কাদের স্বার্থের সংঘাতে গ্রেফতার হলো পাপিয়া?
পাপিয়ারা এত পাপ করে কি করে? পাপ করে প্রমোশন! একেবারে জেলার সরকারদলের নেত্রী। যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক। তার পর হাই প্রোফাইলে বিচরণ। অপরাধ সম্রাজ্ঞী। দেশের গেয়েন্দারা করে কি? পাপিয়া দু’দিন ধরেই কিন্তু এসব অপকর্ম করছে না? ওর পাপের বোঝা কে বহন করবে? আওয়ামী লীগ? বোঝা ঘাড়ে না নিলেও দুর্নামের বোঝা কিন্তু দলটিকে নিতেই হচ্ছে। গণমাধ্যমসহ ফেসবুক, ইউটিউবে নানা জনে না কথা বলছে। মানুষের মুখ কিভাবে থামাবেন? নোংরা ভাবে নেতাদের জড়িয়েও কথা বলছেন অনেকে। এটা আবার ঠিক না। ভিআইপি, নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-আমলাদের সাথে ছবি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোন অনুষ্ঠানে ভিআইপিদের সাথে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে। কে কোথায় ছবি তুললো সেলিব্রেটিদের তা খেয়াল করার কি সময় আছে?
পাপিয়া কিন্তু যে কেউ নন। রাজধানীর পাশের নরসিংদী জেলার মহিলা দলের অঙ্গসংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক। তিনিতো যে কোথাও যেতে পাারেন। ছবি তুলতে পারেন। ছবি তুলে পাপমোচনের চেষ্টা করেন তিনি। হাইপ্রোফাইলের লোকদের সাথে ছবি তুললে অনেক ফায়দা আছে পাপিয়া তা বোঝে। তাই সেজেগুঁজে ছবি তুলে নিজেকে ডাকসাইটের বানানোর চেষ্টা। আর সে চেষ্টায় তিনি সফলও। ছবিতোলার জন্য তার ছিলো বিশাল সুযোগ। একেতো নারী নেত্রী, আবার সুন্দরী এবং দাপুটে। যেখানেই গেছেন সেখানেই আগে স্থান পাপিয়ার। জেলার নেত্রী হিসাবে তারতো বঙ্গভবনের সংবর্ধনায় নিমন্ত্রণ থাকবারই কথা। গণভবনেও এক্সেস আছে নেত্রী হিসেবে। সবাই চায় সেলিব্রেটি মানুষটার সাথে ক’টা ছবি। তার ছবি যে বাণিজ্যিকভাবে তোলা তা কিন্তু সেলিব্রেটির জানবার কথা নয়? মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছাকাছি যেতে কি অবস্থা হয় তা সাধারণ কর্মী মাত্রই জানেন। তবে জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে তার ছবি থাকাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন একটাই এসব নারীকে নেত্রী কে বা কারা বানালো? প্রশাসন, গোয়েন্দাদের চোখ কি অন্ধ ছিলো এ যাবৎ। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী দৃষ্টিইবা কোথায় ছিলো এতোদিন? র্যাব তাকে ধরে তার পাপের সব ফিরিস্তি দিলো আর দেশ সুদ্ধ উদ্ধার হলো। হৈচৈ হলো, হচ্ছে, ক’দিন হবেও। পাপিয়া কাদের লাইসেন্সে এত নোংরা পথে গেলো? ডাকসাইটের কারো ইন্দন আছে নিশ্চয়। তার সাথে আর কোন রথীমহারথী আছে? তা জরুরি তদন্ত করে দেখা দরকার। যুব মহিলা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হওয়া কিন্তু চারটে খানি কথা নয়। দেশের অনেক পুরনো দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু যার প্রতিষ্ঠাতা। আবার সরকারদল। এ দলে এমন মহিলা ঢুকলো কি করে? কার হাত ধরে, কার ইশারায় পাপিয়ার দলে প্রবেশ। পাপিয়া কোনা ধনির দুলালী নন। ড্রাইভার কন্যা থেকে আজকের পাপিয়া। এভাবে সংগঠন চলে না,আওয়ামী লীগের মতো পরিপক্ক দলতো নয়ই। আর এভাবে চলতে দেয়া উচিতও নয়।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘসময় ক্ষমতায় অনেক দলছুট, বহিরাগত, চিটার, বাটপারেরা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছে বা নিয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় যারা এইসব প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা কোনোভাবে দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। পাপিয়ারা মূলত ওইসব বহিরাগত যারা নানানভাবে পদ নিয়ে দলে এসেছে ব্যবসা করতে, ফায়দা লুটে নিতে। খোঁজ নিয়ে দেখলে জানা যাবে যে, পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো নেতা বা এমপি জড়িত। আসলে পাপিয়াকে নিয়ে কথাতো অনেকই বলা যাবে। তাকে নিয়ে কথা চলবেও বেশ কিছুদিন ধরে।
অনেক পাপিয়া আর সম্রাট আছে দেশে। ওরা কেবল ধরা পরে কোন সংঘাতে। ভাগাভাগীর সমস্যায়। অবৈধ হলেও মহাপ্রতাপশালী পাপিয়া তো দিব্যি কায়কারবার চালাচ্ছিলো। কার বা কাদের সাথে স্বার্থের সংঘাতে তাকে গ্রেফতার করা হলো? ওই স্বার্থটা কি? আগে বের করুন। ঢাকাসহ দেশের আর কোন্ কোন্ হোটেলে এমন বিশাল কর্মযজ্ঞ চলে তাও বের করতে হবে। পাপিয়াদের জায়গা কিন্তু খালি রয়না কখনো। পাপিয়ার জায়গা এখন দখল করবে কে? এরকম আর কত পাপি এবং পাপিয়া আছে দেশের হোটেল, গেস্ট হাউজ, আন্ডারগ্রাউন্ডে? তাদের বের করারে দায়িত্ব যাদের তারা কি তা পালন করবেন।
দেশের রাজস্ব বিভাগের লোকজন কি করে? দিনের পর দিন ফাইভ স্টার হোটেলের স্যুট ভাড়া নেন পাপিয়া? দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নেন বার! হঠাৎ দামী গাড়ি, চাকচিক্য, ফ্লাট কোনটাই কি তাঁদের চোখে পড়লো না। পাপিয়ার এমন সাম্রাজ্যের খবরতো রাজস্ব বিভাগ দুর্নীতিদমন বিভাগ সবরই জানবার কথা। কারো ইশারায় কি সবাই চুপ ছিলেন? হোটেলের মালিকপক্ষকে কি কখনো সরকারি মহলকে এসব বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়নি? হোটেলের মালিকপক্ষ সব জানতেন ঠিকই। তারা কেন থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে একবারও জানালেন না? এ দায় কিন্তু তাদের। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হোক। এক পাপিয়া তার পাপের জন্য সাজা পাবে আর অন্যরা অপরাধ করে বেঁচে যাবে তা কিন্তু হতে পারে না। জানা কী যাবে না কারা ছিলেন পাপিয়ার আশ্রয়দাতা? খালেদ-সম্রাটদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের কথাও কিন্তু দেশবাসী জানতে পারেনি। কিছু ক্ষমতাবান পদ হারিয়েছেন মাত্র। পাপিয়ার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হবে। পাপিয়া কারাবাস করবে আর পাপিয়াকে দিয়ে যারা পাপ করালো তারা ঠিকই সুখে শান্তিতেই থাকবেন।
দেশ থেকে পাপিয়াদের জন্মদাতা নেতাদের পাপকে রুখে দিন আগে। ওদের মুখোশ উম্মোচন করুন তাহলে আর একজন পাপিয়াও জন্ম নেবে না।
লেখক : সাংবাদিক।
এইচআর/এমএস