মুজিব আদর্শের আজীবন যোদ্ধা ছিলেন সাহারা খাতুন

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ১৫ জুলাই ২০২০
ফাইল ছবি

অ্যাডভোকেট একেএম আমিন উদ্দিন (মানিক)

সাহারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রথম মহিলা ও সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, একজন সফল রাজনৈতিক সংগঠক, মুজিব আদর্শের একজন নির্ভীক সৈনিক ও নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেত্রী। তিনি ১৯৪৩ সনের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলায় পিত্রালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম ডা. আবদুল আজিজ মাস্টার ও মাতার নাম মরহুমা তুরজান নেছা। পিতা ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এবং তার বাড়িতেই নিজস্ব ডাক্তারখানা ছিল। পিতা ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি। কুর্মিটোলায় বাড়িটি এবং জায়গা জমিসহ ক্যান্টনমেন্টের জন্য অধিগ্রহণ করে নেওয়া হলে পিতা পাশেই মানিকদি গ্রামে বাড়ি করেন। সেখানে পিতা বাড়িতেই নিজের সন্তান এবং গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তিনি ও তার বোন ওহিয়া খাতুন সেই স্কুলে পড়তেন।

পিতা সেই স্কুলের জন্য দুইটি শ্রেণি কক্ষ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা দুই বোন ২য় শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পড়েন। গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনায় আগ্রহ না থাকায় স্কুলটি কিছুদিন চলার পর বন্ধ হয়ে যায়। কুর্মিটোলা গ্রামের পূর্বদিকের যেই অংশ তখনো অধিগ্রহণ হয়নি সেখানে তার পিতা গ্রামের অন্যান্য মাতব্বরদের নিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হয়ে সেখানে কুর্মিটোলা হাইস্কুল স্থাপন করেন। তার বাবা সেই অংশে নিজেদের বসবাসের জন্য একটি বাড়িও সেখানে তৈরি করেন। ঐ এলাকাটি অধিগ্রহণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেই বাড়িতেই বসবাস করতেন। কুর্মিটোলা হাইস্কুলে তিনি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। তারপর তাকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত মুসলিম গার্লস হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাকে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুলে ১০ম শ্রেণিতে ভতি করা হয়। সেখানে ১৯৬০ সনে ইস্ট-পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

ইতোমধ্যে কুর্মিটোলার অবশিষ্ট যেই জায়গায় বাড়ি ও স্কুল করা হয় তাও অধিগ্রহণ হয়ে যায়। তারপর তিনি সিটি নাইট কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ইন্টার্মিডিয়েট পাস করেন। তারপর জগন্নাথ কলেজে বিএ-তে ভতি হন। বিএ (ফাইনাল) পরীক্ষার সময় অসুস্থ থাকার কারণে এক বিষয় পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে চাচা মরহুম আবুল হাশেমের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি চলে যান। সেখানে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমে ২য় শ্রেণিতে বিএ (ডিগ্রি) অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৭ সনে পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা চলে আসেন এবং পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুনরায় করাচি গিয়ে রেজাল্ট নিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেটি ছিল জীবনের প্রথম নির্বাচন।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এত বেশি জড়িয়ে পড়েন যে আর ল’ পরীক্ষা সময় মতো দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫ সনের ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয় এবং ৪ নভেম্বর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২ নং ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন। ৫ নভেম্বর ৪ নেতার লাশ পাওয়া গিয়েছিল। তার ল’ পরীক্ষার ১টি বিষয় ৫ নভেম্বর ছিল, তিনি তখন ভাবলেন পরীক্ষা পরেও দেওয়া যাবে কিন্তু জাতীয় নেতাদের শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। সে কারণে সে বৎসর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এর পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’(অনার্স) কোর্স শুরু হয়ে যায়। তখন শিক্ষকদের পরামর্শে বিজয়নগরে সেন্ট্রাল ল’ কলেজে ভর্তি হন।

আইনপেশায় আসার অদম্য ইচ্ছায় সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২য় শ্রেণিতে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে আইনপেশা পরিচালনার সনদ প্রাপ্ত হয়ে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং আইনপেশা শুরু করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমানের জুনিয়র হিসেবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনপেশা পরিচালনার সনদ পান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। তিনি পরবর্তীতে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বার কাউন্সিলের ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অবশ্য তার রাজনীতির হাতেখড়ি তার বাবার কাছ থেকেই। বাবা পল্টন ময়দানে বড় বড় জনসভায় তাকে অনেক সময় নিয়ে যেতেন। ১৯৬৬ সনে তিনি ছয়দফার আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৬ দফার বই বিলি করেছেন তিনি। ১৯৬৯ সনে আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা যখন গঠিত হলো তাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং সারা ঢাকা শহরে মহিলাদের আইভি রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত করতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জাতীয় নেতা মরহুম তাজউদ্দিন আহম্মেদ আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠন করে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই মিটিং মিছিল সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করেছেন। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তখনকার ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিন তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা শাখার অনেক মহিলা নেতাকর্মীদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন । তিনিসহ মহিলা কর্মীরা সে দিন মঞ্চের সামনে খুব কাছাকাছি বসেছিলেন। সে দিন সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ভাষণ শুনেছিলেন । বঙ্গবন্ধু “জয় বাংলা” বলে বক্তব্য শেষ করেন। তা এখনো কানে বাজে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং তিনি নিজেও ট্রেনিং গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তৎসময়ে ইন্দিরা রোডের মরিচা হাউজের বাসায় মেয়েদেরকে রাইফেল চালানোর ট্রেনিং দেওয়া হয়। মরহুমা টিএন রশিদ তখন তাদেরকে রাইফেল ট্রেনিং শিখাতেন। কিছুদিন ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে তারা ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে কুচকাওয়াজ করে যান এবং সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

২৫ মার্চ বিকালে শেরেবাংলা নগরে ঐ এলাকার নেত্রী হাজেরা খান এবং গোলে আরা বেগম সহ তাদের নেতৃত্বে এক মহিলা সমাবেশ ডাকা হয়। সেই সমাবেশে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী মহিলানেত্রী মরহুমা আইভি রহমান ও তিনি বক্তব্য রাখেন। তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্যে সে দিন বলেন যতটুকু তাঁর স্মরণ পড়ে তা হলো বঙ্গবন্ধু যেই উদ্দেশ্যে “ আমাদের মহিলা সংগঠন গড়ে তুলেছেন, মহিলারা জনগোষ্ঠীর অর্ধেক, আমরা মহিলা, আমাদের হাতে তো বন্ধুক নেই, রাইফেল নেই, কাজেই আমরা অন্তত মরার আগে পাকের ঘরের দা-বটি দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবো”।

মিটিং শেষে মিছিল নিয়ে সবাই বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে যান। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতা মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও মরহুম তাজউদ্দীন আহমদসহ অনেকে। সন্ধ্যার পরে তাঁরা যে যার ঘরে চলে যান। তিনি ফার্মগেটের ৩৪,সএয়ারপোর্ট রোডের বাড়িতে চলে আসেন। আনুমানিক রাত ১২টার দিকে পাকহানাদাররা ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা শুরু করে। তখন ছাত্র-জনতা ফার্মগেটে একটি বিরাট গাছ কেটে ব্যারিকেড দেন। পাকহানাদাররা তখন সেখানে আটকে পড়ে। তিনি বাড়ির দোতলা থেকে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন। তিনি উত্তর দিকে দেখতে পান দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শুনতে পান। তাদের দোতলার ঘরেও ২টি গুলি করেছিল পাকহানাদাররা।

২৫ মার্চ রাত ১২টার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে পাক হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ক্রমে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে পিতা তাদেরকে ৩০ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়ি টঙ্গী হারবাইদ গ্রামে পাঠিয়ে দেন। ভগ্নিপতি ছিলেন মরহুম জমির উদ্দিন আহম্মেদ। বোন পূর্বেই মারা যান। তার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও সঙ্গীর অভাবে কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া হয়নি।

যুদ্ধের পুরোটা সময় ভগ্নিপতির বাড়িতেই থাকতেন। তবে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতেন কোনো মুক্তিযোদ্ধা আসে কিনা সে আশায়। প্রথম যেদিন বাড়িতে আসেন সেদিন বোরকা পরে এসেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা নেহাল ওনার বাসায় আসতো। এই মুক্তিযোদ্ধাকে ওষুধ, গরম কাপড় ইত্যাদি জোগাড় করে দিতেন। যুদ্ধের শেষের দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে তিনি বাসায় চলে আসেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সনে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় লাভ করা হয়। পাক-হানাদাররা সারেন্ডার করতে বাধ্য হয়। তখন তার পিতা মরহুম আবদুল আজিজ মাস্টার নিজের বন্দুকটি বের করে দেন তাকে গুলি ফুটিয়ে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাবার জন্য।

বঙ্গবন্ধুর সাথে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পাকিস্তান আমলেই তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর অনেক লোকের মধ্যেও জিজ্ঞাসা করতেন সাহারা কেমন আছ? কেমন কাজ চলছে ? ১৯৭৩ সনে জাতির জনক পূর্ব-জার্মানে এক যুব সম্মেলনে ৭০/৭৫ জনের এক প্রতিনিধির সাথে তাকেও পাঠান। সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ফণিভূষণ মজুমদার, শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ কামাল, সুলতানা কামালসহ অনেকে। সেই যুব সম্মেলনে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু প্রতিনিধি দলের সকলকে পুরাতন গণভবনে ডেকে পাঠান। সে দিন বঙ্গবন্ধু তাঁদের কিছু নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন তোমরা প্রত্যেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছ , তোমরা শৃঙ্খলা বজায় রাখবে, ভালো আচার-আচরণ করবে। যাতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়। এটিই ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর।

১৯৭৪ সনে মহিলা সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে নরওয়ে গিয়েছিলেন। একটি সেমিনারে যোগদান করেছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে যুক্তরাজ্য হয়ে ফিরেন। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের সপরিবারে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের বিষয় সকাল ৭টার দিকে শুনতে পান। শুনে সে দিন চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেছিলেন। তখন তিনি দৌড় দিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ইন্দিরা রোডের মরিচা হাউজে গিয়েছিলেন নির্দেশনার জন্য। তখন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেন। কী করতে হবে পরে জানাবেন বললেন, কারণ তিনিও সে দিন হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন, কী করবেন বুঝে ওঠতে পারছিলেন না।

সে দিন ঘাতকদের নির্মম হত্যাযজ্ঞে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বড় পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাছের, শেখ ফজলুল হক মণি, মণির গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মণি, মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি শুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের পুত্র সজীব সেরনিয়াবাত এবং আত্মীয় বেনতু খান। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সে দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হোন এস.বি অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সৈনিক সৈয়দ মাহবুবুল হক।

তিনি ১৯৮১ সন থেকে আইনপেশা শুরু করেন। তিনি আইনজীবীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠিত করা শুরু করেন। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সনে দেশে ফিরে আসেন। তখন তিনি দেখেন যে আইনজীবীদের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করে তিনি সহ কয়েকজন আইনজীবী নেতা মিলে তাকে আহ্বায়ক করে বাংলাদেশ আওযামী আইনজীবী পরিষদ গঠন করেন। তখন তিনিসহ নেতৃবৃন্দ মিলে সারা বাংলাদেশ সফর করে বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রত্যেক জেলা শাখা গঠন করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করা হয়। সে সম্মেলনে তাকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের বিস্তার ঘটে।

তিনি ১৯৯১ সনের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু ভোট কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়। পরে একই আসনে খালেদা জিয়া সিট ছেড়ে দিলে শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তখনো বিএনপি ক্ষমতায় থেকে ভোট কারচুপি করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ ও ২০০১ সনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরপর তিনি ২০০৮ সনের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে। তাকে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সনে চ্যালেঞ্জিং মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত হলো প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সফলতার সাথে তিনি নির্ভীকভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পৌনে চার বছরের মাথায় তাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা-১৮ আসন থেকে ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারিতে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৭৩ সনে পূর্ব জার্মানি ও ১৯৭৪ সনে নরওয়ে ছাড়া বিদেশে সফর করেছেন চিকিৎসার জন্য এবং একটি কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরও গেছেন। সাহারা আপা যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ২৫ বেইলী রোডের সরকারি বাসায় বাথরুমে পড়ে ডান পায়ের হিপবোন ভেঙে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠান এবং সেখান থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনেন। ১৯৯৬-২০০১ সনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী তাকে ওমরাহ হজের জন্য সৌদি আরব নিয়ে যান। তিনি আমেরিকায় সফর করেন একবার জাতিসংঘের একটি কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আরেকবার মহিলা সমিতির কনফারেন্সে, যুক্তরাজ্য, ভারতের দিল্লি, কলকাতা, আজমির শরিফ, আগ্রা; ভুটান, মালয়েশিয়া, ডিজিটাল পাসপোর্ট উদ্বোধন করতে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া, প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফ্রান্স, বিরোধী দলে থাকাকালীন আইভি রহমানসহ মহিলা সমিতির কনফারেন্সে কানাডা ও চীন সফর করেন। একটি কনফারেন্সে শ্রীলংকা সফর করেছেন। তখন মিসেস কুমারাতুঙ্গা শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

তিনি বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সুন্দরবন, সিলেটসহ মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠন করতে, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সংগঠন করতে ও মন্ত্রী থাকাকালীন দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে সর্বপ্রথম যান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়। তখন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ছিলেন মরহুম এমএজি ওসমানী। তখন বঙ্গবন্ধুর মাজারে বাঁশের বেড়া ছিল। পরে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে বঙ্গবন্ধুর মাজারে যান। তারপর থেকে প্রায় প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে হৃদয়ের টানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যেতেন।

২০০১ সনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে অনেক মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিতে থাকে। তিনি তখন আইনজীবীদের নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে অধিকাংশ নেতাকর্মীর মামলা পরিচালনা করেন। আহত কর্মীদের হাসপাতালে এবং বাসায় দেখতে যেতেন। বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের থানায় গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে তাদের যাতে নির্যাতন করা না হয় সেই জন্য আইনজীবীদের নিয়ে থানায় যেতেন। পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বাসায় ছুটে যেতেন। নেতাকর্মীদের মামলা করার জন্য তিনি, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবুসহ ময়মনসিংহ ও নড়াইলেও গিয়েছিলেন।

২০০৭ সনের ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলাগুলো প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, প্রয়াত রহমত আলী এমপি, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম. মো. মোখলেছুর রহমান বাদল ও আবদুর রহমান হাওলাদারসহ আরো অনেককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি অন্যান্য নেতাকর্মীর মামলাগুলোও দেখতেন। তখন অনেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার মামলাসহ নেতাকর্মীদের মামলায় যেতে ভয় পেতেন। সকল ভয়-ভীতিকে অতিক্রম করে তিনি সকল আদালতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এবং সকল কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং নেতাকর্মীদের জন্য সাংবাদিকদের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন।

সাহারা খাতুন, ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করতেন। গয়না পরা পছন্দ করেন না। ছোটকালে মা দুই হাতে রূপার চুড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। অলংকার পরা পছন্দ করতেন না বিধায় চুড়ি খুলতে না পেরে ভেঙে পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি একজন স্পোর্টসম্যান ছিলেন। মেয়েদের জন্য নির্ধারিত সব ধরনের খেলায় তিনি অংশগ্রহণ করতেন। তিনি অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি ছেলেদের সাথে ফুটবল, ডাংগুলি খেলতে ভালোবাসতেন। ১৯৬০ সনের পর বলতে গেলে সকল খেলাধুলাই তার জন্য নিষিদ্ধ হয় বাবা-মার পক্ষ থেকে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর খেলাধুলা করতে পারেননি। তিনি সাঁতার কাটতেও পারতেন, তিনি ড্রাইভিং শিখেছিলেন, যখন ড্রাইভার থাকতো না, তখন তিনি অনেক সময় নিজে গাড়ি চালিয়ে কোর্টে যেতেন। তিনি তার জীবনকে আওয়ামী লীগের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বিয়ে-শাদি করেননি।

তিনি প্রথমে নগর আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদিকা এবং একই সাথে নগর আওযামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-আইন সম্পাদিকা, পরে তিনি আইন সম্পাদিকা নির্বাচিত হন, তখন তিনি নগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদ এবং মহিলা আওযামী লীগের সাধারণ সম্পদকের পদ আর গ্রহণ করেননি। অতঃপর তিনি পরবর্তী কাউন্সিলে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। এখনো তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে বিদ্যমান আছেন।

স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি মহিলা সমিতির সদস্য মনোনীত হন। তখন আইভি রহমান মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা ও ড. নীলিমা ইব্রাহিম সভানেত্রী ছিলেন। তিনি পরিবার পরিকল্পনা সমিতির আজীবন সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির আজীবন সদস্য, গাজীপুর আইনজীবী সমিতির আজীবন সদস্য, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যশানাল অ্যালায়েন্স অব ওমেন্সের ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে অনেক আন্দোলন করেছেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছিলেন তার শিক্ষক। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে শহীদ জননীর সাথে কাজ করেছেন।

প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি দেখেন যে, পুলিশ বাহিনীতে ৬০% রেশন দেওয়া হয়, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে ১০০% রেশনের ব্যবস্থা করেন। পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকিভাতা বাড়িয়েছেন, ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে যেইখানে জাতির জনককে রাখা হতো সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও চার নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলেও স্মৃতি জাদুঘর করা হয়, স্মৃতি জাদুঘর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। তার সময়ে পুলিশ বাহিনীতে স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করা হয় এবং থানার ওসিদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় ও এসআইদের ২য় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। আইজি পদকে আপগ্রেড করা হয়।

২০০৪ সনের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওযামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সভা এবং মিছিলের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হয়। সে দিন তিনি মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ ফিট পিছনে ছিলেন। সেদিনের মর্মান্তিক দৃশ্য ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলা ও লাশের সারি দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। সেদিন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। সে দিন তিনিও আহত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেদিন আল্লাহর রহমতে জীবনে রক্ষা পান কিন্তু গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কানের শ্রবণশক্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায় সেদিন এই হামলা হয়েছিল। সেই কারণে এত বড় ঘটনা হলেও তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২য় মেয়াদে সরকার গঠনের ৫০ দিনের মাথায় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে একটি হৃদয়বিধারক ঘটনা ঘটেছিল তৎকালীন বিডিআর হত্যাকাণ্ড। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি সেদিন বিডিআর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় চেষ্টা করেছিলেন। ছুটে যান পিলখানা বিডিআর ক্যাম্পে। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছার আগেই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। পরের দিন ২/৩ শত বিডিআর ফোর্স তার নির্দেশে হাসপাতালের ভিতরে অবস্থান নেয়। তাদের অবস্থানের পর লাশগুলো উদ্ধার করা হয় ও গুলি,অস্ত্রশস্ত্র বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এরশাদের সামরিক শাসনের সময় স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনের বাসায় ১৫ ফেব্রুয়ারি জমায়েত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা, আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ হানিফ, মতিয়া চৌধুরী , সাহারা খাতুন ও ড. কামাল হোসেনসহ ২৬ জন নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। ১৫ দিন জেল খাটার পর প্রথমে জননেত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুনকে গাড়িতে করে যার যার বাসায় নিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়।

তখনো এরশাদের শাসন আমল চলছে, এই সময় আরেকবার স্বাধীনতা দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধ থেকে আইভি রহমান, জোহরা তাজউদ্দিন, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুনকে পুলিশ গ্রেফতার করে সাভার থানায় নিয়ে যায়। তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা গৃহবন্দী ছিলেন, তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন এই মূহূর্তে আমার মহিলা নেত্রীদের ছেড়ে না দিলে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে পড়বেন এবং আন্দোলন শুরু করবেন। পরে সন্ধ্যা ৭টায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার শাসন আমলে একবার হরতালের সময় ফার্মগেট এলাকায় পুলিশ বাহিনীতে বিএনপি ক্যাডারদের দ্বারা তিনি ও বেগম মতিয়া চৌধুরী মারাত্মকভাবে আহত হন। মতিয়া চৌধুরীকে আল-রাজী হাসপাতালে ভতি করা হয় এবং সাহারা খাতুনকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে ডান হাঁটু অপারেশন করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে কেবিন না থাকায় সেখান থেকে তাকে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

ওয়ান ইলেভেনের সময় স্মৃতিময় একটি ঘটনা হলো সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ আদালতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার যে দিন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় সেদিন তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমানকে বিশেষ আদালতে যেতে অনুরোধ করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জানান ওনার তো কোট-টাই গাউন নেই, তখন তিনি বললেন সব ব্যবস্থা করবো, আপনি আসেন। সে দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে আদালতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সেই ঘটনা আজও তার স্মৃতিতে মনে পড়ে।

স্মৃতিময় আরেকটি দিন হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পর ১৯৮১ সনে দেশে ফেরত এসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যেদিন যান, সেদিন নেত্রী সারাদিন আবেগপ্রবণ হয়ে ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বরের বাড়িতে সারাদিন কাটান। সেদিন নেত্রীর সাথে তিনিও সারাদিন ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিলেন। এরপর প্রায় দুই মাস প্রতিদিন সকালে তিনি ৩২ নম্বরে যেতেন, সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় চলে আসতেন।

মনে পড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫ সনের জন্মদিনের কথা। সেদিন মহিলা সমিতির উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য একটি বড় কেক নিয়ে গণভবনে গিয়ে কেক কাটার সময় বঙ্গবন্ধু তার হাত থেকে কেক কাটার চাকু নিয়ে নিজেই কেক কাটতে শুরু করেন এবং তার হাতে তুলে দেন সকলকে দেওয়ার জন্য, সে দিনের স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে। এ রকম হাজারো স্মৃতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মিশে আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আজীবন আস্থাশীল ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি বহুবার নির্যাতিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, তারপরও তিনি কখনো থেমে থাকেননি। তিনি বলেন আওয়ামী লীগের জন্যই তিনি তার এই ক্ষুদ্র জীবনটি উৎসর্গ করে গেছেন।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।