আলোর দিশারী হয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২২ মে ২০২১

ফারাজী আজমল হোসেন

বাংলাদেশের রক্তমাখা ইতিহাসে কলঙ্কিত একটি দিন ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ম্লান করে দিতে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই দিন সপরিবারে হত্যা করে কিছু বিপথগামী দুর্বৃত্ত সেনা সদস্য। তাদের সহায়তা করে বেশ কিছু দেশের কূটনীতিক এবং গোয়েন্দা সংস্থা। এ সময় বিদেশে থাকার কারণে রক্ষা পান বাংলাদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা। কিন্তু পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সেনা সদস্যরা ক্ষমতায় থাকার কারণে বাবা এবং পরিবারের সদস্যদের লাশ দেখার সুযোগও হয়নি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার। এমনকি পরিবারের সকল সদস্যের কবরও দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি তাদের।

বাংলাদেশের ১৯৭৫ থেকে পরবর্তী বছরগুলোকে অন্ধকার যুগই বলা যায়। কেননা এ সময় অসংখ্য সামরিক ক্যু ও হত্যার রাজনীতি ছিলো নিয়মিত ঘটনা। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলো সেখান থেকে পশ্চাদপদে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদেরা। লক্ষ্য ছিলো বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেন কেউ বলতে না পারে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে এ সময় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। গুম ও হত্যা নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়। বেকার অবস্থায় যুব সমাজ অপরাধে জড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান তখন ঘোষণা দেয়- 'আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেবো।' বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামকে রাজনীতির সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটনার সুযোগ তৈরি করে দেন জিয়াউর রহমান। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ, বামদল সহ অন্যান্য দল থেকে বিতাড়িত সদস্য ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে জিয়াউর রহমান গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। গণ ভোটের তামাশা করে রাষ্ট্রপতি হয়ে যান বাংলাদেশের। দেশে যখন এমন যাচ্ছে তাই অবস্থা, তখনও জাতির পিতার পরিবারের কারো দেশে প্রবেশে ছিলো নিষেধাজ্ঞা। এমনকি বিদেশেও একাধিকবার হত্যা চেষ্টা করা হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের দুই সদস্যকে। কিন্তু এই হত্যার হুমকি মৃত্যু ভয়, সবকিছুকে ছাপিয়ে ৪০ বছর আগে দেশে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে আসেন শেখ হাসিনা।

'হাসিনা: এ ডটারস টেল' ডকুড্রামায় পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার বোনের দীর্ঘ ৬ বছর বেঁচে থাকার তীব্র লড়াইয়ের ইতিহাস থেকেও বোঝা যায় কি অবস্থায় থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার সাহস দেখিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তিনি ফিরে এসেছিলেন আলোর দিশারী হয়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনা, যিনি দেশের অধিকাংশ উপজেলায় নিজে গিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের পর শোষণ যন্ত্রের তীব্র নিপীড়নে ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগকে সুগঠিত করতে উপজেলায় ত বটেই সেই সঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলায় সফর করেন শেখ হাসিনা। দল সুসংগঠিত করার পর তিনি শুরু করেন গণতান্ত্রিক আন্দোলন। ততদিনের সামরিক ক্যু এর কারণে নিহত হয়েছে জিয়াউর রহমান এবং দেশের ক্ষমতায় রয়েছেন আরেক সামরিক জান্তা এরশাদ। তার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সফল হলে বাংলাদেশে ফিরে আসে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দল কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ যে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় দলীয় সভাপতির নেতৃত্বে সংসদে সবচাইতে দীর্ঘ সময় অবস্থান নেয়।

জাতির পিতার এই কন্যা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় যতটা সফলভাবে দেশ গঠনে কাজ করেছেন, একইভাবে সরকার গঠনের পর দেশ গঠনে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর অধিকাংশই শেখ হাসিনার। বঙ্গবন্ধুর পরে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং গঙ্গা পানি চুক্তির মত ঐতিহাসিক দুটি চুক্তি হয়। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের শাসনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও তা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

উল্টো ২০০১-২০০৬ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামের দেশের প্রতিটি প্রান্তে গড়ে তোলে জঙ্গি ঘাঁটি। সরকারি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মাটিতে প্রশিক্ষণ নেয় দেশি-বিদেশি জঙ্গিরা। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী ভারতের জঙ্গি ও চরমপন্থিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তখন বোমা হামলা ছিল নিয়মিত ঘটনা। দুর্নীতিতে সে সময় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও সেই খবর ছাপার সুযোগ হতো না পত্রিকাগুলোর। কেননা কিছুদিন পরপর জঙ্গি কার্যক্রম ও বোমা হামলার শিরোনাম থাকতো পত্রিকা জুড়ে। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দীর্ঘ দুই বছরেও এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

উল্টো দেশকে রাজনীতিহীন করার একটি চেষ্টা হয়েছে। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০৯ সালে নির্বাচনী বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এবার শুরু থেকেই জঙ্গিবাদ ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের কলঙ্ক হয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধগুলোর বিচার কার্যক্রম হাতে নেন তিনি। তার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই শত বাধা ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে আজ সম্পন্ন হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ যে কখনই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি তা প্রমাণে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা, যেখানে তাকে সমর্থন দেয় দেশের সাধারণ জনগণ। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে সক্ষমতা অর্জনের কারণে বিশ্ব জুড়ে প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ।

শুধু জঙ্গিবাদের অন্ধকার থেকে তিনি বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন তা নয়। বরং বাংলাদেশকে তিনি আলোকিত করেছে সব দিক থেকে। বেকারত্ব দূর করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, যুবকদের কর্মক্ষম করে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। আগে বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক পাঠাতো বাংলাদেশ ফলে রেমিটেন্স অর্জন হতো কম। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও যুবমন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরি করছে বাংলাদেশ। ফলে বিদেশে গিয়ে বর্তমান কর্মীরা বেশি আয় করতে সক্ষম হচ্ছে এবং বাংলাদেশও অর্জন করছে বাড়তি রেমিটেন্স। পূর্বে হুন্ডিরা মাধ্যমে দেশে অধিকাংশ অর্থ আসলেও বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ প্রদানের কারণে অর্থ আসছে বৈধ পথে। ফলে তা দেশের জাতীয় অর্জনে যুক্ত হচ্ছে।

শুধু কর্মসংস্থান তৈরি নয়, বরং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি, ইপিজেড তৈরি, শিল্প স্থাপনের জন্য সুযোগ প্রদান, কলকারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ বৃদ্ধিসহ বেশি কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ, যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির কল্যাণে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে ডিজিটাল সেবা দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ হ্রাস করে তরুণদের জন্য নবদিগন্ত উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে উদ্ভাবনকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শক্তিশালী করা হয়েছে আইসিটি ডিভিশনের কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্ভাবন উপযোগী করে গড়ে তুলতেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করেছে। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার স্বীকৃতি লাভ করেছে বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নেতৃত্বে। শুধু তাই নয়, ১৯৭২-৭৩ সালে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা শুরু হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছিলো না। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কল্যাণে আজ উভয় দেশের ছিটমহল বাসীরা স্বস্তিতে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি অঙ্গনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

আজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের বুকে এক বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশ। এক দশক ধরে টানা ৭ ভাগের বেশি জিডিপি অর্জনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করছে। সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কল্যাণে আজ শত বর্ষের ডেল্টা প্লান গ্রহণ করতে পেরেছে যা হয়ত কেউ কল্পনাই করতে পারেনি।

স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চান তিনি। আজ তার নেতৃত্বে গড়ে উঠছে আলোকিত বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বে কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখার আশা করছে আজ বাংলাদেশের মানুষ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/এএসএম

স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চান তিনি। আজ তার নেতৃত্বে গড়ে উঠছে আলোকিত বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বে কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখার আশা করছে আজ বাংলাদেশের মানুষ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।