বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ২২ জুলাই ২০২০

অবিরাম বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে এবং বিভিন্ন নদনদীর ২৩টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। চলতি মাস পেরিয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য দিয়েছে।

একদিকে মহামারি করোনার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের আয় রোজগার বন্ধ অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। সরকারি হিসাবে, ইতোমধ্যে প্রায় তিন লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সে হিসাবে ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় সাড়ে ১৪ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, পদ্মা, যমুনা ও সুরমাসহ প্রধান নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তোড়ে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ যা ছিল সব কিছু শেষে হয়ে গেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করাই ধর্মের শিক্ষা। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহপাক বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আল্লাহপ্রেমিক বান্দারা ঘরে বসেই তার বান্দাদের কষ্ট দূর করার মাধ্যমে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যারা তার বান্দার কষ্টের সময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আল্লাহপাক তাদের তার বন্ধু বানিয়ে নেন।

এ জগতে কেউ যদি ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্তকে আহারের ব্যবস্থা করে তাহলে আল্লাহপাক তাকে অসংখ্য নেয়ামতে ভূষিত করেন। যেভাবে হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে’ (আবু দাউদ)।

আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো এমনভাবে ধেয়ে আসে যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করে দিয়ে চলে যায়। মহামারি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো ইত্যাদি দুর্যোগ প্রাকৃতিক, মানুষের এতে কোনো হাত নেই। এ ধরনের দুর্যোগ মহান আল্লাহ তাআলা যেকোনো দেশে এবং যেকোনো শহরে যেকোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারেন। এসব দুর্যোগে কোনো মানুষের হাত থাকে না। আমরা কেউ বলতে পারি না কোন সময় আমরা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি বা কখন প্লাবনে আমাদের সবকিছু ডুবিয়ে দেয়। তাই এমন দুর্যোগের দিনগুলোতে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উচিত দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো।

এছাড়া এবার যেহেতু মহামারি করোনার কারণে হজ পালন সম্ভব হচ্ছে না তাই যারা হজ পালনের নিয়ত করেছিলেন তারা ইচ্ছে করলে গরিব-অসহায়দের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন। আল্লাহ যেহেতু মানুষের অন্তর দেখেন তাই এ বছর আপনার হজের অর্থ গরিবদের সেবায় ব্যয় করলে হয়তো আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে গরিবদের সেবা করার একটি বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যাদের পক্ষে সম্ভব একে কাজে লাগানো উচিত।

বন্যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানির নিচে, ছোট ছোট শিশু কান্নাকাটি করছে খাবারের জন্য। এ ধরনের দুর্যোগের পর সমাজ ও দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। আমাদের সবার একটু সহযোগিতার ফলে একটি পরিবার ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। বন্যার কারণে তারা যা হারিয়েছে হয়তো তা আমরা পূরণ করতে পারব না কিন্তু তাদের জন্য যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে হয়তো তারা সব হাড়ানোর যে দুঃখ তা থেকে কিছুটা হলেও সুখ খুঁজে নেবে।

আমরা কি পারি না এই সব দুর্যো কবলিত লোকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে? আমরা কি পারি না তাদের দুঃখের দিনের বন্ধু হতে? মানুষ হিসেবে কি আমাদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না তাদের সাহাজ্য করা? সমাজে অনেক এমন মানুষও রয়েছেন যারা সবসময় অন্যের সাহায্যের জন্য নিবেদিত থাকে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য দেশের বিত্তশালী, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানো উচিত। বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা নিতান্তই গ্রামের সহজ-সরল দরিদ্র মানুষ। আমরা যদি সবাই মিলে এদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই তাহলে হয়তো তারা নতুন করে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। অবুঝ শিশুদের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠবে। এইসব লোকের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে, আমাদের সবার সম্মিলিত সহযোগিতার ফলে হাজারো মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সহায়ক হতে পারে।

আসুন, আমরা সবাই সেসব লোকের পাশে যাই, যারা অপেক্ষায় বসে আছেন, হয়তো আল্লাহ কেনো ফেরেশতাকে পাঠাবেন আমাদের সাহায্য করতে, আমাদের মুখে দু’মুঠো আহার তুলে দেবে।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।