ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
ড. প্রণব কুমার পান্ডে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। সুদীর্ঘ সময় পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকারের নিষ্পেষণে নিষ্পেষিত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশ যখন ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের নিষ্পেষণে নিষ্পেষিত এবং দিশেহারা ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শক্তভাবে।
আমরা জানি যে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশের মাটিতে ফিরে এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল সেই কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছিলেন। তিনি সঠিক পথেই এগোচ্ছিলেন যা ঘাতকদের পছন্দ হয়নি। ফলে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা আওয়ামী লীগকে দুমড়ে-মুচড়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ঠিক সেই সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সেদিন থেকে তাঁর যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
তাঁর প্রথম কাজ ছিল ভঙ্গুর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। তাঁর নেতৃত্বে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধলে এরশাদের পতন হয় এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে না পারলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল তার গতি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় স্তিমিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তাঁর সরকার পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর জন্য। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী নারী জন্মগ্রহণ করেন বিধায় এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে শুধু তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাই জানাবো না, বরং তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশের এই অসামান্য উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবার জন্য।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাবার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। গত ১২ বছর ক্ষমতায় থেকে তিনি বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা অনুন্নত দেশ থেকে তাঁর নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশকৃত হয়েছি। উন্নয়নের যে প্রক্রিয়া দেশে চলমান রয়েছে তাতে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে গত ১২ বছরে। বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল এবং কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ যে সমস্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে যা এক দশক আগেও কল্পনারও অতীত ছিল। বাংলাদেশ বিশ্বে এশিয়ান টাইগার হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
যে কোন সেক্টরে উন্নয়নের জন্য একটা দেশের নেতৃত্বের গুণাবলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে ২০১৫-২০২০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইনডেক্সে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে বিধায় জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সলিউশন নেটওয়ার্ক (ইউএনএসডিএসএন) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার প্রদান করেছেন যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি গত দেড় বছরের অধিক সময় ধরে চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে সফলতা তা বিশ্বে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যে সময় অনেক ধনী দেশ করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছে, ঠিক সেইসময় বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যথেষ্ট সফলভাবে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতাকে মোকাবেলা করেছে। আমাদের দেশে প্রাণহানি এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এটিও সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের জন্য কারণ তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উন্নয়নের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় চেষ্টা করেছেন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স অনেক ক্ষেত্রেই প্রশংসিত হয়েছে। তবে একথাও ঠিক অনেক সময় সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই অবগত রয়েছেন। তিনি যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে এগিয়ে চলেছেন সেই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসনীয়। আমরা জানি বাংলাদেশ উন্নয়নের যে ট্রেনে উঠে গেছে সেটি অব্যাহত থাকবে তাঁর নেতৃত্বে। তবে সেই উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। দেশে এখনও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, ও শাসন ব্যবস্থায় মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হয় যা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত।
আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আজকের দিনে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমরা সকলেই আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে আপনি হচ্ছেন বাংলাদেশের জনগণের ভরসার স্থল। ফলে, আপনাকে সুস্থ থাকতেই হবে দেশের জন্য এবং দেশের জনগণের জন্য।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর।
এইচআর/জেআইএম