মালয়েশিয়া থেকে রায়হানের দেশে ফেরা
আল-জাজিরার ডকুমেন্টারিটি ৩ জুলাই প্রচার হওয়ার তিন দিন পর সাত জুলাই থেকে মালয়েশিয়ান অভিবাসন বিভাগ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার ( বুকিত আমান) রায়হান কবিরকে খোঁজা শুরু করে। মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রায়হানকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে। আমরা যেহেতু মালয়েশিয়ায় থাকি বা মালয়েশিয়ায় যেতে হবে, তাই এ-ব্যাপারে কিছু লিখতে সাহস করিনি প্রথম দিকে। পরিস্থিতি যে-রকম ছিল তাতে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কেউ রায়হানকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে না, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম ; সেটার অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। সবারই বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না অবস্থা।
তবে সেদিন রাতে (৭ জুলাই) বিষয়টা বাংলাদেশে প্রবাসীদের নিয়ে যে সাংবাদিক সবচেয়ে বেশি ভাবেন, প্রতিনিয়ত প্রবাসীদের জন্য মঙ্গলজনক কাজ করার চেষ্টা করেন, প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে সদা উদগ্রীব থাকেন যে মানুষটি, সে প্রিয় মানুষ সাংবাদিক শরিফুল হাসান ভাইকে অবহিত করি। সবকিছু জেনে সে-রাতেই তিনি রায়হান কবিরের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেন ফেসবুকে। পরদিন সে লেখা বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রায়হানের সুবিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকেন পত্রিকায়।
আরো কয়েকজন প্রবাসবন্ধুদের সাথে নিয়ে রায়হান ইস্যু নিয়ে অন্তর দিয়ে কাজ করেন শরিফুল হাসান ভাই। নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন রায়হানের পরিবারের। এ জন্য শরিফুল ভাই ও অন্য যাঁরা রায়হানের পক্ষে কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
২৪ জুলাই মালয়েশিয়ান পুলিশ রায়হানকে গ্রেপ্তার করে। সে-দিনই প্রথম রায়হান কবির ইস্যুতে লিখি আমি। লেখাটা ফেসবুকে দিইনি। লেখাটা চারদিন পর ২৯ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে জাগো নিউজের মতামত কলামে। জাগো নিউজের পাঠক লেখাটা পড়েছেন।
আমার সতেরো বছর মালয়েশিয়ায় বসবাসের কিঞ্চিত অভিজ্ঞতায় যা লিখেছিলাম- তা কতোটা সঠিক পাঠক বলতে পারবেন।
আমি নিজে এই লেখাটার লিংক তখন ফেসবুকে শেয়ার করি নি; আজ রায়হান দেশে ফেরার পর শেয়ার করলাম।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসজীবন নিয়ে লেখা আমার বই 'প্রবাসের ব্যালকনিতে' প্রকাশিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া থেকে যে ক'জন প্রবাসী বইটা মালয়েশিয়ায় পাওয়ার জন্য পড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তাদের মধ্যে রায়হানও একজন। বলতে গেলে মালয়েশিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িতদের মধ্যে একমাত্র। এই আগ্রহের জন্য তার প্রতি আমি অনুরাগী ছিলাম।
রায়হান কবির ইস্যুতে ব্রাকসহ বাংলাদেশের বারোটি সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, দুই দুইবার তাদর নিউজ মালয়েশিয়ার স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এটা অনেক বিরাট ব্যাপার। তারা রায়হানের জন্য আইনজীবীও নিয়োগ দিলেন। কোনো প্রবাসীকে নিয়ে আগে কখনো এমন হয়েছে বলে আমার জানা নাই। এই উদ্বেগের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় তথা মালয়েশিয়ান সরকার ও প্রশাসনের কাছে একটা বার্তা অবশ্যই পৌঁছেছে ; প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের প্রতি নজর রাখার মত বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন বা মানবাধিকারকর্মী বা কিছু প্রবাসবন্ধু আছেন। বিনাদোষে কোনো প্রবাসী হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হলে তারা প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন। উদ্বেগ প্রকাশ করবেন।
সেই সব প্রবাসবন্ধুদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি ভবিষ্যতেও প্রবাসীদের সুবিধা-অসুবিধায় তাদের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে আশা করি। সবশেষে বলি, রায়হান কবির মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন, তাতেই আলহামদুলিল্লাহ।
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/পিআর