উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ এবং চ্যালেঞ্জ

ড. মিল্টন বিশ্বাস
ড. মিল্টন বিশ্বাস ড. মিল্টন বিশ্বাস , অধ্যাপক, কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দেশবাসী পেয়েছে আনন্দবার্তা। করোনাসংকট জয়ী জননেত্রী জানিয়েছেন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অমিত সম্ভাবনার কথা। আসলে ২৬ ফেব্রুয়ারি (২০২১) বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতিসংঘ কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে। ওই দিন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষিত হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের তিনটি শর্ত ছিল- মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলারে রাখা, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা নিচে আনা। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ তিনটি শর্তই পূরণ করে এসেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবউন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭৫.৩ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ২৫.২। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সিডিপি প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করে থাকে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি-না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করা লাগে। সিডিপির পরপর দুই মূল্যায়নে এসব মান অর্জন করলেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়।

এতদিন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ ছিল। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। বর্তমানে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি সামনে আনা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যে দেশগুলো তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে আছে, তাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে জাতিসংঘ। সেই পর্যায় থেকে মুক্তি ঘটল এদেশের। এই কৃতিত্ব অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

২.

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার সকল উদ্যম রহিত হয়, মানসিকভাবে হতোদ্যম এদেশবাসী ২১ বছর সামরিক শাসকদের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। কীভাবে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে সামনে যেতে হবে, কীভাবে বিশ্বের দরবারে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে হবে, কীভাবে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে হবে তার সবই সে সময় নির্বাসিত, অন্তর্হিত, যেন প্রভাতে প্রদীপের সলতে পাকানোর কোনো লোক নেই, সন্ধ্যায় আলোকপ্রাপ্তি তো দূরের কথা! তারপর এলো ১৯৯৬ সাল; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাঙালির অহংকার হয়ে উঠলেন, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়ে তিনি মানুষের সামনে দাঁড়ালেন। দেশের রাজনীতিতে সমাজসংস্কার আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে উঠল মূলমন্ত্র; বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মঙ্গলচিন্তায় ব্যাপিত হলেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন’ গ্রন্থের নামপ্রবন্ধে তিনি লিখলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মসূচি প্রয়োজন। আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিকে আরও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সুখ-সুবিধা নিশ্চিত করা, শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা, সুস্থসবল জাতি গঠন করা। রাজনীতি হতে হবে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে। দেশকে আমরা কী দিতে পারলাম সেটাই একজন রাজনীতিবিদের চিন্তা-ভাবনা হতে হবে। দেশ কী দিল তা বড়কথা নয়। দেশের জন্য, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড়কথা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে। আজকের প্রতিযোগিতা হতে হবে অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে। সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে।’(রচনাসমগ্র ১, পৃ ২১৩)

এই উদ্ধৃতির সূত্র ধরে বলতে হয়, শেখ হাসিনার সৎ, বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথাউঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী দশ নারীনেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছেন। অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তার দিক থেকেও শেখ হাসিনার সমকক্ষ হিসেবে কাউকে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই। ২০২০ সালের শুরুতে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পরিচালিত এক জরিপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের জনসমর্থন আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় সরকারের প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে ১৯ শতাংশ। সংস্থাটির ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জরিপে বলা হয়েছিল, সরকারের প্রতি জনসমর্থন ১৯ শতাংশ বেড়ে ৮৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ৩৬ শতাংশ মানুষ বিরোধী দলের কার্যক্রমকে সমর্থন করছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ- বিরোধী দলের সমর্থক ক্রমান্বয়ে কমেছে। ৭৭.৭ শতাংশ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ সঠিক নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৬২ শতাংশ।

এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা দিন দিন অপ্রতিরুদ্ধভাবে বেড়েই চলেছে। এমন নেতৃত্বের কারণেই মহাকাশে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগতভাবে তার অগ্রসরতা জানান দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সুসংহত করার পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ গত ১২ বছরে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ যে পথ পাড়ি দিয়েছে, তাকে ‘অসাধ্যসাধন’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির দুর্যোগ মোকাবিলা করে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। তার কারণেই ‘আমরাও পারি’ এই শাণিত বাক্যে দীক্ষিত আজকের প্রজন্ম। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পারে কিনা। কিন্তু আমরা সেই অসাধ্যসাধন করতে পেরেছি।’ প্রকৃতপক্ষে গত ১২ বছরে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে।

৩.

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রী- বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাকে কেন্দ্র করে, তার নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; জাতীয় সংকট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জনতার আকাঙ্ক্ষাসমূহ এবং টিকে থাকার বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধনের সাহায্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছেন। তার নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে গেছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছে। ভিকটিমের দ্রুত বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষিত হয়েছে (১০ অক্টোবর, ২০১৮), এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যাকাণ্ড ও বিডিআর সদস্য কর্তৃক সেনাসদস্যদের হত্যার বিচারসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হওয়া তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি-জামায়াতের সহিংস বীভৎসতাকে। অতীতে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও আর পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যা করেও তারা থামাতে পারেনি যুদ্ধাপরাধের বিচার। এখন দমে গেছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা। শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, কূটনীতিক দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সব বিরূপ পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। তার মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক। কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদার বানিয়ে ফেলেছেন রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশকে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা সে কথা আরও বেশি করে জানান দিয়েছিল। তার সরকারের উন্নয়নের মডেল অন্যান্য দেশের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল নির্মাণের অগ্রগতি দেশবাসীকে অবাক করেছে লেখাবাহুল্য।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বের ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। বেশ কয়েকটি অভীষ্টে কাঙ্ক্ষিত অর্জন না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে চারটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সঠিক পথে ও ছয়টি অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে।

গত মেয়াদে (২০১৪-২০১৮) প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এ প্রকাশিত ‘পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ: ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসন ন্যায়সঙ্গত। সেটার কারণ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সফলতা। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা জেনেছি, বিশ্বব্যাংকের ‘মানবসম্পদ সূচক’ বলছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়নে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে আছে। একটি শিশুর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকে থাকার সক্ষমতা বিচার করে ভবিষ্যতে তার উৎপাদনশীলতা এবং আয়ের সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এর ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে তাদের ‘মানবসম্পদ সূচক’, দেখানো হয়েছে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে এখন যাদের বয়স ১৫ বছর, তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশের প্রত্যাশিত আয়ু হবে ৬০ বছরের বেশি। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে একই কাতারে। ভারতে এই হার ৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮৪ শতাংশ, নেপালে ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৬৪ জন কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। ভারতে এই সংখ্যা ৬২, পাকিস্তানে ৫৫, শ্রীলঙ্কায় ৮৩। এই সূচকে উন্নতির অন্যতম কারণ হলো- শেখ হাসিনার আমলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ বেড়েছে। ২০০৯ সালে তিনি ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমে এসেছে।

গ্রামীণ জীবনের ব্যাপক রূপান্তরে শেখ হাসিনার অবদান অতুলনীয়। এ বিষয়ে তার ভাবনার বিকাশ অনেক আগে থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলার জন্য নতুন নতুন চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে পারে। প্রতিটি পরিবার যদি যত্নবান হয়, আধুনিক প্রযুক্তি ও চিন্তাভাবনা গ্রহণ করে- তাহলে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারে।’(পৃ ২১৬) শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু রয়েছে। এসব তথ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারি ফরম, নোটিশ, পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সেবাবিষয়ক তথ্য, চাকরির খবর, নাগরিকত্ব সনদপত্র, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, বিদেশে চাকরি প্রাপ্তির লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশনসহ ২২০টি সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু মোবাইল ব্যাংকিং, জীবনবীমা, মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুৎবিল পরিশোধ এবং জমির পর্চাসহ অন্যান্য সেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা টেলিমেডিসিন সিস্টেমসহ চলছে। মোবাইল টেলিফোন সিমের সংখ্যা ১৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে আর থ্রি-জি’র পর ফোর-জি (২০১৮) প্রযুক্তি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ব্যাপকভাবে। মোবাইল ফোনেই ভিডিও-কল করা যাচ্ছে এখন; টিভি দেখা হচ্ছে; ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে। করোনা মহামারিতে অনলাইন ক্লাসে টেলিকনফারেন্স এখন সহজ ব্যাপার। এভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্যই চীন-জাপান-ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানসহ বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন। তাদের মতে, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব অনিবার্য।

দেশের দুটি ধারার রাজনৈতিক বলয়ের একটির লক্ষ্য, বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। অন্যদিকে আরেকটি শক্তির অভিলাষ- যেকোনো মূল্যে ১৫ কিংবা ২১ আগস্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়া। শেষোক্ত দুষ্কৃতিকারী সবসময় দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে চেয়েছে। বিশেষত ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ১৯ বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। মূলত হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকির মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এটা নিশ্চিত। তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভশক্তির মোকাবিলা করতে হবে। সামনে বাধা এলে তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকতে হবে। ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা ও স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা জীবিত রয়েছেন। তিনিই তার পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা বসে নেই; ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাই সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আগেই বলেছি, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কারণ আমরা পারি, আমরা নির্ভীক ও আমাদের গতি অদম্য।

jagonews24

৪.

বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন; সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন; তার সেই আদর্শিক ধারায় স্নাত হয়ে শেখ হাসিনা মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে জনগণের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। জননেত্রীর নেতৃত্বে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। শেখ হাসিনা তার নিজের কাজে প্রমাণ করেছেন যে, রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও জনগণের ভাগ্য-উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার খাত এদেশের মানুষ। অতিরিক্ত জনশক্তির দেশ এটি। ষোল কোটি মানুষের মেধা আর বত্রিশ কোটি দক্ষ কর্মীর হাতের পরশে যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। বিশ্বের কোথাও এদেশের মতো এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনার জনশক্তি আছে বলে মনে হয় না। আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি তরুণ। এই তারুণ্যের শক্তি কী না পারে? কোনো কাজই এদের কাছে অসাধ্য নয়। ‘৫২, ‘৬৯, ‘৭১, কিংবা ‘৯০ এর বিজয়ে তরুণরাই অগ্রপথিক ছিল। তরুণদের কাছে অস্ত্র ছিল না ছিল শুধু সাহস। সে সাহসের হাত ধরেই তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আজও আমাদের তরুণরা বসে নেই। দেশের অগ্রগতিতে তাদের অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এরা মিথ্যাশক্তিকে যেমন গুঁড়িয়ে দিতে পারে তেমনি ভূমিকা রাখতে পারে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ গড়তে। জাতির কাণ্ডারীর ভূমিকায় শক্তহাতে হাল ধরার ক্ষমতাও এদের আছে। কোনো অন্যায় কিংবা মিথ্যাশক্তির কাছে এরা কখনো মাথানত করেনি আর করবেও না কোনোদিন। বাংলাদেশে এখন প্রতি তিনজনে দুজনই উপার্জনক্ষম। নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাতীয় সঞ্চয় বেড়েছে। অর্থনীতি সবল হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি। এর সঙ্গে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুব জনসংখ্যাকে ধরলে বলা যায় যে জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগই টগবগে তরুণ। বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর ‘উন্নতি করার’ তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা একটা সামাজিক-পুঁজি। তরুণপ্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব পালন করছে বর্তমান সরকার। একথা ঠিক মেধা আর যোগ্যতার জোড়েই বিশ্ব মানচিত্রের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের নাম। এদেশের সীমিত সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাবই। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল তাদের আত্মশুদ্ধি ও আত্মসমালোচনার মধ্যে থেকে কাজ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ‘ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করব- এ শপথ ব্যক্ত করার দিন এসেছে।

৫.

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জনের ফল, স্বপ্নজয়ের আকাঙ্ক্ষা আর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। প্রায় শতকরা ৮৮ ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশে এখন দারিদ্র্যের হার শতকরা ২১.৪ ভাগ। তাই এদেশ স্বপ্ন দেখছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে যে চেষ্টা আর উদ্যম ছোট্ট এই ভূখণ্ডে, তাকে বড় কোনো স্বপ্ন নয় বলেই মনে করছেন বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান এদেশের অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।

আমরা এখন অদম্য বাংলাদেশের বাসিন্দা- যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন, যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, দীর্ঘতম পদ্মাসেতু যার গৌরবে পরিণত হতে যাচ্ছে, দেশের তৈরি পোশাক বিদেশিদের গায়ে পরিধেয় বস্ত্র হচ্ছে, বিশ্ব দরবারের প্রথম কাতারে ব্যবসায়-বাণিজ্য, গবেষণা, ক্রীড়া সব ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা আর পেট্রলবোমার সন্ত্রাস আমাদের মনোবলকে ধ্বংস করতে পারেনি। নেতিবাচক কোনো অভিঘাতই অদম্য বাংলাদেশের মেরুদণ্ডকে বাঁকা করতে পারছে না। এখন দরকার সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং স্বাধীনতার পক্ষের চেতনার সরকার ও বিরোধী দল। ‘আমরা উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে সকল বাধা দূর করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।’

(১২-১-২০১৮) শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পূর্ণ হওয়ার পর। তিনি করোনাকালে ও ‘মুজিববর্ষে’(২০২১) অনলাইনে জাতিসংঘের ভাষণে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাধির সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন। তার ওই অভিব্যক্তি জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন নীতিমালার প্রতি আমাদের সমর্থনকে আরও বেশি বেগবান করেছে; বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার শক্তি জুগিয়েছে। উক্ত ভাষণে তিনি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এর আগে (২০১৭ সাল থেকে) রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নিজের অভিমত প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভাতা দেয়ার কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন। অসহায় মানুষকে সহায়তা করা, গৃহহীন মানুষের আশ্রায়ণ প্রকল্প গ্রহণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে উদ্ভাবনী আর্থসামাজিক পদক্ষেপসমূহের কথা বলে আমাদের এগিয়ে চলার চিত্র অঙ্কন করেছিলেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণের কথাও বলেছিলেন। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদে যেমন ৭২ জন নারী সদস্য তেমনি তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশ নারী শ্রমিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাও অনেক।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে থেকেও এগিয়ে চলেছে। শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ভাষণে বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ শীর্ষক মেগাপ্রকল্পের কথা বলেছিলেন। যা আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা সৃষ্টিতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে একীভূত করার দৃষ্টান্ত। ৮২ বছরের এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তিনটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সময়সীমা অর্থাৎ ২০৩০ সালকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবে বিবেচনা করে এর আওতায় প্রাথমিকভাবে ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে জনশক্তি রফতানিতে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ১০ লাখেরও বেশি শ্রমিক গেছেন বিভিন্ন দেশে। রেমিট্যান্স গতি ফিরে পেয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জুন মাস পর্যন্ত এক হাজার ৮০০ কোটি (১৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বিশ্বজুড়ে মহামারি চলার মধ্যেও রেমিটেন্স বাড়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরও বেড়েছে। ২০২০ সালের জুন মাসে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি আমাদের মনোবলকে চাঙ্গা করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রথম নিবন্ধিত ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে সনদ পেয়েছে জামদানি ও ইলিশ মাছ। ফলে এ দুটি পণ্যের স্বত্ব কেবলই বাংলাদেশের। বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহায়তা প্রসারিত করা হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণা সংস্থা বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এই বিনিয়োগ প্রায় ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলারের কম হবে না। বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের দ্রুত বৃদ্ধি এ খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

৬.

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর পরিশ্রমী উদ্যমী মানুষের চেষ্টায় দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আসীন। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠলে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে উন্নয়ন আর অগ্রগতির অনন্য এক উদাহরণ। গত এক যুগে স্থানীয় পর্যায়ের যতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশ আসনেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কারণ সেগুলো ছিল বর্তমান সরকারের উন্নয়নের প্রতি জনগণের রায়ের প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে মূল্যায়ন করেছেন। এই অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষার হাত থেকে মুক্ত করে একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্বে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তিনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। কিন্তু পঁচাত্তরে অগণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্থানের ফলে তা ব্যাহত হয় যা দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার পুনরুজ্জীবিত হয় ১৯৯৬ সালে।

উন্নয়নশীল দেশের তকমা এনে দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং অগ্রসরতার প্রতি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসাই আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার পাথেয়। জনগণ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই আওয়ামী লীগ বারবার জয়ী হয়। দেশের মানুষ বিগত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। শেখ হাসিনার মতো যারা জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি করেন, জনগণ তাদের পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের পক্ষে থাকবে, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে- এটাই আমাদের বিশ্বাস। আর সেদিন কাছেই যখন উন্নয়নশীল দেশ থেকে এদেশ উন্নত দেশের তকমা পাবে নিশ্চিতভাবে।

লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম; নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

এইচআর/এমএস

জাতিসংঘের সিডিপি প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করে থাকে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি-না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করা লাগে। সিডিপির পরপর দুই মূল্যায়নে এসব মান অর্জন করলেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।