কঠোর শাস্তির বিধান কি ধর্ষণ প্রবণতা কমাবে?
ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়া এবং নারী নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন গড়ে ওঠার পটভূমিতে ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন এই সংশোধনীতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সংসদ চালু না থাকায় আজ (১৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি এই নতুন সংশোধিত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করবেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।
আইনে ছয় মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তি বাড়লে ধর্ষণ প্রবণতা কমবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পক্ষে যেমন মত আছে, আবার বিপক্ষেও যুক্তি আছে। শুধু আইন অপরাধ কমাতে পারে না। অপরাধ সংঘটনের বিদ্যমান কারণগুলো দূর না করলে অপরাধ অব্যাহত থাকবে বলে কেউ কেউ মনে করেন। নারী নির্যাতন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা দেশে যে একটি বড় সমস্যা হয়েই দেখা দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীনির্যাতন বন্ধ করতে হবে- এটা নিয়ে খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। কীভাবে সেটা সম্ভব তা নিয়ে আছে মতভিন্নতা।
নারীকে অধঃস্তন হিসেবে দেখার পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন বদল না হবে, নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার মানসিকতা যতদিন গড়ে না উঠবে ততদিন নারীকে অসম্মান এবং বৈষম্যের শিকার হতে হবে বলেই মনে করা হয়। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ কুসংস্কার, পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে উগ্রসাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী রাজনীতি।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেই নারীদের অগ্রসর হতে হচ্ছে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে হচ্ছে। পদে পদে বাধা, তারপরও সরকারের কিছু নারীবান্ধব নীতি-পদক্ষেপের কারণে নারীদের অবস্থা ও অবস্থানের যখন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেশের বাইরেও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, প্রশংসিত হচ্ছিল, তখন নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যমতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৮৮৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪১ জন নারীর।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে যেসব নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রায় সবক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার হয়েছে। এরা যাতে সবাই অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি পায়, তাদের প্রতি যেন কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানো না হয়। সরকার এবং প্রশাসনের দৃঢ়তা পরিস্থিতি পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।
একটু নজর দিলেই দেখা যাবে যে, আমাদের দেশে মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বেনবেইজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি। ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর অনুপাত ছিল ৬৬:৩৪। ২০০৫ সালে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যায় সমতা আসে। বর্তমানে ছাত্রী সংখ্যা বেশি। উপবৃত্তি, বেতন মওকুফ, বিনামূল্যে বই প্রদান ইত্যাদি কারণে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করা যায়। তবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম। শিক্ষার সর্বস্তরেই নারী শিক্ষকের সংখ্যা এখনো কম। কোটাব্যবস্থা করেও এক্ষেত্রে সমতা আনা যায়নি। টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসেবে নারীরা বেশ পিছিয়েই আছেন।
শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসছেন। পারিবারিক ও সামাজিক বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নারীরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস যথা গার্মেন্টস, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, চা ইত্যাদি ক্ষেত্রের মোট শ্রমিকের বেশিরভাগই নারী। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোট রফতানি আয়ের ৭৫ ভাগ উপার্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প খাতের শতকরা আশি ভাগ শ্রমিকই নারী। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলছে নারীরা। তাদের অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিদেশে কর্মরত নারীরাও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
নারীদের এই সাফল্যের পেছনে এদেশের নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের নিরন্তর লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি সরকার ও রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তারপরও বাংলাদেশের নারীদের এই জয়যাত্রা কণ্টকহীন নয়। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানান বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হয়েও নারীরা বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে এখনো এদেশের নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
অনেক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও প্রবল পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল থেকে তারা মুক্ত হতে পারছেন না। নারীর অগ্রগতির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন বন্ধ করা। নারীনির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির দিক অনেক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী আন্দোলনের অনেক বিস্তৃতি এবং নানান পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও নারী নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। নিরাপত্তার অভাব নারীর স্বাভাবিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে, নারীকে তার কর্মক্ষেত্র থেকেও পিছু হটতে বাধ্য করে।
নারীনির্যাতনের মূল কারণ কেবল ব্যক্তি হিসেবে নারীর প্রতি হীন ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই নয়, বরং নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে বিদ্যমান নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাস ও নারী নির্যাতন দূরীকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন বেসরকারি, মানবাধিকার, নারী অধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের ভূমিকা রাখার অবকাশ আছে।
তবে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও তার বাস্তবায়নের কাজটি মূলত রাজনৈতিক এবং চূড়ান্ত বিচারে রাজনৈতিক দলই কেবল এ কাজটি করতে পারে। নারীনির্যাতন রোধ এবং সমাজে বিরাজমান বৈষম্যমূলক অবস্থার পরিবর্তনে এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোনো বিকল্প নেই।
আমরা জানি, যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতিই হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল হাতিয়ার। রাজনীতির মাধ্যমেই যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক দল, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, সেখানে নীতিনির্ধারণী অবস্থানে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকার ফলে নারী যেমন তার নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে তেমনি জেন্ডার-সংবেদনশীলতার অভাব বা পুরুষের আধিপত্য থেকেই যাচ্ছে সকল ক্ষেত্রে। নির্বাচনী রাজনীতিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ফলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সকল দিক সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও ধারণা সীমিত। অধিকাংশ দেশেই নারীরা মাত্র বিগত চার দশকের মধ্যে ভোটাধিকার অর্জন করতে পেরেছে। সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশেও নারীরা ১৯৭১ সালে ভোটাধিকার লাভ করেছে।
গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৩ অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে ৭ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান এক্ষেত্রে ছিল ৮। সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়েছে বলা যায়। তবে এখনো বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। দেশের শীর্ষ সিদ্ধান্ত-গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সংসদের ৩০০ সাধারণ আসনে নারীর সার্বিক অংশগ্রহণ কখনোই শতকরা ৬ ভাগের উপরে ওঠেনি।
তবে সামগ্রিক বিবেচনায় শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়টি আলোচিত হলে চলবে না। দরকার দেশ পরিচালনার রাজনীতিতে নারীর সমঅংশগ্রহণ ও সমঅংশীদারিত্ব। আর নির্বাচনী ইশতেহারের পাশাপাশি এই বিষয়টি সুস্পষ্ট থাকতে হবে রাজনৈতিক দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রেও। কারণ ঘোষণাপত্রে একটি রাজনৈতিক দলের নীতিগত ও আদর্শগত অবস্থান এবং গঠনতন্ত্রে নীতি এবং আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত দিকগুলো তুলে ধরা হয়। নারীকে রাজনীতির সমঅংশীদার করতে হলে একদিকে যেমন নারীর জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে অন্যদিকে তাদের দায়দায়িত্বও দিতে হবে। থাকতে হবে দল ও নেতৃত্বের ইতিবাচক মনোভাব। নারীদেরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক দলসমূহে গড়ে তুলতে হবে নারীবান্ধব পরিবেশ।
এটা মনে রাখতে হবে, নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন মানে অন্য কারও স্থান দখল নয়, বরং রাজনৈতিক জীবনে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করাটাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। রাজনীতিতে এবং ক্ষমতা কাঠামো থেকে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারীদের বাদ দিয়ে কখনো সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বহীনতা বা ন্যূনতম প্রতিনিধিত্ব কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তির দিক হতে পারে না। জনসংখ্যার উভয় অংশের স্বার্থকে সমভাবে বিবেচনা করে নারী-পুরুষ যৌথভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থে গতিশীলতা এবং গুণগত মান অর্জন করতে সক্ষম হবে।
নারী মুক্তি সংগ্রামে, নারীর এগিয়ে চলার পথে অনেক বাধা-বিপত্তি-সীমাবদ্ধতা-চ্যালেঞ্জ আছে সন্দেহ নেই; নারীর অগ্রগতি ও অর্জনের পথে অন্য ধরনের বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না। আজও আমাদের দেশ ফতোয়াবাজির প্রভাব মুক্ত নয়, যৌতুকের অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। নারীর স্বোপার্জনের ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার যে প্রবণতা, ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে অবরুদ্ধ রাখার যে ক্লান্তিহীন অপচেষ্টা এসবই নারীর অগ্রগতি, তার মুক্তি ও তার ক্ষমতায়নের পথে বড় অন্তরায়।
নারীর অগ্রগতির পথে নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসছে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। দেশকে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করতে না পারলে নারীর পক্ষে সামনে এগিয়ে যাওয়া যেমন কঠিন হবে, তেমনি দেশের উন্নতি-অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হবে। অভিজ্ঞতা থেকে এটা আমরা বলতে পারি যে, নারীরা এগিয়ে গেলে দেশও এগিয়ে যায়। নারীদের পেছনে রেখে দেশের পক্ষেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশের সব গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে অভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, যারা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ক্ষমতার রাজনীতির আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধ যারা সংগঠিত করে তাদের সাধারণ শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ধর্ষণ এবং হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ করে কেউ যেন রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কার্য়ত বিচারহীনতার নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, পারিবারিক ও সামাজিক মনোভঙ্গি, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং সাক্ষ্য আইনের জটিলতার কারণেও নির্যাতনের শিকার নারী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
শুধু কঠোর শাস্তির আইন করলেই হবে না, দ্রুততম সময়ে বিচার এবং রায় কার্যকর করার নজির স্থাপন করতে হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না- এটা কেবল মুখে বললে হবে না, সবার কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নারীর প্রতি অধিক সংবেদনশীল হতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা পুরুষদের হতে হবে মানবিক। নারীকে ভোগের বস্তু ভাবার চিরায়ত ভ্রান্তধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীর পোশাক, নারীর চালচলনকে যারা নারীর প্রতি সহিংসতার কারণ বলে মনে করেন তারা আসলে ভেতরে ভেতরে একটি নির্যাতক মানসিকতাই পোষণ করেন। কোনো কুযুক্তি যেন নারীর অধিকার ও মর্যাদা হরণের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এইচআর/বিএ/জেআইএম