যে কারণে মশা করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে না
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো পৃথিবী এখন বিপর্যস্ত। ডাক্তার, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আতঙ্কিত মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। মশা কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে? সহজ উত্তর; না, পারে না। বিজ্ঞানীদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ নেই যে মশা করোনাভাইরাস (মার্স-কভ, সার্স-কভ কিংবা মহামারি এন-কভ ২০১৯) ছড়াতে পারে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মশা অন্যান্য অনেক ধরনের ভাইরাস (যেমন-ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ওয়েস্ট নিল, জাপানিজ এনসেফালিটিস ইত্যাদি রোগ) ছড়াতে পারলে কেন করোনাভাইরাস ছড়াতে পারবে না। বিভিন্ন রোগের ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসও মানুষের রক্তে থাকতে পারে। যেহেতু রক্ত শোষণের মাধ্যমেই মশা এক আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্য মানুষের দেহে বসে, সেভাবে তো তাহলে করোনাভাইরাসও ছড়ানোর কথা।
আসলে সব ধরনের ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায় না। করোনাভাইরাস এদের মধ্যে একটি। যদিও এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে। তবে মানুষের কফ, থুতু, নাকের সর্দি বা সংক্রমিত কোনো কিছু স্পর্শের মাধ্যমে এটি ছড়ায়। করোনাভাইরাস মানুষের রক্তে থাকলেও মশা তা ছড়াতে পারে না। একইভাবে এইচআইভি, ইবোলা ইত্যাদি ভাইরাস মানুষের রক্তে থাকলেও মশা তা ছড়াতে পারে না।
মশারা নিজেদের প্রয়োজনে (ডিম উৎপাদন) মানুষ বা অন্য প্রাণীর রক্ত খায়। কিছু ভাইরাস এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে মশার মাধ্যমে এক পোষক থেকে অন্য পোষকে নিজেদের ট্রান্সমিশন ঘটায়। মশার মাধ্যমে ভাইরাস জীবাণু ছড়ানোর একটা ম্যাকানিজম রয়েছে। এটা নির্ভর করে মশা ও ভাইরাস উভয়ের বায়োলজিকাল সিস্টেম ও পারস্পরিক ইন্টারেকশনের ওপর (ফিটনেস কস্ট)। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শোষণের মাধ্যমে ভাইরাস জীবাণু মশার দেহে প্রবেশ করে এবং বেঁচে থাকতে পারে। এসময় ভাইরাসটি মশার দেহে বিস্তার লাভ করে (রেপ্লিকেশন হয়) এবং পরবর্তীতে মিডগাট (পাকস্থলীর অংশ) হয়ে স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডে আসে। তারপর (৭-৮ দিন) এই মশাটি নতুন একজনকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা অর্জন করে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ইত্যাদি ভাইরাসগুলো এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এক আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্য মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে।
লক্ষ্যণীয় যে সকল ভাইরাস মশার দেহে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারে না। যেমন এইচআইভি ও ইবোলা ভাইরাস। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এরা মশার দেহে নিজেদের বিস্তার ঘটাতে পারে না (রেপ্লিকেশন হয় না) বরং মিডগাটেই (পাকস্থলীর অংশ) ধ্বংস হয়ে যায় অথবা দেহ থেকে এক্সক্রিশন (পায়ু পথে বের হওয়া) হয়। আর তাই এই ভাইরাসগুলো মানুষের রক্তে থাকলেও মশার মাধ্যমে তা ছড়ায় না। এরই আলোকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসও মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে না। তাছাড়া কোভিড-১৯ কোনো ভেক্টর বাহিত রোগ নয়। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত প্রচণ্ড ছোঁয়াচে রোগ। তবে এন-কভ ২০১৯ নামের এই করোনা ভাইরাসটি সর্ম্পকে নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় এখনো হয়নি।
তথ্যসূত্রতথ্যসূত্র১.
লেখক
মশা গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক (কীটতত্ত্ব বিভাগ)
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল : [email protected]
এইচএ/এমএস