ফিরিয়ে দিন সোনালি আঁশের সোনালি দিন
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকেই প্রতিবাদ আসছে। তারা বলছেন, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কথিত গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় শ্রমিক বিদায়ের ঘোষণা বাতিল করতে হবে।
২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল ও লুট করে নিজেদের পকেটে ভরে বিদেশে পাচারের যে আয়োজন, তা পাটকলের শ্রমিকরা মানবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পাটকল বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাই ঘোষণার প্রতিবাদে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
তারা বলেন, করোনাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে ৫০ হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করা এবং লক্ষাধিক মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেয়া এই সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। একদিকে ৮-১০ লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছে, প্রায় তিন কোটি লোক নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে এসেছে, তখন পাটকল শ্রমিক ও ওই অঞ্চলের মানুষদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।
তারা বলেন, লোকসানের প্রধান কারণ শ্রমিক নয়, কারণ হচ্ছে দুর্নীতি, কারখানাগুলো আধুনিকায়ন না করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না হওয়া। সেটার সমাধান না করে কারখানা বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। সরকার কি আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি বন্ধ করতে পেরেছে? প্রতিটি নিয়োগে, প্রতিটি বদলিতে, প্রতিটি পদোন্নতিতে যে দুর্নীতি হয় তা কি বন্ধ করতে পেরেছে? তাহলে তো সরকারকেই বন্ধ করে দিতে হয়। সুতরাং দুর্নীতির দোহাই দিয়ে সব দায় শ্রমিকের ওপর চাপানো চলবে না।
বাংলাদেশকে একসময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসতো পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন আর নেই। মাঝখানে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার এক চেষ্টা হয়েছিল। বিশেষ করে সরকার বন্ধ পাটকল চালুসহ নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছিল পাটখাতের উন্নয়নে। কিন্তু সেটিও ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আবারও শুরু হয়েছে পাটখাতের দুর্দিন। ফলে পাটচাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এবং পাটজাত পণ্যের সঙ্গে যেসব মানুষজন জড়িত তারাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আবারও উদ্যোগী হতে হবে। দেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে ঐতিহ্যময় গৌরব।
সরকার পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করেছে। পাট উৎপাদন বিপণন ও রফতানির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো এখানেও দেয়া হবে। এছাড়া পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইনও (২০১০) করা হয়েছে ইতোমধ্যে। পাটখাতের মাধ্যমে এখনো বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই পাটকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশকে কৃষি অর্থনীতির ওপর ভর করেই দাঁড়াতে হবে। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বেড়ে উঠতে হলে নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
পাট এমন একটি ফসল যার সবকিছুই কাজে লাগে। পাটের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। ঔষধি পথ্য হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। পাটখড়ি উৎকৃষ্ট জ্বালানি। ঘরের বেড়া বা আসবাবপত্র তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। আর পাটের আঁশের কথা তো বলাই বাহুল্য। উন্নত জাতের তোষা পাটের সুতা থেকে জামদানি পর্যন্ত তৈরি সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এছাড়া পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা। এরফলে পাট বলতে এখন বাংলাদেশকেই বুঝাবে। মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করা গেলে এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। তবে এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
এছাড়া বন্ধ হওয়া পাটকল চালু করা, যেগুলো চালু আছে সেগুলো যেন ঠিকমতো চলে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি। পাট উৎপাদনে কৃষি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পায় পাটের নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উন্মেষ ঘটাতে হবে দেশপ্রেমের। পাটের সুদিন ফিরে আসলে এর সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ তাতে উপকৃত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে যুগোপযোগী এবং বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন- আমাদের প্রত্যাশা এমনটিই।
এইচআর/বিএ/পিআর