শপিং, সেলুন ও পার্লারে সতর্কতা জরুরি

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ১৯ মে ২০২০

মায়মুনা লীনা

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শুরু করা লকডাউন প্রায় দুই মাস পর শিথিল করা হয়েছে। পরিস্থিতির কোনো আশানুরূপ উন্নতি না হলেও প্রয়োজনীয় এই শিথিলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সংক্রমণের ধারা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার এই সময়কালে বিধিনিষেধে শিথিলতাকে অনিরাপদ বলে ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।

হয়তো অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শপিংমল, মার্কেট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। অনেকেই ধারণা করছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ‘পিক টাইমে’ এমন সিদ্ধান্ত হীতে বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক বা যেদিকে যাক, ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা ও সতর্কতা আমাদেরকে এই ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে। সে জন্য নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে।

ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল বা মার্কেটে কমবেশি জনসমাগম লক্ষ করা যাচ্ছে। ক্রেতা বা দর্শণার্থীরা আসা-যাওয়া শুরু করেছেন সরকারি নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর থেকে। স্বাস্থ্যনির্দেশিকা মানছেন না তারা। করোনার মতো মহামারিকালে আতঙ্কের মাঝেও মানুষের একাংশ ঈদ আনন্দকে উদযাপন করার জন্য কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম সতর্কতা লক্ষ করা যাচ্ছে না ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ক্ষেত্রে। কোনো পক্ষই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেকে মাস্ক পরছেন না। স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে না সব মল বা মার্কেটে।

ক্রেতা বা মার্কেটে আগমনকারীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে বা গায়ে গা লাগিয়ে মল-মার্কেটে ঘুরছেন। বিক্রেতাদের অবস্থাও সে রকম। দোকানগুলোতে দাঁড়ানের জন্য বৃত্ত বা চারকোণাযুক্ত সাইন দেয়া থাকলেও সেগুলোর দিকে নজর নেই কারও। কে কার আগে তার কাজটি সারবেন তা নিয়ে ব্যস্ত। পণ্য দেখাদেখির ক্ষেত্রে নেই কোনো স্বাস্থ্যনিরাপত্তার ব্যবস্থা।

লোকদেখানো বা প্রশাসনের ভয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা সার্বক্ষণিক কার্যকর নয়। যার যেমন খুশি আসছে-যাচ্ছে। কাপড়, জুতা বা পণ্য ঘাটাঘাটি করছে, পছন্দ হলে কিনছে না হলে চলে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। বাণিজ্যিক বিষয়টি মাথায় রেখে শপিংমল বা মার্কেট খোলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে এবং কঠোরতার সঙ্গে মানা হলে আমারা অনেক নিরাপদ থাকতাম। কিন্তু এ নিয়ে সবার মাঝে ঢিলেঢালা ভাব।

রাজধানীসহ সারাদেশে লাখ লাখ সেলুন ও পার্লার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কয়েক লাখ কর্মী। শিথিলতার সূত্র ধরে ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সেলুন এবং পার্লার খোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহণকারীরা যেতে শুরু করেছেন তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টরা কতটা সক্রিয় সেটা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সেলুনে ব্যবহৃত কাঁচি-ব্লেড বা ক্ষুর বসার চেয়ার বা টুল করোনাসংক্রমণমুক্ত কিনা সেটা আমরা জানি না। পার্লারগুলোতেও কর্মরতরা বা সৌন্দর্যচর্চার জন্য ব্যবহৃত সামগ্রী করোনামুক্ত কিনা সেটাও অজানা। কর্মরত নরসুন্দর, সৌন্দর্যচর্চায় যুক্ত কর্মী বা সেলুন-পার্লারে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কে করোনাযুক্ত বা কে করোনামুক্ত সেটা নিশ্চিত হওয়া কঠিন বলে এসব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বা এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যক্তিসচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধু রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজস্ব ব্যবস্থায় সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। আমরা শপিং বা সৌন্দর্যচর্চা যাই করি না কেন, অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজে গেলে মাস্ক ব্যবহার অব্যাহত রাখতে পারি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়মিত ব্যবহার বা একটু পরপর হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে পারি। দোকানে-সেলুনে-পার্লারে অথবা প্রয়োজনীয় যে প্রতিষ্ঠানে যাব তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

শপিং করতে গিয়ে নিজে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অন্যকেও উৎসাহিত করতে হবে। সেলুন বা পার্লারে প্রত্যেক সেবাগ্রহীতার বিদায়ের পর নির্দিষ্ট আসনটি জীবাণুনাশক ছিটানো, নরসুন্দর বা সৌন্দর্যচর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তিটি সঠিকভাবে জীবাণু প্রতিরোধী পোশাক পরিধান, জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং প্রতিটি কাজের পর জীবাণুনাশকের মাধ্যমে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বা সামগ্রী ঝুঁকিমুক্ত করা হলো কিনা সেটি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

আমরা যদি সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাই তাহলে করোনা মহামারি আমাদের সহজে কাবু করতে পারবে না। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অন্য কেউ নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করলে তা প্রতিরোধ করতে হবে। সবার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার এই তো সময়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে ও নিরাপত্তা প্রশ্নে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাসা, অফিস. শপিংমল, মার্কেট, বাজার, হোটেল-রেস্টুরেন্ট যেখানেই যাই, অথবা রাস্তায় চলাচলের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আমরাই পারব আমাদের নিরাপদ রাখতে। আসুন আমরা সবাই মিলে স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্রিয় হয়ে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে-পরিবারকে, সমাজ ও রাষ্ট্রকে মুক্ত করি।

লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক যায়যায়দিন।

এইচআর/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।