কারণ জানা প্রতিকার কোথায়?
এটা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার যে, করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে নেই সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ যাচ্ছে। আহতের সংখ্রাও অনেক। এগুলোকে ‘দুর্ঘটনা’ না বলে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলাই উচিত। যেটি অনিবার্য সেটি দুর্ঘটনা, আর অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার কারণে যেটি ঘটে সেটি অবশ্যই হত্যাকাণ্ড। দেখা যাচ্ছে একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর থাকছে। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এর প্রতিকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এবার টাঙ্গাইলে ট্রাকের ধাক্কায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) গভীর রাতে টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়কের নাগরপুর উপজেলার দাসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- দেলদুয়ার উপজেলার বানালিয়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে আক্তার সানি (১৮), টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কাগমারা গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মমতা হীরা সূকর্ণা (১৫) ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া গ্রামের মোস্তফার ছেলে বাপ্পি (২২)। এ ঘটনায় চালক পালিয়ে গেলেও ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। এধরনের দুর্ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে গড়ে বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সঙ্গতকারণেই এই সমস্যা থেকে মানুষজনকে মুক্ত রাখার সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।
দুর্ঘটনার কারণগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই কমবেশি জানেন। এর মধ্যে রয়েছে- দেশে সড়ক অবকাঠামো এবং স্থলভাগের আয়তন অনুপাতে জনসংখ্যার চাপ বেশি। সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন। উপরন্তু সড়ক ও মহাসড়কগুলো ত্রুটিপূর্ণ। দেশব্যাপী মহাসড়কের অনেক স্থানেই রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। এসব বাঁকের কারণে প্রায়শই সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া অবকাঠামোগত কারণেও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি খুব বেশি বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি দুর্ঘটনা মহামারীর আকার ধারণ করার জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো। এই সমস্যা বার বার চিহ্নিত হলেও এর কোন প্রতিকার নেই।
প্রতিবার দুর্ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদন কোনদিন আলোর মুখ দেখে না। আর সঙ্গত কারণেই দোষীদের শাস্তিও হয় না। সমাজের উঁচু স্তর থেকে নিচু শ্রেণির মানুষ- যারাই দুর্ঘটনার শিকার হন না কেন কোন একটি ঘটনার বিচার হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার। আর বিচারহীন, প্রতিকারহীন অবস্থায় কোন কিছু চলতে থাকলে সেটির পুনরাবৃত্তিও তো ঘটবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কত প্রাণ গেলে, মৃত্যুর মিছিল কত দীর্ঘ হলে তবে থামবে এই হত্যাযজ্ঞ?
এইচআর/পিআর