পবিত্র লাইলাতুল কদরের প্রার্থনা
বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কালে আশার আলো হিসেবে এবার এসেছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী। লাইলাতুল কদরে আল্লাহপাক মানবজাতির পথপ্রদর্শনকারী কিতাব পবিত্র আল কোরআনকে লওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য নাজিল করেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয় দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে। পবিত্র কোরআন নাজিলের শুভ সূচনার রাতকে আল্লাহতায়ালা মহিমান্বিত রাত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আল্লাহপাক বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে। হে মুহম্মদ, তোমার কি জানা আছে কদরের রাত কী? কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত।’ মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষভাগে পবিত্র লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’
হাদিসের ভাষ্যমতে, রমজান মাসের শেষাংশের যেকোনো বিজোড় রাত অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯-এর মধ্যে যেকোনো রাতই লাইলাতুল কদর। এ জন্য রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফের বিধান রাখা হয়েছে যাতে ইতেকাফকারীরা সহজেই লাইলাতুল কদর পেতে পারে এবং এর ফজিলত লাভ করতে পারে।
আলেম সমাজের অধিকাংশের মতে, ২৭ রমজানের রাতই পবিত্র লালাইতুল কদর। আমাদের দেশে ২৭ রমজানের রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে গণ্য, মান্য ও পালন করা হয়। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে রাতটি পালিত হয়। রাতভর নামাজ, দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকার পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাতটি অতিবাহিত করে। এ বিশেষ রাতে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
লাইলাতুল বরাত ও লাইলাতুল পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে, কদরের রাতে আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতারা হজরত জিবরাইলের (আ.) নেতৃত্বে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল মানুষের প্রতি সালাম ও বিশেষ বার্তা প্রদান করেন। আল্লাহপাক বলেছেন, ‘ফেরেশতারা জিবরাইলের নেতৃত্বে এই রাতে পৃথিবীতে নেমে আসে এবং ফজর পর্যন্ত শান্তির বার্তা বিতরণ করে।’
বিশ্বময় যে অশান্তি ও হানাহানি বিরাজ করছে তাতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই বিবেচনায় আজকের রাতটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সহজেই অনুমেয়। শান্তি প্রদানের মালিক আল্লাহপাক। তিনি আজ রাতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে শান্তির বার্তা বিতরণ করবেন। এই সুযোগ বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক বিশেষ ও বিরল সুযোগ। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা এ রাত অতিবাহিত করেন ক্ষমা প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনা করে।
উল্লেখ্য, এ রাত ছাড়া শাতায়ু মানুষের পক্ষেও এত ফজিলত আর কোনো কিছুর মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মুসলমানের উচিত, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করা।
পবিত্র কোরআন নাজিলের এ মাসকে আল্লাহপাক রোজার মাস হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ মুত্তাকিদের পথপ্রদর্শক হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আর রোজাকে তাকওয়া অর্জনের উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বস্তুত, তাকওয়া অর্জনকারীকেই মুত্তাকি হিসেবে অবিহিত করা হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরআন ও রোজার লক্ষ্য অভিন্ন; মানুষকে মুত্তাকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আল্লাহর করুণা ও নৈকট্য অর্জনের অধিকারী করা। রোজা হলো মুত্তাকি হওয়ার প্রশিক্ষণ। আর মুত্তাকির জীবনবিধান হলো পবিত্র আল কোরআন। পরহেজগার মানুষই আল্লাহপাকের নৈকট্য ও করুণা লাভ করতে পারে।
মাহে রমজানে যারা রোজা রেখেছেন, ইবাদত বন্দেগি করেছেন, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি লাভ করুক এটাই কাম্য। বিশ্ব মুসলিমের জন্য সার্বিক উন্নয়ন, কল্যাণ ও মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন, আজকের রাতে এটা একটি বড় প্রত্যাশা। করোনাকালে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন আমাদের সকলকে তার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন, এটাই প্রার্থনা।
এইচআর/বিএ/জেআইএম