আত্মহত্যাপ্রবণ জাতিকে বাঁচানোর সাধ্য কারও নাই
করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। অতি মূল্যবান আড়াই মাস সময় সরকার কোনো কাজে লাগায়নি। বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারি করেনি, এই সময়ে দেশে আসা প্রবাসীদের ডাটাবেজ করেনি, তাদের জন্য একটা যথাযথ কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়ে তোলেনি। সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি। সময়মতো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেনি। ছুটি দিলেও লকডাউন দেয়নি। ছুটি ঘোষণা করার পরও লাখ লাখ মানুষকে বাড়ি ফিরতে বাধা দেয়নি। বিজিএমইএর অবিমৃষ্যকারিতায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকায় এসেছে এবং ফিরে গেছে। মানুষের এই আসা-যাওয়াকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। করোনা পরীক্ষা করার সুবিধা দেশজুড়ে ছড়িয়ে না দিয়ে করোনাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য সরকার ভালো ব্যবস্থা করতে পারেনি। করোনা এসে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেউলিয়াত্মটা প্রকাশ করে দিয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কথা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু দেখেশুনে আমার মনে হয়েছে, ব্যবস্থাপনা থাকলে অব্যস্থাপনার প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশে আসলে স্বাস্থ্যখাতে কোনো ব্যবস্থাপনাই নেই। স্বাস্থ্যখাতে যেটা আছে, সেটা হলো অপরিসীম দুর্নীতি।
এমনকি এই করোনার দুঃসময়েও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতির খবর আসছে। করোনার রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। সংখ্যা আরও বাড়লে কী হবে আল্লাহই জানেন। করোনা রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য সবার আগে দরকার ভেন্টিলেটর আর আইসিইউ সাপোর্ট। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নেই এখনও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি একা কতটা পারবেন, সেটা নিয়েই চিন্তা।
সরকারের এই সমন্বয়হীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, অব্যবস্থাপনা নিয়ে আগেও লিখেছি। আমরা সবসময় সরকারের ভুল ধরিয়ে দিতে চাই, যাতে সরকার তা শুধরে নিতে পারে। কিন্তু শনিবার ফেসবুকে একটা ছবি দেখার পর আমার সকল রাগ-ক্ষোভ, ভুল-ত্রুটি, আবেগ-অনুভূতি শূন্য হয়ে যায়। সরকারের সমালোচনা করার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলেছি। আমি বুঝে যাই, সরকারের ব্যবস্থা নেয়া না নেয়ার সাথে করোনার বিস্তারের আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা নিজেরাই প্রতিদিন করোনা ছড়াচ্ছি। নিজেরা সচেতন না হয়ে শুধু সরকারকে গালি দিলে করোনা মুক্ত হওয়া
সম্ভব নয়।
যে ছবির কথা বলছিলাম, সে কথায় আসি। শুক্রবার সরাইলের নিজ বাড়িতে মারা যান খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী। শনিবার সকালে লকডাউন ভেঙে কয়েক লাখ মানুষ তার জানাজায় অংশ নেয়। বিশ্বজুড়ে যখন লকডাউন চলছে, তখন বাংলাদেশে একটি জানাজায় কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণ অবিশ্বাস্য। ফেসবুকে দেখে প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। সব দোষ মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে
দেয়ার একটা প্রবণতা আমাদের কারও কারও আছে। ভেবেছি, কোনো ফাইল ছবি ব্যবহার করে ইসলামকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ যা জানলাম, তা কল্পনার শক্তিকেও হার মানিয়েছে। টুকটাক লকডাউন ভাঙার ঘটনা বিশ্বের সব জায়গায়ই ঘটেছে। মানুষকে ঘরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে কারো জানাজায় লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ অবশ্যই বিশ্বরেকর্ড।
এই জানাজার ঘটনায় দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা, তীব্র শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেই দায়ী করছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে নানা ট্রলও হচ্ছে। নোয়াখালীর বদলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দেশ করার দাবি উঠেছে। অনেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে কমপ্লিট লকডাউন করে দেয়ার দাবি করেছেন। অনেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সব ডাক্তার-নার্সকে সরিয়ে আনার মতো নিষ্ঠুর দাবিও তুলেছেন। কিন্তু এইভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দোষ দেয়ার আগে আমাদের সমস্যার উৎসটা খুঁজে বের করতে হবে। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আজ কীভাবে সাম্প্রদায়িকতার আখড়ায় পরিণত হলো, তা খুঁজে বের করতে হবে। সেই কারণটা দূর করতে হবে, আপনার রাগ কমাতে গালি দিতে পারেন, তাতে লাভ নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন আজ সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালুর মজিদদের বিচরণক্ষেত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আজ শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি। শনিবার জানাযায় অংশগ্রহণকারীরা ধার্মিক নন, ধর্মের আগাছা।
তবে এটা মানতেই হবে হবে গোলাম আযমরা, আমিনীরা অনেক আগে থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শুভ উদ্যোগগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই তো নাসিরনগরে সাম্প্রদায়য়িক সহিংসতা হয়। সাম্প্রদায়িকতার আগুনে পুড়ে যায় সাংস্কৃতিক অঙ্গন। শুধু সাম্প্রদায়িকতার ঘটনাই নয়, এই লকডাউনের মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামবাসীদের মধ্যে অন্তত ২৫টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা মাস্ক পরে মারামারি করে, মারামারি শেষ করে হাত ধুয়ে ফেলে। আর টেঁটা-বল্লম নিয়ে নিয়ে মারামরি করে বলে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকে। হাস্যকর।
ধর্মের আগাছা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশি, তবে সারাদেশেই এই আগাছার চাষ হয়। করোনা আক্রমণের পর বাংলাদেশের মোল্লারা দিনের পর দিন অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে মানুষের মগজ ধোলাই করে রেখেছেন। বাংলাদেশে করোনা আসার পরও লক্ষ্মীপুরে করোনার মুক্তির জন্য লাখো মানুষের দোয়া হয়েছে। ‘করোনা আল্লাহর সৈনিক, নাসারাদের ধ্বংস করতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, করোনা মুসলমানদের ধরবে না, ধরলে কোরআন মিথ্যা হয়ে যাবে, মাস্ক না কিনে টুপি কিনলে করোনা দূরে থাকবে, করোনা বলেছে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নাই, করোনা বলে আসলে কিছু নাই, ইসলামে মহামারি বলে কিছু নাই, হায়াত-মউত-রিজিক আল্লাহর হাতে, রাখে আল্লাহ মারে কে’ দিনের পর দিন এমন ওয়াজ শুনতে হয়েছে আমাদের।
এখনও ইউটিউবে গেলে একাধিকবার করোনার সাক্ষাৎকার নেয়া, করোনার টিকার সূত্র আবিষ্কারকদের দেখা পাবেন। আপনি না হয় এইসব ওয়াজকে ফান হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশেরই লাখ লাখ মানুষ এই হুজুরদের কথার ওপর ভরসা রেখে নিশ্চিন্তের ঘুরে বেড়াচ্ছে। সৌদি আরবে মসজিদ তালা মারার পরও বাংলাদেশের মোল্লারা হুংকার ছেড়েছে, বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে যখন করল, তারপরও মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই। মসজিদে জামাত বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, বাজার খোলা কেন, ব্যাংক খোলা কেন? নিজের ভালো নাকি পাগলেও বোঝে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু সাম্প্রদায়িক লোকের ধর্মান্ধতা
পাগলামির সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, সবকিছু বন্ধ করে রাখার মধ্যে সরকারের কোনো স্বার্থ আছে। আর ঝুঁকি থাকলেও বাজার তো খোলা রাখতেই হবে। মসজিদ বন্ধ রাখলে ঘরে নামাজ আদায় করা যায়। কিন্তু বাজার বন্ধ করে দিলে মানুষ খাবে কী। তবে বাংলাদেশের মানুষের আচরণ দেখলে মনে হবে, তারা প্রতিদিন টাটকা বাজার না হলে খেতে পারেন না। প্রতিদিনই তারা বাজারে যান। কারওয়ানবাজারের ছবি দেখলে মনে হয় মানুষের উৎসব লেগেছে। অথচ করোনা থেকে বাঁচার একটাই উপায় ঘরে থাকা, বিচ্ছিন্ন থাকা। এই ভালোটুকুই কেউ বুঝতে চাইছে না।
মসজিদ নিয়ে লিখলে, পাল্টা বলে, ভারতে যে এটা করেছে, ওটা করেছে; সেটা দেখেন না। যুক্তি শুনে হাসব না কাঁদব ভেবে পাই না। ভাই আগে নিজে বাঁচেন, তারপর অন্য দেশের কথা ভাবা যাবে। মাদারীপুরে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ধর্মের এক আগাছা মিলাদ দিয়েছিল। সেই মিলাদ থেকে সংক্রমিত হয়েছে ৫ জন। এরপর এই জাতিকে রক্ষার সাধ্য কার আছে। সরকারকে যে আমরা এত গালি দেই, আপনি যদি বাসায় মিলাদ পড়ান, বাসার ছাদে জামাত করেন; সরকারের কি সাধ্য আছে আপনার মৃত্যু ঠেকায়।
সরকার করোনার সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে নানা চেষ্টা করছে। অর্থনীতির বিশাল ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেও সারাদেশে লকডাউন চলছে। কিন্তু আমরা যেন সরকারের সাথে, পুলিশের সাথে চোর-পুলিশ খেলছি। সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার পর আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এখন আসলে আর ছুটি দেয়া না দেয়ায় কিছু যায় আসে না। আমরা যদি গণআত্মহত্যা করতে চাই, সরকারের সাধ্য নেই আমাদের বাঁচানোর। কিন্তু সমস্যা হলো, যারা জানাযায় অংশ নিয়েছেন, ঝুঁকিটা তো শুধু তাদের নয়। জানাজা শেষে তারা ছড়িয়ে গেছে দেশের অন্তত ১০টি জেলায়। তারা তাদের পরিবার, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলবেন। সপ্তাহ দুয়েক পর যখন, এই জানাজার প্রভাব পড়বে, দলে দলে লোকজন আক্রান্ত হবে, তখন আমরা চিৎকার করব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পর্যাপ্ত আইসিইউ নাই কেন?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই বিশ্বরেকর্ড হঠাৎ করে হয়নি। হঠাৎ করে রাতারাতি লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটানো সহজ নয়। কেউ না কেউ আড়াল থেকে বিভিন্ন জেলায় সংগঠিত করেছেন, যানবাহন জোগাড় করেছেন। মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরবের সব মসজিদ যখন বন্ধ, গ্র্যান্ড মুফতি যখন তারাবি তো বটেই ঈদের নামাজও ঘরে পড়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন, তখন বাংলাদেশে লক্ষাধিক লোকের জানাজায় অংশগ্রহণ অবশ্যই উদ্বেগের। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় লোকজন বলছেন, মাওলানা আনসারী যে সংগঠনের নায়েবে আমির ছিলেন, সেই খেলাফতে মজলিশ একটি রাজনৈতিক সংগঠন, ২০ দলীয় জোটের শরিক।
একটি মহল এই জানাজার মাধ্যমে সরকারকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে, জনগণ সরকারের লকডাউন মানে না। কদিন পর যখন, এরা করোনায় আক্রান্ত হবে, তখন এই মহলটিই বলবে, সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো ব্রাহ্মণবাড়িয় বাংলাদেশের বাইরের কোনো জেলা? সেখানে কি পুলিশ নাই, প্রশাসন নাই? লক্ষাধিক লোক জড়ো হয়ে যাওয়ার পর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চাওয়া কঠিন। আশপাশের ৮/১০ জেলা থেকে ট্রাকে, ভ্যানে, রিকশায় বা পায়ে হেঁটে যখন তারা এলো, তখন পুলিশ কোথায় ছিল, মহাসড়কে মানুষবাহী ট্রাক আটকায়নি কেন? ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এএসপি, সরাইল থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বারবার ঘটনার পেছনে দৌড়াই কেন এয়ারপোর্টে ছেড়ে দিয়ে পরে এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রবাসীদের বাড়িতে লাল পতাকা টানাই। বারবার আমাদের দেরি হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জানাজার ঘটনা অবশ্যই পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যারা এই জানাজার আয়োজন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। আর ২০ দলীয় জোটের একটি দল যদি এই সময়ে এত বড় সমাবেশ করতে পারে, তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় ছিলেন?
করোনা আতঙ্কে মানুষের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। সন্তানরা সমাকে জঙ্গলে ফেলে যায়, প্রবাসী স্বামী আসার কথা শুনে স্ত্রী পালিয়ে যায়, জানাজা পড়ানোর জন্য হুজুর পাওয়া যায় না; এমন এক সময় মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় লক্ষাধিক লোকের অংশগ্রহণ অবশ্যই বিস্ময়কর ঘটনা। তার প্রতি তার অনুসারীদের প্র্রেম অবশ্যই বড়।
শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়। কিন্তু জানাজা দেখার পর আমার উল্টে লিখতে মন চাইছে, বড় প্রেম শুধু দূরেই ঠেলিয়া দেয় না, কাছেও টানিয়া লয়। আমার আশঙ্কা মাওলানা আনসারী শিগগিরই তার অনুসারীদের কাছে টানিয়া নেবেন। চাই আমার আশঙ্কা মিথ্যা হোক। তবে আরেকটা আশঙ্কা করে রাখি, তার অনুসারীরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের জানাজা পড়ানোর লোকও হয়তো পাওয়া যাবে না। আমার খালি ভয়, সরকারের সকল বজ্র আঁটুনিকে ফস্কা গেরো বনিয়ে আমরা সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশের জানাজাই পড়ে ফেললাম না তো।
লেখাটি শেষ করছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিসন্তান অদ্বৈত মল্লবর্মণের লেখা দিয়ে। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এ তিনি লিখেছিলেন- ‘কত মানুষ বিশ্রীভাবে মরিয়াছে, কত মানুষ না খাইয়া মরিয়াছে, কত মানুষ ইচ্ছা করিয়া মরিয়াছে- আর কত মানুষ অন্য মানুষের দুষ্কার্যের জন্য মরিতে বাধ্য হইয়াছে। তিতাস ও কতকাল ধরিয়া বহিয়াই চলিয়াছে।’
মানুষের এই অন্ধত্ব, মানুষের এই অবিমৃষ্যকারিতা, এই আত্মহনন প্রবণতা দেখেও তিতাস তবু বয়ে চলুক।
এইচআর/বিএ/পিআর