষ হয়তো ভাববে কেরোসিনের দাম বাড়ায় তাতে কি আসে যায় কিন্তু গ্রামের গরিব মানুষ যারা কেরোসিন জালিয়ে ঘরের আলোর ব্যবস্থা করে তাদের কি অবস্থা হবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি। গতকাল পাশের দোকানে গিয়েছিলাম সদাই কিনতে তখনই একজন মহিলা আধা লিটার কেরোসিন চাইলে দোকানি প্রথমেই বলছেন আধা লিটারের মূল্য কিন্তু ৪৫টাকা। আধা লিটার কেরোসিনে হয়তো কয়েক ঘন্টা জ্বালানো যাবে। কেরোসিনের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি খেটে খাওয়া গবির মানুষের জীবন মানের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। শুধু কেরোসিন নয় সবকিছুর মূল্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া শুরু করেছে। পরিবহনগুলোও দিগুণ ভাড়া আদায় করছে। তাই কোন কিছুর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা যদি কাজ করি তাহলে দেশ ও দশের কল্যাণই বয়ে আনবে।
এইচআর/এমএস