করোনা বনাম বিশ্ব পুঁজিবাদ : ২০২০-২১ বাংলাদেশ বাজেট

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২৩ জুন ২০২০

জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী

‘দুঃখের দিনে পাখিরা কি গান গাইবে? বিষাদের গান গাইবে!’
বের্টোল্ট ব্রেখট, জার্মান দার্শনিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক

বিপন্ন পণ্য : বিশ্ব পুঁজিবাদ

সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্রুতগতিতে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যতা বেড়ে উল্কার বেগে ছুটছে। ফলে অনেক রাতকানা দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গভীরভাবে প্রচার করতে শুরু করেছেন যে, সাম্যবাদী সম-সুযোগের সমাজব্যবস্থার সম্ভবত কোনো ভবিষ্যত নেই। ‘কার্ল মার্কস ইজ ডেড’, বেইজিংয়ের তিয়ানমিয়ান স্কোয়ারে বিস্মৃত মাও সে তুং, হোচিমিন সিটির স্কোয়ারে শায়িত হো চি মিন। হাভানা স্কোয়ারের কোথাও নেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ভাস্কর্য, তবু তার উপস্থিতি অনুভবনীয়, চুরুটবিহীন হাসিও আকর্ষণীয়। হাভানার বহু জায়গায় চে গুয়েভারা দৃশ্যমান, চিরতরুণ। কৃষক শ্রমিকের লাল ঝাণ্ডা কি আর উড়বে না?

বিশ্বপুঁজিবাদ হঠাৎ ভয়ানক ধাক্কা খেল এক অজানা, অদৃশ্য কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান ক্ষুদ্র ভাইরাস নভেল করোনা কোভিড-১৯ এর কাছে। প্রায় অজানা করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীকে তাবড়িয়ে তুলোধুনো করেছে, ধনী, দরিদ্র, সৎ, দুর্জন, দুর্নীতিপরায়ন রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, কৃষক জনতা-কে। কারও পালাবার পথ নেই। করোনাভাইরাস ছাত্র, শ্রমিক সবাইকে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রে ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে আসবে তো?

প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন মূল কথা নয়, মূল কথা সুন্দর জীবন-জীবিকা এবং জীবনের সবক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সম-অধিকার ও সম-সুযোগ। যার অনুপস্থিতির কারণে কি করোনাভাইরাসের প্রতিশোধমূলক প্রয়াস, যার থেকে কারও রক্ষা নেই? ফরাসি মার্কসীয় অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি কী ভাবছেন? নাক-মুখে রক্ত সঞ্চার স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়, বরঞ্চ মৃত্যুর সিগন্যাল। অন্যায় লুটেরা মুৎসুদ্দি শ্রেণি আজ সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্যের কাতারে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবার তাদের কোনো পথ খোলা নেই। উন্নয়নের স্বপ্নের রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা হঠাৎ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন, চোখে অন্ধকার দেখছেন। অন্ধকার রুমে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মুক্তি যেন সুদূর পরাহত। তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ চীনের উহানকে ছাড়িয়ে গেছে, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি বিপর্যস্ত। কেবলমাত্র সুষ্ঠুভাবে চালু আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী, সিএমএইচ এবং কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ হাসপাতাল সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, কয়েক শিক্ষকের করোনার মৃত্যুর ঘটনায়, প্রায় ‘লকডাউন’।

স্বাস্থ্যব্যয় বিল এবং অক্সিজেন স্বল্পতার আলাপ না-ই হলো। দেশের প্রায় ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের (ইউএইচএফডব্লিউসি) শতকরা ১০ ভাগ কেন্দ্রে একজন ডাক্তারও সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান তো দূরে থাক, নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ঝড় উঠবে সেখানে। অর্থনীতির সংবাদ তো আরও দুর্বিষহ।

বোমা ফাটিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), দারিদ্র্যতার হার ২০% থেকে বেড়ে ৩২% হবে। উন্নয়ন অন্বেষণের পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ তিতুমীরের হিসাবে এই বছরই বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা বেড়ে ৪২ থেকে ৪৩% পৌঁছবে। ভয়ানক তথ্য, হিসাবে খুব ভুল নাও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশে অন্যূন ৫০ লাখ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হবে। অতিরিক্ত দুই কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাদ্য সংকটে আছে, তাদের আয় ভয়ানকভাবে কমেছে, দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে সুশাসনের অভাব ও গণতন্ত্রহীনতা এবং লাগামহীন দুর্নীতি। জনপ্রতিনিধিরা পাপী, আমলারা নিষ্পাপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্রিগার হ্যাপি।

উহানে করোনার ঢেউ দেখে এসএ টিভির মার্চের (২০২০) টকশোতে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে আমি বলেছিলাম, ‘ঝড় আসছে, হাসপাতাল সামলান, ভেন্টিলেটর নয়, বেশি প্রয়োজন নেবুলাইজার ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ’ এবং ‘এক মাসের মধ্যে দ্রুত প্রশিক্ষণ দেয়া কয়েক হাজার সার্টিফিকেটধারী চিকিৎসক যারা ভেন্টিলেটর চালাবেন, ইনটুবেশন করবেন এবং যাদের শ্বাসনালী (ট্র্যাকসটমি) দ্রুত কেটে বাতাস প্রবেশের দক্ষতা থাকবে’। মূল সমস্যায় নজর না দিয়ে কোভিড চিকিৎসার চিকিৎসক ও সেবিকাদের তিন-পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলেন। প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে লেনদেন করলেন, দুর্নীতির প্রশ্রয় দিলেন, সেবা নিশ্চিত করলেন না। নিবেদিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান দিলেন না। যারা পালাচ্ছে তাদের উপঢৌকন দিলেন, অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিকতর দুর্নীতি ও অজুহাতের সুযোগ করে দিলেন।

বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের মানসকন্যা একবারও সর্বদলীয় রাজনৈতিক আলোচনার উদ্যোগ নিলেন না। আপনার রাজনৈতিক কর্মীদেরও বিশ্বাস করতে পারছেন না, কিন্তু কেন? কোথায় সংশয়, আপনার এত ক্ষোভ কেন, দুঃখ কোথায় লুকিয়ে আছে? গোয়েন্দা নির্ভরশীলতা অজান্তে বিপদ ডেকে আনে। আপনার এত কঠোর পরিশ্রম, সজাগ দৃষ্টি, দেশের জন্য পিতার ন্যায় অফুরন্ত ভালোবাসা, দেশের জন্য পুরো সুফল আনছে না কেন, ভেবে দেখেছেন কি? দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে, তারা আরও একজনকে ভালোবাসে, তিনি খালেদা জিয়া। তিনি আপনার সমতুল্য না হলেও দেশের কঠিন বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য আপনার খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ প্রয়োজন, অতীতের ন্যায় মহানুভবতা প্রদর্শন করুন। তার সুস্থতা কামনা করে আসুন দুজনে মিলে জনকল্যাণকর সুশাসিত গণতান্ত্রিক আনন্দের বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করুন।

অতর্কিত করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশের কয়েকজন মন্ত্রীর প্রলাপ উক্তি বৈসাদৃশ্য। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রবাহ হবে ভয়ানক যা দ্বারপ্রান্তে অথচ আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরের উন্নয়ন অন্বেষণ ২০২০-২১ বাজেট সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত আলোচনায় দেখিয়েছেন, যৌক্তিক প্রবৃদ্ধি ৪.২% এর অধিক সম্ভব নয়, উৎপাদনশীল জিডিপি কমবে ১২.৪%, প্রবাসী রেমিট্যান্স আয় কমেছে, কয়েক দেশে প্রবাসী অভিবাসী বাংলাদেশিদের কর্মচ্যুতি ঘটেছে। ১৭৪টি রাষ্ট্রে বাংলাদেশের এক কোটি ২০ লাখ অভিবাসী কাজ করেন, সেখানে কর্মসংস্থান বাড়ছে না, বরং কমছে এবং পোশাকশিল্পের আয় স্থবির হয়ে পড়েছে, নীরব ছাঁটাই চলছে, শিক্ষায় সবার সমান সুযোগ নেই, সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা ভোগ করে মাত্র ৯৬ লাখ পরিবার। প্রাপ্তির সঙ্গে আছে দুর্নীতির উঁইপোকা, বেকারত্ব বাড়ছে ৩% হারে, অসহায়ত্ব বাড়ছে শিক্ষিত বেকারদের।

২০২০-২১ : দুঃসময়ের বাজেট কিন্তু আলোচনায় উত্তাপ নেই

দুঃসমে গতানুগতিক বাজেটে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অবসৃত থাকে, পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে কর্মদক্ষতায় ও প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ছে বাংলাদেশের শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রীকে গণতান্ত্রিক আলোচনায় দেখা যায়নি ১৪ দলের সভায়, অধিকাংশ সময়ে তিনি ছিলেন আমলা পরিবৃত্ত, রাজনৈতিক সহকর্মীরা ম্রিয়মান। মৃত ব্যক্তির বন্দনা আছে, সঙ্গে আছে ঢাকঢোলের বাজনা অথচ কর্মীদের হৃদয়ে নেতার আকুতি অনুপস্থিত। একনাগাড়ে ২০ দিন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসক ও প্যারামেডিকদের অতুলনীয় সেবা ও জনগণের ক্রমাগত দোয়ায় করোনামুক্ত হয়ে সরাসরি গত ১৪ জুন ২০২০ তারিখে বনানী কবরস্থানে গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সতীর্থ নাসিমকে শেষ অভিবাদন জানাতে। তখন রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্ব চলছিল। শহীদ তাজউদ্দিন, নজরুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর কবর জিয়ারত না করে অন্যান্য আওয়ামী লীগ কর্মীরা ফিরে গেলেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে দোয়া করতে দেখলাম না। অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মীরা জানেন না, বনানী কবরস্থানে শায়িত আছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী প্রবাসী সরকার। কী দুর্ভাগ্য জাতির!

১) দুঃসময়ের বাজেট নিয়ে আলোচনার উত্তাপ নেই। দেশের এতজন বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্যাংকার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদ কেউ সাহস করে সত্য কথা জনসাধারণকে জানাচ্ছেন না। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষমান। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমনকি তোফায়েল, আমু সবাই, তাদের সংশয় কেন? তারা তো শেখ হাসিনার নির্ভরশীল রাজনৈতিক সহকর্মী।

২) বিএনপি তাদের স্ট্যান্ডিং ও উপদেষ্টা কমিটির সভায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিবিড়ভাবে পড়ে, অধ্যয়ন করে একাধিক আলোচনা-সমালোচনা করে মননশীল সুষ্ঠু সুপারিশ সরকারকে জ্ঞাত না করে ভুল করেছেন। দেশকে তো বাঁচাতে হবে। এটা কেবল হাসিনার দায়িত্ব নয়, খালেদা জিয়ারও।

৩) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংসদরা মুখে কুলুপ বেঁধেছেন কেন? সুচিন্তিত বাগ্মিতারে সংসদ উত্তপ্ত রাখুন, ভয় পাবেন না, নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। সংখ্যার চেয়ে সাহস বড়।

৪) এরশাদ সাহেব বেঁচে থাকলে বাজেটের প্রতিটা বিষয় পড়ে বুঝে উপযুক্ত সমালোচনা উন্মুক্ত করতেন, জি এম কাদেরের মতো গৃহপালিত প্রাণীর আচরণ করতেন না। জি এম কাদের অনুগ্রহ করে হুক্কা হুয়া করা বন্ধ করুন। জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত গড়ার জন্য আপনার অনেক কাজ বাকি।

৫) জনাব ওবায়দুল কাদের অনুগ্রহ করে মুখ বন্ধ রাখেন, বিরোধীদলীয় সকল সমালোচনার উত্তর দিতে হয় না, এটা রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, অর্থমন্ত্রীকে উত্তর দেবার সুযোগ দিন। বাজেট অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব, আপনার নয়।

৬) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সর্বদলীয় রাজনৈতিক সভা ডাকুন, বিপদ মুক্তির বাজেট উদ্ভাবনের জন্য। নতুবা কোনো লাভ হবে না দেশের, না দেশবাসীর, ওষুধের দাম কমবে না, কৃষক শ্রমিক তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবে না, আইসিউ প্রতারণা বাড়বে, মৃত্যুর পরও চিকিৎসার বিল দিতে হবে, ফড়িয়ারা রাজত্ব করবে, শহরবাসী অত্যাধিক মূল্যে ফলমূল, শস্য কিনে প্রতারিত হবেন। স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য অব্যাহত থাকবে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য বাড়বে, সঙ্গে যৌননিপীড়ন, নৈরাজ্য ও ব্যাপক দুর্নীতি। মুখ থুবড়ে পড়বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী।

পরিশোধতব্য সুদ ২০২০-২১ বাজেটে

আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাপ্য বিদেশি ঋণের সুদ এবং পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভর্তুকি ও দায়বদ্ধতা পরিশোধ করতে ১০০,৪১১ (এক লাখ চারশ এগার) কোটি টাকা প্রয়োজন যা ২০২০-২১ বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৭.৬৮%। খাদ্য, দুর্যোগ, কৃষি, পানি সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের মোট বরাদ্দের ১৩.৩৬% এর চেয়ে ২৫০০০ কোটি টাকা বেশি। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ মাত্র ৭৯,৯৪১ কোটি যা বাজেটের ১৪.২৫%। স্মরণতব্য ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজন ১৭.৬৮% বরাদ্দ। সংসদে এ সম্পর্কে প্রশ্ন না ওঠা দুর্ভাগ্যজনক। পরিশোধতব্য বিদেশি ঋণের বিষয়টি জনসাধারণের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবর্গের ব্যর্থতা রাজনীতিতে তাদের অপরিপক্কতার পরিচায়ক এবং দুঃখজনক।

বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মাথাভারি, নিত্য নতুন সিনিয়র সচিবের জন্ম হচ্ছে, বাজেটের মোট বরাদ্দের প্রায় এক পঞ্চমাংশ জনপ্রশাসনে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য সচিবদের উর্বর মস্তিষ্ক খুব কার্যকর।

গুন্ডা ফাটাকেষ্ট বনাম শেখ মুজিবুর রহমান

আওয়ামী লীগ সরকার অনুগ্রহ করে ঢাকঢোল পিটিয়ে, পায়ে ঝুমুর বেঁধে নেচেগেয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টানেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অজান্তে গুন্ডা ফাটাকেষ্টে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। শেখ মুজিবের মন, মনন, মহানুভবতা, চিন্তা, চেতনা ও ভালোবাসার ঘ্রাণ নিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ওলেমা লীগ— সবাই অক্ষম, অন্ধ, বধির।

আওয়ামী লীগ, যুবলীগকর্মীরা যদি শেখ মুজিবকে ভালোবাসেন তবে ১৯৭৫ সনের ১৭ জুলাই-এর নির্দেশনামা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। শেখ মুজিব গ্রামের মানুষকে ভালোবাসতেন নিজের চেয়েও বেশি, তাদের দুঃখমোচন ও ক্ষমতায়ন ছিল তার স্বপ্ন। এবারের বাজেট হওয়া উচিত শেখ মুজিবের স্বপ্নের বাস্তবায়ন, স্বনির্বাচিত স্থানীয় প্রশাসন, দুর্নীতিমুক্ত সম-অধিকারে সুশাসিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুরের মহানুভবতা আত্মস্থ করতে আওয়ামী লীগের অধিকাংশই অক্ষম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি নিজেও বিভ্রান্ত এবং ভীতসন্ত্রস্ত। মৌলিক সংস্কারের বিকল্প নেই। পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করুন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অমর হবার শেষ সুযোগ, যার মূল্য নোবেল পুরস্কারের চেয়ে অনেক বেশি। ২০৪১ পর্যন্ত অপেক্ষা ভুল সিদ্ধান্ত, পিতার ভুল থেকে শিক্ষা নিন। আমলাদের বেশি বিশ্বাস করতে নেই। স্বচ্ছ রাজনীতি আপনার বর্ম ও ধর্ম।

শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও ভালোবাসা

দল ও মত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক কর্মী এবং গ্রামগঞ্জের সাধারণ কৃষক, শ্রমিকের জন্য ছিল শেখ মুজিবুরের অফুরন্ত ভালোবাসা, তার হৃদয়ের দরজা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া, কৃষক-শ্রমিক সন্তানের শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল তার জীবনের ব্রত। সবাই তার একান্তজন, আত্মীয়তুল্য। যাকে একবার শেখ মুজিব দেখেছেন, তাকে তিনি স্মরণ রেখেছেন স্নেহডোরে। কেন্দ্রিকতা তাকে করাচি ও ইসলামাবাদের শাসনের কথা বারে বারে স্মরণ করিয়েছে নির্মমভাবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রিকতা পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সম-সুযোগ ও সম-উন্নয়নের ছিল প্রধান বাধা। কেন্দ্রিকতা, যানজট, শাসনজট ও সময়মতো স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চনার নির্মম মাফিয়া শাসন। পাকিস্তান ভাঙার অন্যতম কারণ কেন্দ্রিকতা, ধর্মের অপব্যবহার এবং কেন্দ্রিকতা দুর্নীতির সোপানও বটে। মুখে রক্ত সঞ্চারের মতো। শহরের সকল সুযোগ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন শেখ মুজিব গ্রামবাসীদের জন্য, সঙ্গে নির্মল বাতাস ও লোকজ সংস্কৃতির বিস্তার।

তৃণমূলের অধিকার আদায় ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সনের ১৭ জুলাই, আগস্ট মাস অবধি চলছিল গভর্নরদের প্রশিক্ষণ। তিনি বুঝেছিলেন, পূর্ব পকিস্তানে শিল্প নেই কিন্তু ব্যাপক কৃষি সম্ভাবনা আছে। আছে শিল্পের উৎপাদন সৃষ্টির, তাই কৃষি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার বাহন, পদ্ধতি হবে ইউরোপীয় সমবায় ব্যবস্থাপনা। মেজর খালেদ মোশাররফের ছোট ভাই রাশেদ মোশাররফকে ইউরোপে পাঠিয়েছিলেন সমবায় পদ্ধতি অবলোকন ও অধ্যায়নের জন্য। উদ্যোগ নিয়েছিলেন মৌলিক সংস্কারের, যা আজও অসম্পূর্ণ। এই ব্যর্থতার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এড়াতে পারেন না। পরিবর্তনকে আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন? দেশ ও দেশবাসীকে ভালোবাসাই শেখ হাসিনার শক্তি। গণতন্ত্রে আসন পরিবর্তন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। প্রকৃতির নিয়ম।

দ্রুত বিপদমুক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি সরকারি বিনিয়োগ করতে হবে বেসরকারি কৃষি উৎপাদনে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তদারকিতে উদ্বৃত্ত হয়ে ফিরে আসবে সকল বিনিয়োগ। ব্যাংক খেলাপির ঝামেলায় ঘুম হারিয়ে যাবে না। শিল্পপতিদের বিশ্বাস করা যায় না, কিন্তু কৃষককে বিশ্বাস করা যায়, তারা মিথ্যাচার কম করেন, কারণ তারা ধর্মে বিশ্বাসী ও নীতিবান, তাদের ক্ষুধা সীমিত। মৎস্য, পানি সম্পদ, পোলট্রি, স্বাস্থ্যসেবা, ডেইরি ও খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক বিনিয়োগ নিশ্চিত করুন নির্ভাবনায়। বিআইডিএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সজাগ–তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে সঠিক নিবন্ধন, সঠিক কৃষককে সময়মতো ঋণদান ও সময়মতো দুর্নীতিমুক্ত ঋণপ্রাপ্তি। সঙ্গে রাখুন এনজিও-দের, তারা তৃণমূলে সম্পৃক্ত এবং পরিশ্রমী, ক্ষুদ্রঋণ দ্রুত প্রসার করে নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্র্যাকের প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ‘আশা’র শফিকুল হক চৌধুরীর অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণযোগ্য।

স্থানীয় শাসন কমিশন ও গভর্নর নিয়োগদান

১. বৃহত্তর জনসাধারণের কল্যাণই রাজনীতি। সঠিক সময়ে নির্ভয়ে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক কর্মীকে মাথা উঁচু করে থাকা রাজনৈতিক নেতায় উন্নীত করে, ইতিহাসে স্থান করে দেয়। প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য প্রতিযোগিতামূলক স্বনির্বাচিত, স্বশাসিত ৬৪ জেলা স্টেট (ডিস্ট্রিক্ট স্টেট) সৃষ্টির লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে কমিশন গঠন করুন, ৬৪ জন গভর্নর নিয়োগ দিন তৃণমূল রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক- বিচারপতি, দানশীল ব্যবসায়ী, প্রখ্যাত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে। ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কেন্দ্র ও জেলা স্টেটে প্রশাসনিক সামঞ্জস্য থাকবে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দ্রুত উন্নয়ন হবে কিন্তু দুর্নীতি বহুলাংশে কমবে, সম-অধিকার ও সম-সুযোগ সৃষ্টি হবে, জবাবদিহিতা থাকবে, সুখের পায়রার বকবকুম শুনতে হবে না, জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিকভাবে নিজ জেলা স্টেটে সপরিবারে অবস্থান হবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি কর্মকর্তাদের বেলাতেও এই নিয়ম কঠোরভাবে প্রযোজ্য হবে। তাদের সন্তানদের স্ব স্ব জেলা স্টেটে অধ্যয়ন করতে হবে স্থানীয় কৃষক শ্রমিকের সন্তানদের সাথে, একই বেঞ্চে বসে। দুই জায়গায় পরিবার রাখা মানে দূর্নীতিতে সজ্ঞানে অংশগ্রহণ, কর্তব্যে অবহেলা এবং স্থানীয় উন্নয়নে মনোযোগ না দেয়া। স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি প্রশাসন ক্যাডার সৃষ্টি বিবেচ্য হওয়া উচিত- ব্যাপক জেলা স্টেট ক্যাডার এবং সীমিত কেন্দ্রীয় প্রশাসন ক্যাডার। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্রনীতি, আকাশ-সমুদ্রপথ, আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা, আয়কর ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। পুলিশ হবে জেলা স্টেট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কোটা নয়, প্রতিযোগিতাই হবে প্রশাসনে প্রবেশ পথ। বয়স সময়সীমা অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বয়সসীমা বিবেচ্য হতে পারে, অন্যত্র নয়। সকল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবশ্যই ধূমপান, পানসেবন ও মাদকাসক্তি মুক্ত হতে হবে, এগুলো দুর্নীতির প্রথম ধাপ। সকলের আয়কর তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক।

স্থানীয় শিক্ষিতদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে জেলা প্রশাসনে, কৃষি উৎপাদন সমবায়ে এবং কৃষি বাজারজাত সমবায়ে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশ হবে। কমিউনিস্ট ও বাম রাজনৈতিক নেতারা তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার পুরস্কার অর্জন করতে পারবেন কোনো না কোনো জেলা স্টেটে, তাদের শাসনের ধরন নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে। নির্মল পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা সংস্কৃতির নতুন শহর গড়ে উঠবে জেলা স্টেটে, কেন্দ্রীয় রাজধানী ঢাকার সমমানের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, সঙ্গে মুক্ত চিন্তার সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় লোকশিল্প নিয়ে। শান্তির দ্বীপ হবে সব জেলা স্টেট, সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীর জীবনযাত্রা হবে নিরন্তর নিরাপদ ও আনন্দময় এবং সম্পত্তিতে সমান অধিকার। জনসংখ্যা ভেদে প্রতি জেলা সংসদে ৪০ থেকে ৮০ জন বিধায়ক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সর্বোচ্চ ১০ (দশ) জনের মন্ত্রিসভা, প্রশাসনশীর্ষে গভর্নর। কেন্দ্র নিয়োগ দেবে জেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের জেলা স্টেটের সিভিল সার্জনের পরামর্শে, কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের

(ইউএইচএফডব্লিউসি) সকল চিকিৎসক, সেবিকা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের নিয়োগ উন্নয়ন নির্ধারণ করবেন জেলা স্টেট (ডিস্ট্রিক্ট স্টেট) কর্তৃপক্ষ।

২. ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (UHFWC)

সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সুবিধা ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা অসম্পূর্ণ ও অকল্পনীয়। করোনা প্রতিরোধে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের মূল ভূমিকা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকারা মূল সেনানী। এখানে বিনিয়োগ হবে অর্থবহ এবং অবশ্য প্রয়োজনীয়। কেবল যন্ত্রপতি ক্রয় নয়, যন্ত্রপাতির সহায়তায় সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানই লক্ষ্য। চিকিৎসক ও সেবিকাদের জ্ঞান ও সেবার উন্নয়ন হবে করোনা ও অন্যান্য মহামারি থেকে আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্র।

আগামী ১০-১৫ বৎসরে একটি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা পৌঁছবে ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ (পঞ্চাশ থেকে সত্তর) হাজারে। জনগণের চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ৬ (ছয়) ফুট উঁচু, ৮০০ অধিক রানিং ফুটের নিরাপত্তা বেষ্টনী, গভীর নলকূপ ও ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা, সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের পরিচালকের জন্য ১০০০ বর্গফুটের বিনা ভাড়ায় পারিবারিক বাসস্থান, মেট্রন, একজন দন্ত চিকিৎসক, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন ফার্মাসিস্ট, দুজন নবীন চিকিৎসক ও দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য ৬০০ (ছয়শ) বর্গফুটের ৮টি ফ্রি বাসস্থান, মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ছাত্র ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, বিনোদন কক্ষ, ডাইনিং রুম, টয়লেট সুবিধাসমেত ৪৫০০ বর্গফুটের ডরমিটরি এবং ২০ শয্যার ইনডোর হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ছোট অপারেশন কক্ষ বাবদ ৫০০০ (পাঁচ হাজার) বর্গফুট স্থাপনা হবে জনগণকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য সুবিধা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ।

যেসব চিকিৎসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সম্ভব হবে না সেগুলো রেফার হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নত চিকিৎসার জন্য। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের চিকিৎসকগণ কমিউনিটি ক্লিনিকেও প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও ধাইদের ক্রমাগত আধুনিক চিকিৎসা তথ্যজ্ঞান করবেন। তদোপরি তারা মেডিকেল ও অন্যান্য ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পালন করবেন যার জন্য একটা শিক্ষকতা ভাতা পাবেন। তিন মাসমেয়াদি কোনো একটা সার্টিফিকেট অধ্যয়ন ও পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদে উন্নীত হবেন। কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা অতিরিক্ত ভাতা পাবেন। বিনা ভাড়ায় বাসস্থান সুবিধা পাবেন। গ্রামবাসীদের নিরন্তর চিকিৎসাসেবা দেবার জন্য চিকিৎসকদের জন্য জনগণের পুরস্কার।

সকল সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও নাসিং কলেজ এক বা একাধিক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত হবে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের অংশ হিসাবে। ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধ ও দরিদ্র শ্রেণির সাথে পরিচিতি দেশপ্রেমের অংশ এবং শিক্ষাদানের প্রধান হাতিয়ার।

৩. স্বাস্থ্য খাতের অন্য মৌলিক সংস্কার

প্রায় এক লাখ ব্যক্তি কারাবন্দি আছেন, জেল হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া এবং চিকিৎসক স্বল্পতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলা ব্যবসায়ীদের, ভরসা সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল সিএমএইচ। সকল কারাগার, পুলিশ, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার ও বর্ডার গার্ড, হাসপাতালসমূহ সরাসরি আর্মি মেডিকেল কর্পস (এএমসি) কর্তৃক পরিচালিত হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, চিকিৎসকের অভাব হবে না। এএমসি হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সকল চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানদের পদবি হবে সামরিক বাহিনীর- এএমসি’র। তারা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন। তাই তাদের কাজে থাকবে প্রশান্তি ও আনন্দ এবং সময়মতো পেশাতে অগ্রগতি।

বেসামরিক অনেক সরকারি হাসপাতাল বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে এএমসি চিকিৎসকদের দ্বারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্য ও পরিবারবর্গ সামরিক বাহিনীর সমান সুযোগ পাবেন। সামরিক বাহিনীর মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরতরা এমবিবিএস পাস করে ৫ (পাঁচ) বৎসর এএমসি-তে চাকুরী করতে বাধ্য থাকবেন, নতুবা ক্ষতিপূরণ দেবেন ৩০ লাখ টাকা।

৪. ঢাকা শহরে জেনারেল প্রাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতির প্রবর্তন

ঢাকা শহরে ১০০ ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে জেনারেল প্রাকটিশনার্স (জিপি) ও রেফারেল পদ্ধতির জন্য ২০০০ (দুই হাজার) কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। দুই কোটি নগরবাসীর জন্য খুব বেশি বরাদ্দ নয়। ঢাকা শহরের সকল জেনারেল প্রাকটিশনার্স সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে লিপিবদ্ধ নাগরিকরা বিনা ফি-তে পরামর্শের পাশাপাশি ইসিজি, আম্বুবেগ, অক্সিজেন-পালস, অক্সিমিটার ও নেবুলাইজার সুবিধা, ফার্মেসি, ছোট ল্যাব, এএনসি-পিএনসি ও ফিজিওথেরাপি সুবিধা পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত থাকছে স্বাস্থ্যশিক্ষা, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও হোমভিজিট। বাড়িতে যেয়ে রোগী দেখা এবং প্রেসক্রিপশন অডিট ব্যবস্থাপনা। অতিরিক্ত ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অপচয় বটে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

রোগীরা ন্যায্যমূল্যে সরকারি ওষুধ কোম্পানি ইডিসিএল’র সকল ওষুধ পাবেন অল্প খরচে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সকল রোগী বিনা ফি-তে চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন, বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন সরকারি নির্ধারিত একটা ন্যায্য ফি-তে। কেবলমাত্র জিপি চিকিৎসকগণ রোগীদের নির্দিষ্ট হাসপাতালে অধিকতর চিকিৎসার জন্য রেফার করতে পারবেন, রোগীর হয়রানি কমবে। জিপি এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও পেশা সংক্রান্ত সম্পর্ক গভীর হবে। হোমভিজিট করলে জিপি অতিরিক্ত ফি পাবেন এবং বয়োবৃদ্ধের চিকিৎসাসেবার সুবিধা হবে। ফলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় ভিড় কমবে।

কতক জেনারেল প্রাকটিশনার্সগণ নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করতে পারবেন আনন্দের সাথে, পাবেন শিক্ষকতা ভাতা। সাথে তার পছন্দ মতো বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ করে, পরীক্ষায় পাস করে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদও পাবেন, সঙ্গে আনুমানিক ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকার অতিরিক্ত ভাতা।

৫. পুষ্টি ব্যতীত স্বাস্থ্য অকল্পনীয়

দেশে দুই কোটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে করোনা উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ছয় মাস ফ্রি রেশন দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। ৪-৬ জনের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে চাল ২০ কেজি, আটা ৫ কেজি, আলু ১০ কেজি, সরিষার তেল ১ লিটার, সয়াবিন তেল ১ লিটার, পিয়াজ ১ কেজি, মসুর ডাল ২ কেজি, আদা ২০০ গ্রাম, রসুন ২০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ২০০ গ্রাম, লবন ১/২ কেজি, চিনি ১/২ কেজি ও সাবান ২টিসহ মোট খাদ্য প্যাকেট ব্যয় হবে অনধিক দুই হাজার টাকা। ফ্রি খাদ্য রেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক ব্যয় মাত্র ৪০০০ (চার হাজার) কোটি টাকা। খাদ্যগুদামে স্থান বাড়বে যা কৃষকের শস্য উৎপাদনে আকর্ষণ বাড়াবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতি মাসে প্রতি পরিবারকে আরও দিতে হবে দুই কৌটার দুইশ আয়রন ট্যাবলেট, ৬০ মিলিলিটারের এক বোতল প্যারাসিটামল সাসপেনশন, ৩০টি ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ১০০ মিলিটার ক্লোরহেক্সিডিন এবং ৫টি ওআরএস সাসেটস, এতে ব্যয় হবে মাসে অনধিক ২০০ (দুইশ) টাকা। সঙ্গে উঠানে সবজী চাষে সহযোগিতা। গর্ভবতী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সপ্তাহে একবার দুধ, ডিম খাবার সুবিধার জন্য মাসে ৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা দেয়া কাম্য হবে। স্মরণ রাখতে হবে নগদ অনুদান অধিকতর দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং নগদ অনুদানের পরিমাণ যথাসাধ্য কম রাখতে হবে। খাদ্য সহযোগিতা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে, সর্বদলীয় রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র ও এনজিও-দের সহায়তায়, সঙ্গে থাকবেন সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনানীরা।

৬. অপ্রয়োজনীয় ব্যয়হ্রাস ও সামাজিক বৈষম্য নিরসনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

ক) নতুন সিনিয়র সচিব নয়

নিত্যনতুন সিনিয়র সচিব সৃষ্টি কাম্য নয়, কোনো আমলাকে চাকুরীতে এক্সটেনশন দেয়া অনভিপ্রেত। এরা রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ, সুষ্ঠ নির্বাচনবিরোধী, সুখের পায়রা, জনগণ বিচ্ছিন্ন। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং জবাবদিহিতাবিহীন প্রশাসনে এদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে।

খ) সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কর্পোরেট কর্মকর্তাদের বেতন হ্রাস

ইন্সপেক্টর থেকে আইজিপি, ক্যাপ্টেন থেকে জেনারেল, সেকশন অফিসার থেকে সিনিয়র সচিব, লেকচারার থেকে উপাচার্য, করপোরেট কর্মকর্তা, ব্যাংকার, বিচারক থেকে বিচারপতি, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের আগামী এক বৎসর ২০% বেতন ও ভাতা হ্রাস করা হবে করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এবং দেশের সার্বিক অধিক অবস্থার বিবেচনায় যৌক্তিক কার্যক্রম। এক শ্রেণির নাগরিক তারা প্রাচুর্যে জীবন-যাপন করবেন আর শ্রমিকরা অর্ধাহারে কালাতিপাত করবেন, তা সভ্য নয়।

গ) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফি ২৫% হ্রাস বাঞ্ছনীয়।

ঘ) বিদেশে সরকারি অর্থে চিকিৎসা সুবিধা রহিতকরণ

সরকারি অর্থায়নে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো নাগরিক। সবাইকে নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।

ঙ) ক্ষতিপূরণ ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কুইক রেন্টাল ২০২০ বাজেট থেকে প্রত্যাহার,
দেশবাসী আর কতদিন ব্যবসায়ীর হাতে প্রতারিত হবেন! মেগা প্রকল্পের লাগাম কিছুদিন ধরে
রাখুন।

চ) জনপ্রশাসন (আমলাতন্ত্র) বিভাগের ব্যয় ৫০% হ্রাসের ব্যবস্থা নিন।

ছ) প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ সকল আইজিপি-দের নিরাপত্তাব্যয় ৫০% কমানো হলে পুলিশ ও এলিট ফোর্সের সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অধিক মনোযোগ দেবার সুযোগ পাবেন, খুন খারাপি কমবে এবং রাহাজানি, ছিনতাই, পথেঘাটে যৌননিপীড়ন হ্রাস পাবে, সফলতার জন্য পুলিশ পুরস্কৃত হবেন। পুলিশ হবেন জনগণের সত্যিকারের বন্ধু।

জ) মাদ্রাসা শিক্ষায় এত বেশি বিনিয়োগ কি পর্যাপ্ত “ডিভিডেন্ড” দিচ্ছে? অধিক হারে মসজিদভিত্তিক বেকার সৃষ্টি নয় কি? বিজ্ঞান শিক্ষাকে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে যুক্ত করে সকল সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মসজিদ কি প্রাক-স্কুল হিসাবে ব্যবহার করা যায়?

ঝ) ব্যয়হ্রাসের অজুহাতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না।

৭. রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক

ক) নগণ্য নিবন্ধিত আয়করদাতা

দেশে বর্তমানে মাত্র ২২ লাখ ব্যক্তি আয়কর নিবন্ধিত আছেন। এটা হতে হবে কমপক্ষে এক কোটি। ফেরিওয়ালা, নিরাপত্তাপ্রহরী, চাওয়ালা, ছোট দোকানদার, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, কারড্রাইভার, বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার ও ফুটপাতের ফল ও হোটেলমালিক, সিগারেটের দোকানদার, সবজিওয়ালা, সরকারি-বেসরকারি নিম্নশ্রেণির কর্মচারী, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক, অনভিপ্রেত কোচিং সেন্টারমালিক— সবাইকে নিবন্ধিত হতে হবে। গৃহকর্মীদেরও নিবন্ধিত হতে হবে তবে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন ফি দেবেন গৃহকর্ত্রীরা। বাৎসরিক নিবন্ধন ফি ১০০০ (এক হাজার) টাকার, বিনিময়ে পাবেন পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা এবং ব্যাংক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জেনারেল প্রাকটিশনার্স (জিপি) পরামর্শ ও ফ্রি স্বাস্থ্য সুবিধা, কতক ওষুধ ও বড় হাসপাতালে পূর্বাহ্নে নিদ্ধারিত রেফারেল সুবিধা। সরকারের আয় বাড়বে এক হাজার কোটি টাকা।

খ) আয়করমুক্ত করসীমা ৫ লাখ টাকা

আয়করমুক্ত করসীমা ৩.৫০ লাখের পরিবর্তে ৪.৫ লাখে নির্ধারণ করুন, বয়োবৃদ্ধ ও বিধবাদের জন্য অতিরিক্ত ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। বয়োবৃদ্ধদের ব্যক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অত্যাধিক, যৌক্তিক আয়কর হবে ৫% থেকে ৩০%। ব্যাংক ও কর্পোরেট ট্যাক্স ন্যূনতম ৪৫% নির্ধারিত থাকা বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ শর্তও থাকবে।

গ) সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল এবং প্রসাধনীর মূল্য বৃদ্ধি

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য অমঙ্গলজনক ধূমপান, জর্দা, পানসেবন, মাদকাসক্তি অপ্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন এবং ক্ষতিকর প্রসাধনী উৎপাদন ও বিপণন হ্রাসের জন্য ১০০% শুল্ক ধার্য যৌক্তিক উদ্যোগ। নিম্নস্তরের প্রতি শালকা সিগারেট ১৫ টাকা (১০০% সম্পূরক শুল্কসহ) মধ্যম শ্রেণির প্রতি শালক সিগারেট ২৫ টাকা এবং উচ্চ স্তরের প্রতি শালকা সিগারেট ৫০ (পঞ্চাশ টাকা) এবং ফিল্টারবিহীন প্রতি ১০ শালকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য হবে ৫০ টাকা (সম্পূরক শুল্কসহ), ফিল্টারযুক্ত ১০ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের মূল্য ৬০ (ষাট) টাকা নির্ধারণ করুন, নাগরিকদের ক্ষতি কমবে, পরিবেশ উন্নত হবে এবং সরকারের আয় কমপক্ষে কয়েক হাজার কোটি বাড়বে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের মূল্য (সম্পূরক শুল্কসহ) যথাক্রমে ১২০ টাকা ও ১০০ টাকা ধার্য করুন।

একইভাবে লিপস্টিক ও অন্য প্রসাধনী পারফিউমের ওপর ২০০% শুল্ক ধার্য করুন। অতিরিক্ত লিপস্টিক ও প্রসাধনী শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং পুঁজিবাদী প্রচারণাও বটে। পুঁজিবাদী ও ব্যবস্থাপনায় ‘নারীর সৌন্দর্য’ বিক্রয়যোগ্য পণ্য। বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীদের অজ্ঞতা বিপদজনক। নারীর তথাকথিত সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার বৃদ্ধির ন্যায় পুঁজিবাদী মাধ্যমে প্রতারণা থেকে সতর্ক করার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবহার করুন। স্মরণ রাখবেন, বিভিন্ন ধরনের অনেক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেন সংযুক্ত থাকে লিপস্টিক ও প্রসাধনীতে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

হাট-বাজার, ট্রেন, বাস স্টেশন, পার্ক, লঞ্চঘাটে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়, ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিবার জরিমানা হবে ১০০ টাকা, অর্জিত জরিমানা অর্ধেক পাবে পুলিশ, বাকি টাকা যাবে সরকারি তহবিলে। পানের পিক ফেললেও জরিমানা হবে। পার্কে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে পানসেবন দৃষ্টিকটু ও স্বাস্থ্য ক্ষতিকর।

ঘ) যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স বাড়ান

দেশে প্রায় ৪৪ লাখ যানবাহন আছে, তন্মধ্যে ৫০ হাজার বাস, ১ লাখ ৫৩ হাজার ট্রাক, তিন লাখ অটোরিকশা, প্রায় দেড় লাখ ‘কভার্ড ও উন্মুক্ত’ ভ্যান এবং পিকআপ, ৩০ লাখ মোটরসাইকেল, জিপ ৬৫ হাজার, মাইক্রো ও মিনিবাস এক লাখ ৩৫ হাজার, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জারকার তিন লাখ ৬০ হাজার, সামরিক যানবাহনের হিসাব জ্ঞাত নয়। সকল সরকারি-বেসরকারি মোটরযান ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ান, বাৎসরিক রোড ট্যাক্স হওয়া উচিত ন্যূনতম এক লাখ টাকা তবে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যাপ্ত। সরকারি-বেসরকারি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি বাঞ্ছনীয় নয়। আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর সকল যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং রোড ট্যাক্স হবে বেসামরিক যানবাহনের সমতুল্য। কৃষি যানবাহন, ট্রাকটর রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সকল সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির প্রত্যেক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি প্রতি পাঁচ বৎসরে এক লাখ টাকার অনধিক হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে না, সমহারে বাৎসরিক রোড ট্যাক্স বাড়বে।

পরিবারে দ্বিতীয় গাড়ি ব্যবহার করলে দ্বিতীয় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি ও রোড ট্যাক্স হবে, প্রথম গাড়ির দ্বিগুণ। পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সপ্তাহের একদিন সকল প্রাইভেট গাড়ির চলাচল বন্ধ রাখার চেষ্টা করা উচিত। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। ছাত্ররা অর্ধেক ভাড়ায় ও মাসিক পাসে এবং বয়োবৃদ্ধরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা পাবেন বিনা ভাড়ায় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা অবধি। নগরপিতারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, প্রত্যেক ট্রান্সপোর্টমালিক তার গাড়ি নগরপুলে যুক্ত করবেন, তার দায়িত্ব শেষ। সমপরিমাণ লাভ পাবেন, তাদের বিনিয়োগ আয়করমুক্ত। নারী ড্রাইভার হবে নারী নির্যাতন রোধের প্রধান প্রতিষেধক। অহেতুক প্রতিযোগিতা না থাকায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলবে সকাল ৬টা থেকে সারারাত্রি, তবে রাতের ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি ঘণ্টায় একবার, কিন্তু দিনের বেলায় প্রতি ১৫ মিনিট পরপর। এককালীন রেজিস্ট্রেশন ও প্রতি বছরের রোডট্যাক্স বাবদ সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

প্রাচুর্যের মধ্যে বসবাসের জন্য তো একটা ন্যূনতম মূল্য দিতে হবে। আর্টিকুলেটেড লরি, ট্রাক, বাস ড্রাইভারদের ক্রমাগত উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, নারীদের প্রফেশনাল ডাইভিং প্রশিক্ষণে ব্যয় রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাবে। ট্রান্সপোর্টে যৌননিপীড়ন হ্রাস পাবে। নারীদের ড্রাইভিং শেখানোর পাশাপাশি কারাতে ও অন্যান্য আত্মরক্ষার পদ্ধতিও শেখানো হবে। প্রশিক্ষণ ব্যয় হবে বৎসরে এক হাজার কোটি টাকার অনধিক কিন্তু প্রশিক্ষণ আয় বৎসরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হওয়া সম্ভব।

নারীদের বিদেশে ডাইভিংয়ে কর্মসংস্থান সম্ভব। বিশেষত, মুসলিম দেশসমূহ হবে অতিরিক্ত আকর্ষণ। স্মরণযোগ্য, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৯৮২ সালে প্রথম নারী ডাইভিং শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছিল। সালেহা বাংলাদেশের প্রথম প্রফেশনাল নারী ড্রাইভার, তার মেয়ে আজ ম্যাজিস্ট্রেট-স্ত্রী, নিজে ইউনিসেফের ড্রাইভার, আমার চেয়ে বেশি আয় করেন। অপর নারী ড্রাইভার রেখা আখতার সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রধান ক্রিশিয়ান ওয়ালিসের ড্রাইভার ও সহকর্মী, ইংরেজি শিখেছিলেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র তিন মাসে, অপূর্ব প্রতিভা দরিদ্রকন্যার। কেবল প্রয়োজন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের প্রশিক্ষণের জন্য দ্বার খুলে দেয়া।

ঙ) কোর্ট ফি বৃদ্ধি কোর্টে নৈরাজ্য কমাবে

কোর্টে নৈরাজ্য চলছে, লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। ন্যূনতম কোর্ট ফি উচিত হবে ৫০০০ টাকা, তিনবারের অতিরিক্ত প্রতিবার সময় প্রার্থনার জন্য বাধ্যতামূলক ফি হবে ৫০০০ টাকা, শাস্তিমূলক কোর্ট ফি জমা দেবার পর নতুন তারিখ পাবেন। এক বৎসরের মধ্যে সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে প্রতিবার ১০,০০০ টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সরকার পাবেন ৫০% এবং প্রতিপক্ষ পাবেন ৫০%। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত মামলা কমবে।

ফৌজদারি মানহানি মামলার ন্যূনতম কোর্ট ফি হবে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা। সিভিল মানহানি মামলার কোর্ট ফি হবে দাবি অনুসারে, যত বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন তত বেশি কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। তবে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকার কম দাবি করা চলবে না, অগ্রীম কোর্ট ফি জমা না দিলে পুলিশ মামলা লিপিবদ্ধ করবে না। অভিযোগকারী হারলে সব টাকা হারাবেন। ঠুনকো মান-অভিমানের অবকাশ নেই। অযথা হয়রানি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেবল মাত্র মানহানি মামলার কোর্ট ফি জমা দেবার পর থানা মামলা লিপিবদ্ধ করবে, তৎপূর্বে নয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হারলে মামলাকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ন্যূনতম এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ও ক্ষমা চাইতে বাধ্য থাকবেন। কোর্ট ক্ষতিপূরণের ৫০% পাবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি পাবেন ৫০%।

হাইকোর্টের বিভিন্ন ছুটি হ্রাস মামলার জট কমানোতে সহায়ক হবে। সুপ্রিম কোর্টে (৫) পাঁচটি স্থায়ী বেঞ্চ সৃষ্টি সময়ের দাবি। এগুলো হলো- (১) ক্রিমিনাল, (২) সিভিল (৩) শ্রমিক অধিকার ও কোম্পানি বিষয়ক, (৪) সংবিধান ও মৌলিক অধিকার এবং (৫) নারী নির্যাতন নিবারণ, নারী অধিকার ও পারিবারিক সমস্যা নিরসন। ন্যূনতম ২-৩ জন স্থায়ী বিচারপতি একত্রে বেঞ্চ পরিচালনা করবেন। প্রধান বিচারপতি সরকারি হস্তক্ষেপে স্থায়ী বেঞ্চের বিচারপতি বদলাতে পারবেন না। এতে ‘খয়ের খাঁ’ প্রধান বিচারপতির ওপর জনগণের অনাস্থার প্রকাশ বাড়ায়। বিভিন্ন (রিভিউ) মামলায় প্রত্যেক স্থায়ী বেঞ্চের প্রধানরা অংশ নেবেন কমপক্ষে বছরে ১২ বার। সুপ্রিম কোর্টে ন্যূনতম ১৮ জন সিনিয়র বিচারপতির নিয়োগ হবে যুক্তিসঙ্গত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কমপক্ষে ১/৩ অংশ হবেন মহিলা বিচারপতি। হাইকোর্টের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ন্যূনতম ১০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন। ২২২ কোটি নয়, এটা অত্যন্ত অপ্রতুল।

সুপ্রিম কোর্ট ও তার ৫টি স্থায়ী বেঞ্চের অবস্থান হবে কেন্দ্রীয় রাজধানী ঢাকায় এবং ৬৪ হাইকোর্ট বসবে স্ব স্ব জেলা স্টেটে। দ্রুত ন্যয় বিচার নিশ্চিত করনই হবে মূল লক্ষ্য।

চ) কয়েকটি শুল্ক বৈষম্য ও ছাপার ভূত

স্বাস্থ্যের জন্য অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর সকল প্রকার মিনারেল ওয়াটার, বিয়ার, স্কচ, স্পিরিট, ইথাইল অ্যালকোহল, এক্সটাক্ট, এসেন্স, চিনি, লবন, চুরুট, রিকনসটি উটেড তামাক, টেস্টিং সল্টস, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, রোস্টেড কফি, নন অ্যালকোহলিক এনার্জি ড্রিংকসের শুল্ক বাড়িয়ে ২৫% থেকে ১০০%-এ উন্নীত করা হবে যৌক্তিক কাজ। রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি হবে এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, স্থূলতা কমবে, উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র সম্ভাবনাও কমবে।

ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ওপর কয়েক ধরনের শুল্কহার আছে। অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য দুটো দর- সকল পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন ও ক্লোরামফেনিকল ০%, এজিত্রিমাইসিন ও ইরিত্রোমাইসিনে ১৫% অযৌক্তিক। সকল অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য একটি শুল্কদর থাকা বাঞ্ছনীয় যাতে কাস্টমস হাউজে দুর্নীতি না হয়।

সকল ঘুমের ওষুধ, ভিটামিনস, ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধ, অ্যান্টিম্যালেরিয়া, অ্যান্টিযক্ষা, অ্যান্টিকুষ্ট, হৃদরোগ নিবারক, অ্যান্টিসেপটিক, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ ও দ্রব্যাদি, এন্টিসেরা ও ব্লাড ফ্রাকসন, হেপাটাইটিস সি এর ওষুধ, থালাসোমিয়া ওষুধ, মানুষ ও প্রাণির ভ্যাকসিন, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু নির্ণয় কিট প্রভৃতির আমদানি শুল্ক ০%, তবে কুইনাইন, কেফিন, ইফিড্রিন, কেটামিন, বিভিন্ন আবেদনকারী এনাসথেটিকস, মাদকাসক্তি, প্রভৃতির আমদানি শুল্ক রয়েছে ৫% যা ২৫% হওয়া উচিত। প্রসব পদ্ধতি স্বাভাবিক ও নিরাপদ রাখার জন্য আরগোমেট্রিনের ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত এবং শুল্ক ০% হওয়া উচিত।

সকল ঘুমের ওষুধের শুল্ক ০% এর পরিবর্তে ২৫% হওয়া বাঞ্ছনীয়, স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে। ডায়াগনস্টিক রিএজেন্টস, ব্লাডগ্রুপ রিএজেন্টস, অ্যান্টিসেরা, জীবাণুমুক্ত স্টেরাইল গজ, সুচার, এডহেসিভ ড্রেসিংয়ের একই দর হওয়া উচিত। ৫% বা ১০%। ভিন্ন ভিন্ন দর ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়রানি ও দুর্নীতি সৃষ্টি করে। ডেন্টাল ক্লিনিকের বেলায়ও আমার মতে, দুটো দরই যথেষ্ট ০% ও ১০%। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল প্রকার এনার্জি ড্রিংকসের জন্য শুল্ক ১০০% বাঞ্ছনীয়। অন্য কয়েকটি অসঙ্গতি ইসিজি, আলট্রাসনিক যন্ত্রপতির ট্যাক্স ১% কিন্তু রোগী মনিটরের শুল্ক ৫%। খালি প্রিফিল্ড ইনজেকশন শুল্ক, ইউভি কেনুলা, ফিডিং টিউব, ফিস্টুলা নিউল, ড্রেনেজ ব্যাগ, স্ক্যালপভেইন, সাকসন ক্যাথেটারে ১০% শুল্ক কিন্তু ইনসুলিন কার্টিজে শুল্ক ০%। উভয় ক্ষেত্রে ০% বা ৫% দরে শুল্ক স্থির করা যৌক্তিক কাজ হবে, হিয়ারিং এইডস ও পেসমেকারস, হার্ট ভালব, মেডিসিন ছাড়া বা মেডিসিনযুক্ত করোনারি স্ট্যান্টের শুল্ক ০%। কিন্তু স্ট্যান্ট চার্জ এখনও খুব বেশি, ২৫,০০০ টাকা থেকে ১৫০,০০০ টাকা।

দুর্নীতির খাঁচার মুখের কোনো প্রহরীও দুর্নীতির জন্য দায়ী? কি চিকিৎসক না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, না স্ট্যান্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, আলাদাভাবে বা সম্মিলিত ভাবে? সকল মেডিকেল যন্ত্রপতির শুল্ক করে ১% সীমিত করলে আপত্তির কারণ থাকবে না। ইনফিউশান ২৫% এবং ইসিজি পেপারে ১০% শুল্ক ভুল সিদ্ধান্ত। একই হার যুক্তিসঙ্গত। দেশে কাঁচামাল উৎপাদিত হলে আমদানি পুরো বন্ধ, রফতানির নামেও নয়, রফতানির জন্য ন্যূনতম আমদানি শুল্ক ২৫% হওয়া বাঞ্ছনীয়। সকল মেডিকেল যন্ত্রপাতির ট্যাক্স ১% সীমিত থাকবে।

বিদেশি ক্যালেন্ডার ও আকর্ষণীয় অভিনন্দন কার্ডের শুল্ক ২৫% এর পরিবর্তে ১০০% ধার্য করুন। বিলাসিতার একটা মূল্য তো দিতে হবে।

এয়ারক্রাফট, এরোপ্লেন ০% শুল্ক কিন্তু বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি, আর্মার্ড ভেহিকল, এয়ার কমব্যাট সিমুলেটরস ৫% শুল্ক, বেলুন গ্লাইডারসে ১০%। সেইলবোট, ইয়াটে ২৫% শুল্ক যথেষ্ট নয়, ১০০% হওয়া বাঞ্ছনীয়। মোটরসাইকেলে ২৫% শুল্ক যুক্তিসঙ্গত।

আমদানি শুল্কের কারণে ওষুধের মূল্য বাড়ে না, বাড়ে ওষুধ কোম্পানির অতিরিক্ত লোভ-লালসা ও প্রতারণার অভ্যাসের দরুন। সরকারের সাথে অনৈতিক বন্ধুত্বের কারণে। ১৯৮২ সনে জাতীয় ওষুধনীতির মূল্য নির্ধারণ নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ না করলে ওষুধের খুচরামূল্য কমবে না। ক্রমাগত দাম বাড়াবে ওষুধ প্রস্তুত কোম্পানিরা, সঙ্গে বাড়বে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের ব্যাপক সরবরাহ, যার ভারে সঠিক গুনের ওষুধ চাপা পড়ে যায়। ওষুধ কোম্পানির নিয়ন্ত্রিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি জনগণকে প্রতারণার সামিল, অবশ্যই তা বন্ধ হওয়া উচিত।

ইন্ডিকেটিভ প্রাইস (Indicative Price) পদ্ধতি শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সনে খালেদা জিয়ার শাসন আমলে বেক্সিমকোপ্রধান সালমান এফ রহমানের প্ররোচনায়। পদ্ধতিটি শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও বহাল আছে এবং দরবেশ সালমান এফ রহমান এমপি বর্তমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা। একই বিষয়ে দুই নিয়ম চলতে পারে না, কেবল বহাল থাকবে জাতীয় ওষুধনীতি-১৯৮২ সনের MRP (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) নির্ধারণ পদ্ধতি। বিষয়টি কোর্টে উঠালে সরকার হারবে।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার ১১৬ ও ১১৯ পৃষ্ঠায় ২০২০-২১ বরাদ্দে কিছু ভিন্নতা ছাপা হয়েছে। ছাপার ভূত ভর করেছে।

উপসংহার : শেখ মুজিবরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং করোনার সাথে যুদ্ধব্যয়ে অনতিবিলম্বে করণীয় বিষয়সমূহ

১. গভর্নর নিয়োগ ও সংবিধান সংস্কার : ৬৪ জেলা স্টেট কমিশন ও গভর্নর নিয়োগ এবং ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে শেখ মুজিবরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করুন।

২. খাদ্য নিরাপত্তা : ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে ৬ মাস ফ্রি মাসিক খাদ্যরেশন সুবিধা দিন যাতে প্রতি পরিবারের জন্য ব্যয় হবে ২০০০ টাকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ২০০ টাকা অনধিক এবং শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রসূতির ডিম, দুধ খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা ক্যাশ সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রত্যেক বাড়িতে সবজি বাগান সৃষ্টিতে সহযোগিতা প্রদান।

৩. সঠিক নিবন্ধন : দুর্নীতি থেকে উত্তরণ, গবেষণা ও তদারকির জন্য বিআইডিএস (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুদান প্রদান।

৪. কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ : ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তা সৃষ্টির পাশাপাশি রফতানিও সম্ভব। বেসরকারি খাতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, ডেইরি ও পোল্ট্রির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুদবিহীন ব্যাপক সরকারি বিনিয়োগ তদাররি করবে এনজিও-রা। সময়মতো ঋণ পৌঁছানোর জন্য বিআইডিএস ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তদারকি করবে, সঠিক চিত্র প্রকাশ করবে।

এনজিও-রা সময় ও ঋণদান কর্মসূচি ভালোভাবে পরিচালনার জন্য পাবে ২৫%, শস্য উৎপাদিত ও আহরণের ছয় মাস পর আদায় হবে টাকা। কৃষকের ওপর কোনো সুদ বর্তাবে না।

এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।