পথশিশুদের প্রতি বৈষম্য নয়
ফারিয়া ইয়াসমিন
আজ ২ অক্টোবর, পথশিশু দিবস। শিশুরাই হলো আগামী দিনের সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান তাই তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য। পথশিশু দিবসে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয় পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তবে আমরা ঠিক তাদের জন্য কতটা করতে পারছি। আমরা আমাদের আশপাশে তাকালেই পথশিশু দেখতে পাই, তাদের দুঃখ-দুর্দশা থেকে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত আসলে আমরা কতটা করছি তাদের জন্য। তাদের অধিকার রয়েছে অন্য সকলের মতো সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।
পথশিশু কারা? ভেবে দেখেছি কি আমরা? জন্মের সময় কেউ পথশিশুর পরিচয় নিয়ে জন্মায় না, পরিস্থিতি তাদের পথশিশুদের তালিকায় এনে দাঁড় করায়। কিন্তু এই শিশুদের যদি যথাযথ শিক্ষা পরিবেশ অন্যান্য অধিকার দিয়ে বড় করা হয় তাহলে এরাই দেশের রত্ন। আমরা শুধু নীরব দর্শকের মতোই এদের দুঃখ-দুর্দশাগুলো দেখে যাই আসলে কোনো শিশুর মাঝে ভেদাভেদ হয় না সকলেই মায়ের সন্তান। আমরা যখন পথে কোনো শিশুকে জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন কাজ করতে দেখি তখন আমাদের মানবিকভাবে সদয় হওয়া উচিত।
এদের অধিকার আছে অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাওয়ার। যে বয়সে তাদের শিক্ষার সংস্পর্শে থাকা উচিত সেখানে তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে। অনেকেই পথশিশুদের জন্য অনেক কিছু করেন কিন্তু এই স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগগুলো সাময়িকভাবে পথশিশুদের উপকার করে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান দেয় না। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য, পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে।
শিশুদের সব ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে এসব সনদ আইনে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আসলেই কি শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে না? তারা কি বৈষম্যের শিকার নয়? রোদ-বৃষ্টির শীত-গরম এগুলোর কোনো পার্থক্য নেই এদের মাঝে। যে বয়সে এদের হাতে কলম থাকার কথা, স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার কথা সেই বয়সে এদেরকে নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। মাদকের বিষে নীল হয় হাজার হাজার শিশু।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এদের মাঝে নেই কোনো নৈতিক মূল্যবোধের জ্ঞান। এরা জীবনযুদ্ধে কঠিন সংগ্রামে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে ফুটপাতে, রেলস্টেশনে। এদেরও অধিকার রয়েছে সুস্থ জীবনযাপনের তবুও এরা বঞ্চিত। সত্যিকার অর্থে এদের প্রতি আমাদের সহানুভূতির অভাব।
আমাদের সন্তানরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে মানুষ হচ্ছে অন্যদিকে পথশিশুরা প্রতিদিন মনে সংশয় নিয়ে বেঁচে থাকে দুমুঠো খাদ্য জুটবে কিনা। এদের নিয়ে আমাদের একটু ভাবনা পাল্টে দিতে পারে এদের জীবন। পথশিশুদের আলাদা করে নয় বরং একজন শিশু হিসেবে দেখেই এদের পাশে থাকতে হবে আমাদের। একটু মানবিক হলে পথশিশুরা পাবে সুস্থ জীবন আর দেশ পাবে তাদের ভবিষ্যৎ কারিগর।
জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন ‘ইউনিসেফ’ শিশু অধিকার ও তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সরকারকে পথশিশুদের কথা নতুন করে ভাবতে হবে এদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে কেননা এই শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের ওপর জাতীয় সমৃদ্ধি নির্ভরশীল।
শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয় পথশিশুদের সুস্থ জীবন দান করা, এদের অধিকার নিশ্চিত করা। আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়েও কিছু দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। পথশিশু দিবসের শুধু বিভিন্ন কর্মসূচি পালন নয় পাশাপাশি এই দিনের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে। এ জন্য এদের সমস্যা স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা প্রয়োজন।
পথশিশুদের দেখলে এড়িয়ে গিয়ে নয় বরং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে প্রতিষ্ঠার জন্য মৌলিক অধিকারের সুযোগ দিতে হবে। তবেই এদের থেকে আমরা পাব আগামী দিনের সুনাগরিক। এদের মাঝে আছে অমিত সম্ভাবনা যেটাকে জাগিয়ে তোলা আমাদের কর্তব্য। ‘পথশিশুরা যেন আমাদের দ্বারা অবহেলার শিকার না হয়’ পথশিশু দিবসে এটাই আমাদের শপথ হওয়া উচিত।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/এমএস