করোনায় মৃত্যুর মিছিলে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সাইফুল আজম সিদ্দিকী সাইফুল আজম সিদ্দিকী (মিশিগান) যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ২৮ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আজ সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গবেষকরা আক্রান্তের হার ও রোগের উপশম দেখে বলছেন, মৃত্যুর মিছিলের খুব দ্রুতই সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল আগামী জুন মাস পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। সফল কোনো ভ্যাকসিন বা নিরাময়ে এখনও কোনো আশার আলো শোনাতে পারেনি কেউই।

শুক্রবার বিকেলের হিসাব মতো যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এখন আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ৩ হাজারেরো বেশি। যেখানে ইতালিতে ছিয়াশি হাজার পাঁচশ ও চায়নায় একাশি হাজার তিনশ’। তবে আক্রান্তদের মাঝে মৃতের সংখ্যায় ইতালি সবার আগে, দুইয়ে স্পেন তার পরেই ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের অবস্থা শোচনীয়। নিউইয়র্কের পথে শুধুই এখন অ্যাম্বুল্যন্সের সাইরেনের শব্দ। আসছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর খবর। নিউইয়র্কের পর নিউ জার্সির অবস্থান, এরপর ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের অবস্থান পাঁচে। ইমিগ্র্যান্টের দিক থেকে এই সব অঙ্গরাজ্যে অবস্থান ও সবার উপরে।

রাজ্য সরকারের গভর্নররা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিকিৎসার সরঞ্জামাদি চেয়ে বার বার হতাশ হচ্ছেন। আমেরিকার মতো রাজ্যে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা মিলছে না। ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের, শ্বাসকষ্টের পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে, তাছাড়া বাকিদের বাসায় অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ এ বছরে খোলার সম্ভবনা খুব কম বলে জানালেন মিশিগানের গভর্নর গ্রিচেন হুইটমোর। মিশিগানে প্রতিটি হাসপাতালের বাইরে তাবু দিয়ে আক্রান্তদের টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এ মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫ হাজারে পৌঁছানোর সম্ভবনা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সকল সিটিজেনের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তবে মানুষের প্রাণ হারানোর পাশাপাশি দেখা দিয়েছে আরেক সমস্যা। প্রতিটি কোম্পানি করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। নেমে আসছে সামাজিক বিপর্যয়।

আমেরিকান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিস প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি স্টেফেন ফাউচি বলেন, সার্স, ইবোলা, এইচআইভি, জিকা ভাইরাস থেকে করোনাভাইরাস আলাদা কারণ এই ভাইরাস রেস্পেরেটরি সিস্টেম (শ্বাস-প্রশ্বাসের সিস্টেম) বিনষ্ট করে দেয় এবং এটা খুব দ্রুত অন্যের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ইবোলা ভাইরাস অত্যন্ত মারাত্মক হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির খুব কাছে না গেলে ইবোলা ছড়াত না। কিন্তু করোনা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ছড়াচ্ছে। এমনকি অনেকেই আক্রান্ত হলেও তার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না! তবে তা অন্যদের মাঝে ঠিকই ছড়ায়। আর এ রোগে বৃদ্ধ ও অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর হার অনেক বেশি। সিজনাল জ্বরের মতো এ রোগ হলেও সাধারণ জ্বরে মৃত্যুর হার ০.১ শতাংশ। এই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে দশগুণ বেশি।

আমেরিকায় সরকারিভাবে মাঝে মাঝে ভ্যাক্সিনের কথা বলে হলেও ড. ফাউচি বলেন, আজ সকাল পর্যন্ত সেইফ এবং ইফেক্টিভ কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। বেশ কিছু ট্রায়াল চলছে তবে কোনো ওষুধ শরীরের জন্য ভালো এবং সাইড ইফেক্ট নাই এমনটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। অনেকে এই রোগে ম্যালেরিয়ার ওষুধের কথা বললেও তিনি এ ব্যাপারে আরো যত্নবান হওয়ার জন্য বলছেন। এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত, সফলতার প্রমাণ ছাড়া ইন্টারনেটের হুজুগে এ ওষুধ না গ্রহণ না করার কথা বলা হয়েছে।

এসএইচএস/এমএস

আমেরিকার মতো রাজ্যে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা মিলছে না। ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের, শ্বাসকষ্টের পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে, তা ছাড়া বাকিদের বাসায় অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।