বাঁচতে হলে মানতে হবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গোটা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস থাবা বসিয়েছে বাংলাদেশেও। এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৪৬ জনের। আক্রান্ত এক হাজার ১২ জন। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিতে হবে সর্বাত্মক ব্যবস্থা।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ৩১ নির্দেশনা এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। ভাইরাস প্রতিরোধে এই নির্দেশনা মেনে চলা ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এর ম‌ধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে লুকোচু‌রি না করে অবশ্যই চি‌কিৎসকের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তি‌নি। এছাড়া ব্য‌ক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পি‌পিই) সাধারণ মানুষকে না পরে শুধু চি‌কিৎসক ও চি‌কিৎসা সং‌শ্লিষ্টদের পরার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন তি‌নি।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-

১) করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে;

২) লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন;

৩) পিপিই সাধারণভাবে সকলের পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে;

৪) কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে;

৫) যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে;

৬) নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন;

৭) নদীবেষ্টিত জেলাসমূহে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে;

৮) অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে;

৯) পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হ‌বে। সারাদেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে;

১০) আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাগণ যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন- এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে;

১১) ত্রাণকাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না;

১২) দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে;

১৩) সোশ্যাল সেফটিনেস কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে;

১৪) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে;

১৫) খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে;

১৬) সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে যাতে বাজার চালু থাকে;

১৭) সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে;

১৮) জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে যাতে জনসমাগম না হয়। ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে;

১৯) স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজের সকল স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন সকলকে নিয়ে কাজ করবে;

২০) সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন;

২১) জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন;

২২) সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন-কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে;

২৩) প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;

২৪) দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সকল সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে;

২৫) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সং‌শ্লিষ্ট‌দের কাজ করতে হবে;

২৬) আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না। খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে;

২৭) কৃষকগণ নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে;

২৮) সকল শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর পরিষ্কার রাখবেন;

২৯) শিল্প মালিকগণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন;

৩০) গণমাধ্যমকর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং

৩১) গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না।

কথায় আছে প্রতিরোধই উত্তম। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতনতাই পারে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গুজবে কান দেয়া যাবে না। করোনাভাইরাসের আক্রমণের সুযোগে কোনো অবস্থায়ই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোসহ অন্যান্য জনবিরোধী কাজ করা যাবে না। আমরা চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠুক।

এইচআর/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।