পুরো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই ঢেলে সাজাতে হবে
কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই মুহূর্তে দেশের মানুষের সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় কী? আমার মনে হয় বেশির ভাগ মানুষের উত্তর হবে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগ কবে’? বাংলাদেশে বারবার দুর্নীতির কারণে যে মন্ত্রণালয় আলোচনায় উঠে এসেছে এমনকি পূর্বে সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সম্পদের খোঁজ নিয়েছে দুদক সেটা হচ্ছে বিতর্কিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু এই মন্ত্রণালয় নিয়ে অভিযোগ আর কমে না। জাতীয় বাজেটে বড় একটা বরাদ্দ থাকে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য কিন্তু খরচের হিসাব বাড়লেও বাড়ে না সেবা। বিগত কয়েক বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে এইটাই ধারণা, জনগণের লাভ থেকে ব্যক্তি লাভকেই বড় করে দেখা হয় এখানে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেনাকাটার দুর্নীতি দেশের মানুষ অবগত গণমাধ্যমের কল্যাণে।
করোনার সময় সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এই মন্ত্রণালয়ের দিকে। করোনার এই সময়ে সুযোগ ছিল মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু হয়েছে উল্টো। বারবার আলোচনায় আসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তার সবই নেতিবাচক কারণে। যখন মানুষের শেষ ভরসা হওয়ার কথা এই মন্ত্রণালয় তখন সারাদেশে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংসদ, সব জায়গায় তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কারণ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকায় সব দায় তার ওপর বর্তায় যদিও তিনি তা আমলে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না।
মন্ত্রী বারবার বলে যাচ্ছেন তার মন্ত্রণালয় সফল। এই সফলতার জন্য তিনি অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন করোনায় মৃত্যুর হারকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা বাংলাদেশে এসে অনেকটা দুর্বল হয়েছে। আমরাও আক্রান্ত আর আক্রান্তদের চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি দেখে সাধারণ দৃষ্টিতে তাই দেখতে পাচ্ছি। সিংহভাগ মানুষ সুস্থ হয়েছেন বাসায় থেকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে প্রতিদিন বলা হচ্ছে, হাসপাতালের শয্যা খালি। করোনা দুর্বল হওয়া আমাদের জন্য আশীর্বাদ কিন্তু মন্ত্রী এই আশীর্বাদকেই নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দেখছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি সামলানোয় ‘ভালো স্কোর’ অর্জন করেছে তার মন্ত্রণালয়। যদি ইউরোপের মতো করোনা বাংলাদেশে শক্তিশালী হতো, আমাদের কী হতো তা কল্পনাও করা যায় না। আসল যে বিষয় নিয়ে আলোচনা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা ও অব্যবস্থাপনা। নিজ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির দায় নিচের স্থরের কর্মকর্তাদের দিয়ে মন্ত্রী তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারেন না। ভুয়া টেস্টের কারণে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির সময় মন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী পরে বললেন তিনি জানতেন না। এটা সম্ভব?
মেনে নিলাম তিনি জানতেন না, এর মানে দায়িত্ব পালনে অবহেলা? কারণ যখন রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয় তখন প্রথম কোনো বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে এমন চুক্তি হয়। সে সময়ের প্রেক্ষিতে এটা ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। এমন সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়ার মতো বড় একটি বিষয় যদি মন্ত্রী না জেনে থাকেন, সেটাও অবহেলা। এত বড় ঘটনা আপনার মন্ত্রণালয়ে অথচ আপনি জানবেন না? সেই অবহেলার জন্য মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করা যায় না? এ অবহেলার কারণেও পদত্যাগ করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাভাবিক নিয়ম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পদত্যাগকারী মহাপরিচালক যখন সংবাদমাধ্যমকে বললেন, উপর মহলের নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তখন সাধারণ মানুষ বা স্বাভাবিকভাবে সবাই ধরে নিয়েছিল উপরের এই মানুষটি হয়তো মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিটি। যদিও পরে ডিজি বলেছেন সাবেক এক কর্মকর্তার কথা কিন্তু সাবেক একজন কর্মকর্তার মৌখিক কথায় এমন একটা চুক্তি হবে তা মানুষ বিশ্বাস করে না। এবং সাবেক এই কর্মকর্তা অস্বীকার করেছেন এমন তদবিরের কথা। হয়তো ডিজির সেই কথার কারণেই তার পদত্যাগ ত্বরান্বিত হয়েছে। বলা যায় বলির পাঁঠা হলেন ডিজি হেলথ। তবে ডিজি অবশ্যই ব্যর্থ তিনিও তুলসি পাতা নন।
আস্থার অভাবে থাকা এই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার শুরু থেকে সবকিছু প্রস্তুত আছে বলে মানুষকে ধোকা দিয়েছিল। পরে দৃশ্যমান হতে থাকে সমন্বয়হীনতা। সময় সময় পরিবর্তন হতে থাকে সিদ্ধান্ত। তালগোল পাকিয়ে থাকা স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা তখনই কমেছে। তার ওপর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয়, যারা কিছু হলেই বিদেশ দৌড় দেন তাদের সবার ঠিকানা সিএমএইচ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যখন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বেসরকারিতে নেন তাতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কাছে মেসেজ যায়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো না। আমাদের ট্যাক্সে বেতন নিয়ে, সব প্রস্তুত আছে বলে বড় বড় বুলি দিয়ে পরে যখন নিজেদের আস্থা নেই বলে, সেটা কি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা নয়? এ প্রতারণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর তার প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আড়াই মাস সময় পেয়ে সব প্রস্তুত আছে বলার পর আমরা দেখেছি, সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল নিজেদের সুরক্ষা নিয়েও। যে এ নিয়ে মুখ খুলেছে তাকেই বিপদে পড়তে হয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করা হয় যদি থলের বিড়াল বের হয়ে যায় সেই ভয়ে। নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের খাবারের মান, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি, কোনো কিছুর দায় মন্ত্রী এড়িয়ে যেতে পারেন? মন্ত্রণালয়ের একজন পিয়নও যদি কিছু করে সেটার পজিটিভ নেগেটিভ যাই হোক সবকিছুর দায় সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিকেই নিতে হয়। এটা একটা পরিবার বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় দুটি হাসপাতালের জাল সার্টিফিকেট দেয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে এক অমার্জনীয় অপরাধ এবং একটি বিরাট কলঙ্কও। এ ঘটনা সারাবিশ্বে নেতিবাচকভাবে আলোচিত হয়েছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও যে কলঙ্ক আলোচিত হয় তার দায় কি শুধু নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের! মন্ত্রীর নিজের নেই? এ হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিতে মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না? নমুনা পরীক্ষা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর দায়ভার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, অথচ ওই অধিদফতর তারই মন্ত্রণালয়ের অধীন। সাহেদ ও ডা. সাবরিনা পরিচালিত দুটি স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরে নিজের দায়ভার নিজ কাঁধে না নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
আমাদের পাশের দেশ ভারতেও ট্রেন দুর্ঘটনার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের ইতিহাস আছে। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে হয়তো বলতেন, ‘মন্ত্রী নিজে তো আর রেল চালায় না’। ভারতের বর্ষীয়ান রাজনীতিক লাল বাহাদুর শাস্ত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৫৬ সালে রেল দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। তখন জওহরলাল নেহরু বলেন, তিনি এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কোনোভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে নয়। বরং যাতে এটি সাংবিধানিক এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে তাই তিনি এটি গ্রহণ করছেন। ১৯৫৭ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে আসেন এবং ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
দেশে দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিজ মন্ত্রণালয়ের সবকিছুর দায় শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীকেই নিতে হয় এবং এমন উদাহরণ অনেক আছে। এই করোনাকালেও বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। অথচ তারা যে অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তা শতগুণ বড়। শুধু তারা দায় নিতে জানেন আর আমাদের মন্ত্রীরা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে জানেন এটাই তফাৎ। লকডাউনের মধ্যে সপরিবারে গাড়িতে সাগর সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ক। এতে সমালোচনার মুখে তিনি পদত্যাগ করেন (ডেইলি স্টার ২ জুলাই)। অথচ এই নিউজিল্যান্ডে করোনার ভাইরাসটি রুখে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে চিলির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেইমি মানালিচ পদতাগ করেন (আল জাজিরার সূত্রে বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ জুন)।
এ ঘটনার একটি গণতান্ত্রিক দেশের মন্ত্রীর বেলায় স্বাভাবিক ঘটনা ভেবে যদি প্রশ্ন আসে আমাদের মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন কেন? কী এমন হয়েছে অন্তত চার-পাঁচটা ঘটনা বলেন। অনেক অনেক কারণের মধ্যে কয়কটি ঘটনা পদত্যাগের পক্ষে যথেষ্ট। মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন কারণ, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে জাল করোনার সার্টিফিকেট, করোনাকালে চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় মানুষ মারা গেছে। চিকিৎসকরা নিরাপত্তাসামগ্রী পাননি বা নিম্নমানের ছিল, নমুমার ফল আসতে ১০-১২ দিন, কেনাকাটায় ভুতুড়ে বিল, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হতো স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকে, ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে বিদেশফেরত এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট, কেনাকাটায় সিন্ডিকেট। এসব ঘটনার মাত্র একটি ঘটনায় একজন মন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য যথেষ্ট। অথচ এখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার বাইরে আরও অনেক অনেক ঘটনা রয়ে গেছে।
ব্রাজিলে করোনাকালে প্রেসিডেন্ট সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় দুজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সঙ্গে তীব্র মতবিরোধের জেরেই মাত্র এক মাসের মাথায় দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না বরং তারা দেশের জনগণের পক্ষে ছিলেন। তারা মনে করেছিলেন প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা জনগণের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। (সূত্র বিবিসি)। একজন মন্ত্রীর সবচেয়ে বড় দায় জনগণের প্রতি এবং এজন্য তিনি শপথ নিয়েছেন।
শুধু করোনাকালীন দায় নয়, যেকোনো অভিযোগ নিজের কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করার রীতি পশ্চিমা দেশে খুব সাধারণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের এখানে পদত্যাগ করাকে অপরাধের মতো ভাবা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত এত দুর্নীতির মধ্যেও এক টাকার জিনিস পাঁচ টাকায় কেনার অনেক অভিযোগ আছে, প্রতিবেদন আছে কিন্তু কেউ কি এর দায় নিয়েছে? সরকারি কাজে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত ফ্লাইট ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী টম প্রাইস পদত্যাগ করেন ২০১৭ সালে (বিবিসি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
এমন ঘটনা অনেক আছে। সমালোচনার মুখে পদত্যাগ আর অপরাধী হলে বিচার হবে এটাই নিশ্চিত। তবে আমরা চলছি উল্টোভাবে। সমালোচনা হলে নিজের পক্ষে আরও শক্ত যুক্তি দিতে হবে সেটা জনগণ বিশ্বাস করুক না করুক। তবে অপরাধী মনে হলে পদত্যাগ যেমন স্বাস্থ্য ডিজির ঘটনা। অতীতের এমন পদত্যাগের ঘটনার ইতিহাস টানলে তাই দেখা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদত্যাগের ফলে দফতরটিকে ঢেলে সাজাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। (জাগো নিউজ ২২ জুলাই)।
কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে রেখে সেই মন্ত্রণালয় ঢেলে সাজানো সম্ভব? সাধারণ মানুষ তা মনে করে না কারণ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো অফিসেও এ নিয়ম আছে যে অফিসের সর্বোচ্চ কর্তার মতে যা ঠিক সেভাবেই অফিসের সবার মত। এখানেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কিছু নেই। তথ্যমন্ত্রী যে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, এ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঢেলে সাজানো শুরু করা হোক এবং সেটা শুরু হোক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিয়েই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে রেখে যতই উদ্যোগ নেয়া হোক জনগণ তা ইতিবাচক হিসেবে নেবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে বিএনপি, বিএনপি বারবার দাবি করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। আমাদের দেশের চর্চিত নিয়মে এটা স্বাভাবিক যে, যে সরকারেই থাকুক তাদের ধারণা থাকে যে বিরোধী দল বা বিপক্ষের দল কিছু বললে সেটা গ্রহণ করা যাবে না, এতে বিরোধীদের জয় হয়ে যাবে। বরং জনগণ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক নেতিবাচক সবকিছুর দায় বিরোধীপক্ষকে দিতে হবে।
বিএনপির এই চাওয়ার বিপরীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রক্ষা পেয়ে যান কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে একজন আদর্শবান রাজনৈতিক নেতার সন্তান হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন নেতার এমন সমালোচনার মুখে কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তার আছে বলে বিশ্বাস করতে চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানোর সুযোগ দিতে হয়তো মন্ত্রী নিজে চলে যাবেন ডিজির মতো করে সেটাই মানুষের প্রত্যাশা।
এইচআর/এমএস