মালয়েশিয়া পারলে আমরা কেন পারছি না

রফিক আহমদ খান
রফিক আহমদ খান রফিক আহমদ খান , মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১৫ মে ২০২০

করোনাকালের ঈদে ঈদ-শপিং না করে আমার মতো কোটি মানুষ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন করোনার প্রাদুর্ভাব কমে গিয়ে সুদিনের আশায়। লাখ লাখ পরিবারের ঈদের কেনাকাটা করার মতো যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও খোলা থাকা মার্কেটগুলোতে যাচ্ছেন না। তারা তাদের পরিবারের বড়দের পাশাপাশি ছোট্ট শিশুকিশোরদেরও বোঝাচ্ছেন এই ঈদে নতুন জামাকাপড় না-কিনে আগের যা আছে তা-ই পরতে হবে। বাচ্চারা মেনে নিচ্ছে।

আমাদের যৌথ পরিবারের ছয় শিশুকেও আমরা বলেছি, বুঝিয়েছি এবার ঈদে কারও জন্য শপিং করা হবে না। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে হলে মার্কেটে যাওয়া যাবে না। তারাও এখনও পর্যন্ত বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা।

এখন আমি ভাবছি ঈদের দিন আশপাশের অধিকাংশ শিশুকিশোর যদি নতুন জামাকাপড় পরে তখন আমাদের ঘরের শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করবে কিনা। কারণ আশপাশের অনেকেই ঈদ-শপিং করায় ব্যস্ত দেখতে পাচ্ছি।

পায়ের স্যান্ডেল কেনার জন্য আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারে ওয়ান মাবিয়া সিটি সেন্টার নামে একটা মার্কেটে গিয়ে যে ভিড় দেখলাম, আমি হতভম্ব হয়ে রইলাম। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। ক্রেতাদের অধিকাংশ নারী, সাথে শিশুকিশোরও। এমনকি কোলের শিশু, দুধের শিশুও আছে। ধুমধামে কিনছে ঈদের পোশাক। আমার বাড়ির আশপাশের কয়েকজন নারীকেও দেখছি।

আহারে তাদের কত বুঝিয়েছি! এবার ঈদের কেনাকাটার প্রয়োজন নেই। এবার ঈদে নতুন জামাকাপড় পরে বেড়াবেড়ি-ঘোরাঘুরি হবে না। যার যা আছে তা-ই পরব। তাহলেই আমরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারব। পরিবারের সদস্যদেরও ভালো রাখতে পারব। বেঁচে থাকলে সুস্থ থাকলে নতুন জামাকাপড় পরেও পরা যাবে। ঈদও আরও আসবে। তাদের সচেতন করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি, তা বুঝতে পারলাম মার্কেটে অবস্থা দেখে।

সরকার যতই বলুক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা, এখানে স্বাস্থ্যবিধি বলতে মার্কেটের পক্ষ থেকে যা আয়োজন থাকে তা-ই। ক্রেতারা মোটেই সচেতন নয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে। বরং এসব ক্রেতা আমরা যারা মার্কেটে যাচ্ছি না তাদের ভীতুর ডিম মনে করছে।

মনে মনে ওরা আফসোস করে আমাদের জন্য, ‘লোকগুলো কী? সামান্য করোনাকে কত ভয় করছে’। আর আমরা আফসোস করছি ওদের জন্যই করোনা ছড়িয়ে পড়বে সব জায়গায়। যারা মার্কেটে গিয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করছে তারা তো আপনার আমার আশপাশের লোক। আমাদেরই প্রতিবেশী। যেভাবেই হোক ওদের ছোঁয়া তো লাগছেই আমার কোনো না কোনোভাবে। সে জন্য প্রার্থনা করি এই অবুঝদের জন্যও। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুক, সুস্থ রাখুক।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ‘আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে’। মানে আমার সুরক্ষা আমার হাতে। কিন্তু, আমি বলব, ‘আমার সুরক্ষা শুধু আমার হাতে নয়, আমার সুরক্ষা আমার প্রতিবেশীর হাতেও’। প্রতিবেশীকে সচেতন করতে না পারলে কারোরই সুরক্ষা নেই। প্রতিবেশী যদি করোনা এখানে (যার যার এলাকায়) নেই ভাব নিয়ে চলে তাহলে দেখে কেমন লাগে তা ভুক্তভোগীরা জানেন।

আমরা বলি করোনাভাইরাস, প্রতিবেশী বলে ‘করোনা-ফরোনা’। মানে একটা তাচ্ছিল্য ভাব। যা দেখে-শুনে প্রতিটা সচেতন নাগরিকের কষ্ট লাগে। নিজের প্রতিবেশীকে সচেতন করতে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট।

অথচ, মালয়েশিয়ার অন্যতম বড় শপিংমল বারজায়া টাইমস্কয়ারে আমার ছোট ভাই নাছিরেরসহ অনেক বাংলাদেশির দোকান গত চার মে থেকে খুললেও এখনও দিনে পাঁচ-দশটা কাস্টমার পান না। মানে সে দেশে মার্কেট খুলেছে ঠিকই, কিন্তু ক্রেতা নেই। সে দেশে অন্যান্য মার্কেটেও ক্রেতা নেই জেনেছি খবর নিয়ে।

উল্লেখ করছি, মালয়েশিয়াও মুসলিম প্রধান দেশ। সে দেশেও ঈদুল ফিতর বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। করোনাকালের এই ঈদ তারাও পালন করবে নতুন জামাকাপড় ছাড়া।

লেখক: মালয়েশিয়া প্রবাসী কলাম লেখক

এইচআর/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।