ভিআইপিদের হাসপাতাল!

প্রভাষ আমিন
প্রভাষ আমিন প্রভাষ আমিন , হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ
প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ০৪ মে ২০২০

গত সপ্তাহে এই কলামে ‘মৃত্যুতেও বৈষম্য!’ শিরোনামে ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতালের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছিলাম। তবে তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতালের খবরটি সঠিক নয়, দাবি করায়, সেটি নিয়ে আর বিস্তারিত লিখিনি। আর এ নিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণাও ছিল না। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করে আমি মেনেই নিয়েছিলাম, ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের ছিলই না। কিন্তু তাও খটকাটা যাচ্ছিলই না। কোনো পরিকল্পনা যদি নাই থাকবে তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান কিসের ভিত্তিতে ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল এবং বিত্তশালীদের জন্য তিনটি হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে গণমাধ্যমে কথা বললেন।

যেহেতু স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এই খবর সঠিক নয়। তাই আমি ধরেই নিয়েছিলাম সাংবাদিকদের বেঠিক খবর দেয়ার দায়ে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ করোনার দুর্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রমাণ করেছে, তাদের ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিন্তু তারা কিল মারার গোসাই। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থা লেজে গোবরে হলেও, কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে তারা দারুণ সক্রিয়। এন-৯৫ কেলেঙ্কারি ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু এই ভুয়া এন-৯৫ মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে ডাক্তারদের বদলি করতে এক মুহূর্তও দেরি হয় না। স্বাস্থ্যব্যবস্থার মান নিয়ে ফেসবুকে কিছু লিখলে মুহূর্তেই শোকজ পৌঁছে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চুরি করবে, কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলায় কোনো ব্যবস্থাই নেবে না, কিন্তু সেটা বলা যাবে না। কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। খালি বলতে হবে, ‘চমৎকার, চমৎকার; হুজুরের মতে অমত কার?’ প্রশ্নেই যেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দারুণ অ্যালার্জি। এই অবস্থা দেখে আমার একটি গান মনে পড়েছে। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গান, ‘বাচ্চারা কেউ ঝামেলা করো না/উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করো না/চুপচাপ বসে থাকো/বসে আঁক, বসে আঁক...।

বলছিলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের কথা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি সঠিক হলে, ভিআইপিদের হাসপাতালের বিষয়ে গণমাধ্যমে বেঠিক খবর দেয়ার দায়ে এই অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যি বলছেন, নয় অতিরিক্ত সচিব সত্য বলছেন। দুজন তো একসাথে সত্য বলতে পারেন না। একটু দেরিতে হলেও আমার খটকাটাই সত্য হয়েছে, ভিআইপি হাসপাতাল নিয়ে অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানই সত্য কথা বলেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসত্য কথা বলেছেন, এটা আমি বলছি না। আমার ধারণা ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতালের বিষয়টি তিনি জানতেনই না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে অনেক কিছুই জানেন না, এটা কিন্তু তিনি বারবার মিডিয়ার সামনে স্বীকারও করেছেন। করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি জানেনই না, কখন গার্মেন্টস খোলে, কখন ইফতারের দোকান খোলে। এই না জানাকে আমি অবশ্য তার দোষ হিসেবে বলছি না। তাকে জানানো না হলে তিনি জানবেন কীভাবে? তিনি যে অনেক আগেই ঠুটো জগন্নাথ হয়ে গেছেন, এটা তিনি নিজে না বুঝলেও সবাই বুঝে গেছে।

হাবিবুর রহমান মিথ্যা বলেননি। তবে বোকামি করেছেন। আগেভাগে একটি গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন। এখন সরকার যে ভাত সরাসরি খেতে পারত, সেটা এখন মাখার পেছন দিয়ে হাতি ঘুরিয়ে খেতে হবে। প্রথমে একটু হাবিবুর রহমানের বরাত দিয়ে সরকারের মূল পরিকল্পনাটা জেনে আসি। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে আাগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালটিকে ভিআইপিদের জন্য নির্ধারিত করতে চেয়েছিল। এই হাসপাতাল নিয়ে হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘প্রথমে শুধু বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য এ ধরনের একটি হাসপাতালের কথা ভাবা হয়েছিল। আমাদের কাছে বারবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ এসেছিল যদি কোনো কূটনীতিক বাংলাদেশে অবস্থানরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদের কোথায় নেয়া যায়? এ জন্য গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালটা (শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল) নির্ধারণ করা আছে। পরে আমরা চিন্তা করেছি এটাও হতে পারে যে সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক আক্রান্ত হলো, তাদেরও ওখানে নেয়া যেতে পারে।’

ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতালের পরিকল্পনা নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোনোভাবে ‘সঠিক নয়’ বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করলেন বটে। তবে সেটা যে কার্যকর নয়, তা বুঝতে বড় বিজ্ঞানী হতে হয় না। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট শুরু থেকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারিত। হাসপাতালটিতে ১৫৪ বেড আছে। এর মধ্যে ১২০টি ওয়ার্ডভিত্তিক আইসোলেশন বেড, ২০টি কেবিন এবং ১৪টি আইসিইউ। হাসপাতালটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু এই আকালেও সেখানে একজনও রোগী ভর্তি হয়নি। কারণ রোগী ভর্তি করার অনুমতি নেই তাদের। সেখানে ভর্তি হতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি নিজে গিয়ে ভর্তির চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বেশ কয়েকবার বিদেশি কূটনীতিকরা এসে হাসপাতালটি দেখেও গেছেন। তার মানে সমালোচনার ভয়ে প্রজ্ঞাপন হয়তো হবে না, কিন্তু শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট আসলে ‘ভিআইপি’দের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে। তবে সেই ভিআইপি কারা তা আপাতত জানা মুশকিল। প্রার্থনা করি করোনার ঝড় আমাদের মতো আমজনতার ওপর দিয়েই যাক, ভিআইপিরা সুস্থ থাকুন। শেখ রাসেল হাসপাতাল যেন কারও ব্যবহার করতে না হয়।

ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতালের কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি, হয়তো হবেও না। তবে বিত্তবানদের জন্য একটা কৌশলী ব্যবস্থা কিন্তু করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলুন আগে দেখে নেই হাবিবুর রহমান, বিত্তশালীদের হাসপাতালের পক্ষে কী যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘ভালো সচ্ছল পেশেন্ট আছে না? কথা উঠেছিল তারা কোথায় ভর্তি হতে পারে? সরকারিভাবে আমরা যা করছি, সেগুলো তো আপামর জনগণের জন্য। যে শতশত মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের জন্যে তো একটা ব্যবস্থা আছেই। কিন্তু ধরুন একজন প্রখ্যাত শিল্পপতি, উনি হয়তো করোনার চিকিৎসায় সরকারি যে ব্যবস্থাপনাগুলো আছে, এগুলোতো সাধারণ মানের, সেখানে যেতে উনি ইতস্তত করলেন। তো উনি এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল), ইউনাইটেড বা স্কয়ারে গেলে যেন চিকিৎসা পায়। তারা টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাবেন। তবে এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে আগে রাজি হতে হবে।’

তিনি তখনই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন এভারকেয়ার, ইউনাইটেড বা স্কয়ারের সাথে যাতে একটা বোঝাপড়ায় আসা যায়, তা নিয়ে সরকারের কথাবার্তা চলছে। সরকার আলাপ করছে যাতে পুরো হাসপাতাল অথবা হাসপাতালের একটা ইউনিট করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকার চাইলে কোন হাসপাতালের সাধ্যি আছে তা অস্বীকার করে। সরকারের সাথে নিশ্চয়ই সফল বোঝাপড়া হয়েছে। যদিও সরকারি আদেশে সরাসরি চিকিৎসার কথা লেখা হয়নি। বলা হয়েছে, এই তিন হাসপাতালে করোনার টেস্ট করা যাবে। টাকা লাগবে সাড়ে তিন হাজার। শুনে নিশ্চয়ই আপনি খুব খুশি হয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার জন্য বিএসএমএমইউয়ের সামনে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর কোনো মানেই হয় না। যাব আর টেস্ট করে চলে আসব। আরে ভাই আপনি কি ভিআইপি? আপনি কি বিত্তশালী? না হলে আপনার আশার গুঁড়ে একবস্তা বালি। শুভঙ্করের ফাঁকিটা এবার আপনি টের পাবেন। হাসপাতালের নামে এই তিন ফাইভ স্টার হোটেলের লবিতে মানে আউটডোরে এই টেস্ট করা যাবে না। শুধু ভর্তি রোগীরাই এই সুবিধা পাবেন। ব্যস, আপনি আশা ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে বিএসএমএমইউয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ুন। নইলে আইইডিসিআরের হটলাইনের নম্বর টিপতে টিপতে আঙুল ক্ষয় করে ফেলুন।

এবার আসুন দেখে নেই, কোন কৌশলে এই তিনটি হাসপাতালকে বিত্তশালীদের জন্য কোভিড-১৯ হাসপাতাল বানানো হয়েছে। আউটডোরে করোনা টেস্ট করা হবে না, ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে করা হবে। তার মানে হলো, করোনার লক্ষণ নিয়ে কেউ এই তিন দামি হাসপাতালে গেলে তাদের ভর্তি নেয়া হবে। যদি করোনা লক্ষণযুক্ত রোগী ভর্তি না করে, তাহলে টেস্টের প্রশ্নটি আসছে কীভাবে? কিন্তু সাধারণ প্রটোকল অনুযায়ী কোনো সাধারণ হাসপাতালে করোনার লক্ষণযুক্ত কাউকে ভর্তি করার কথা নয়। করোনার লক্ষণ দেখলে সব হাসপাতালই কুর্মিটোলা বা মুগদা বা কুয়েত মৈত্রীতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা। ভিআইপিদের ব্যবস্থা আগেই হয়েছে, এবার তাহলে বিত্তশালীদের একটা হিল্লে হলো, জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে এভারকেয়ার, ইউনাইটেড বা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে আর কোনো বাধা নেই। ভর্তি হয়েই টেস্ট করাবেন, মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা, একেবারে পানির দর। কিন্তু ভর্তি, কেবিন ভাড়া, ডাক্তারের ফি সব মিলিয়ে একটি টেস্টের খরচ কত দাঁড়াবে, একটু হিসাব করে দেখুন। ছেলেবেলায় পড়া সেই তিন পায়া কুকুরের একটা পায়ের পেছনে মাসিক খরচের সাথে পণ্ডিতের মাসের বেতনের তুলনাটা মনে পড়ে গেল। সত্যি একটা টেস্টের খরচে একটা পরিবারের কয়েক মাসের খরচ চলে যাবে।

হাসপাতালগুলো বলছে, টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী তথা গোটা হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে এখানে করোনার চিকিৎসা হবে না। চিকিৎসাই যদি না হবে তবে টেস্টের প্রসঙ্গ আসছে কেন? টেস্টের সুবিধা আছে মানেই, এখানে সন্দেহভাজন করোনারোগীর প্রবেশাধিকার আছে। কোনো লক্ষণ না থাকলে তো টেস্ট করার কথা না। তাই টেস্ট হাসপাতালকে নিরাপদ করবে না ঝুকি আরও বাড়াবে? আর টেস্ট যদি হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে তো বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই সেটা করা উচিত, শুধু অতিরিক্ত সচিব উল্লেখিত তিনটি হাসপাতালে কেন? ল্যাবএইড, গ্রিনলাইফ, স্পেশালাইজড, আজগর আলী বা ইমপালসের কি নিরাপত্তা দরকার নেই? আর নিরাপত্তাটাই যদি মূল ইস্যু হতো, তাহলে তো সেটা আউটডোরে হতো, সন্দেহভাজন রোগীকে ভর্তি করে করোনাভাইরাসকে হাসপাতালের ভেতরে টেনে নেয়ার ঝুঁকি নিতে হবে কেন? টেস্ট করে পজিটিভ আসলে নিশ্চয়ই বিত্তশালী কাউকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেবে না। অবশ্য এদের কোনো বিশ্বাস নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালে এক রোগীর পজেটিভ আসার খবরে তাকে ভেন্টিলেশন খুলে কুর্মিটোলায় পাঠিয়ে আসলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়া উচিত ছিল।

তবে তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। তবে এখনও তারা বলছে, করোনা পজিটিভ হলে তারা চিকিৎসা দেবে না। যেখানে চিকিৎসা দেবে না, সেখানে টেস্টের অনুমতি কেন দিতে হবে? বরং করোনা হাসপাতালে টেস্ট সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। আচ্ছা ধরুন, এই তিনটি হাসপাতালের কোনো একটিতে কোনো একজন ভর্তি রোগীর করোনা টেস্ট হলো। দুদিন পর তার রিপোর্ট পজিটিভ এলো। এখন হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু মাঝের দুদিন যে তিনি হাসপাতালে থাকলেন, তখন করোনা ছড়াবে না? আমার ধারণা, এই তিনটি হাসপাতালে বিত্তশালী করোনারোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রথম ধাপ এটি। মাথায় একটু বুদ্ধি থাকলে কোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশ ছাড়াই ভিআইপি ও বিত্তশালীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করে ফেলা সম্ভব। হাবিবুর রহমানের মতো মাথামোটা লোকেরাই সত্যি কথা ফাঁস করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে।

আসলেই ভাবুন, এতদিন যারা হাঁচিটা বাংলাদেশে দিলে কাশিটা দিতেন সিঙ্গাপুরে, তারা কি মুগদা হাসপাতালে থাকতে পারতেন? এবার উল্টো করে ভাবুন, করোনাভাইরাস বিশ্বে এক ধরনের সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। রাজা-উজির, ধনী-গরিব, মন্ত্রী-এমপি কাউকেই কিন্তু ছাড়েনি করোনা। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশেই হাসপাতাল আলাদা করা হয়নি। আমি ভেবেছিলাম, যদি কোনো ভিআইপি বা বিত্তশালী করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে তারা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অভিজ্ঞতা নেবেন। তাতে ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসতেও পারত। কিন্তু আমার আশাও পূরণ হলো না। করোনা এসে আমাদের সামাজিক দূরত্ব শিখিয়েছে; এবার আমরা চোখে আঙুল দিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দিলাম সামাজিক বৈষম্য কাকে বলে।

খালি একটা কথা বলি, এই বৈষম্যটা সংবিধানসম্মত নয়। অবশ্য দেশে কোন জিনিসটাই সংবিধান মেনে হচ্ছে। চিকিৎসাব্যবস্থা তো আর উড়ে আসেনি। এখানেই শুধু সংবিধান মানতে হবে, এমন দিব্যি কে দিয়েছে?

এইচআর/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।