আর কত ধর্ষণ হলে ধর্ষকের ক্ষুধা মিটবে?
ভেবেছিলাম নতুুন বছরে শুনতে হবে না কোনো দুঃসংবাদ। কিন্তু ২০২০ সালের প্রথমেই খবরটি শুনে কুঁকড়ে উঠেছি নিজের ভেতর! মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে! কোন দেশ এটি? এ কি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বাংলাদেশ যে দেশে ৭ মার্চের ভাষণ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল দেশের জনগণ? এ কি ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মাহুতির বাংলাদেশ? বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন হয়েছে কি ধর্ষকের দেশ হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্য? কে দেবে জবাব? কারও মুখেই কথা নেই! আকাশে বাতাসে রঙিন ঘুড়ির বদলে উড়ছে অনিরাপত্তা আর বিপদসংকেত!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েটি পড়তে এসেছিল। তার চোখেও ছিল বড় হওয়ার স্বপ্ন। নিজেকে গড়ার স্বপ্নে সে বিভোর ছিল। বাস থেকে নেমে কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে তাকে ধর্ষণ করল, কেন এই ধর্ষণ? কী ক্ষতি করেছিল মেয়েটি? বলতে পারো আর কত ধর্ষিত হবে আমার বোনেরা? আর কতজন ধর্ষিত হলে তোমাদের ক্ষুধা মিটবে?
স্কুল-কলেজ, রাস্তায়, চলার পথে বিয়ে কিংবা প্রেম করতে রাজি না হলে মুখে এসিড ছুঁড়ে মারা হয়। ঘরে তরকারিতে লবণ কম বা বেশি হলে খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। যৌতুকের লোভে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। কথায় কথায় তালাক দেয়ার নজিরও আছে এদেশে। আমরা কোন সমাজে আছি? কী করে আমাদের সমাজ বদলাবে?
হ্যাঁ, আপনিও পারেন সমাজকে বদলে দিতে। খেয়াল করুন, আপনার আশেপাশে কেউ কেউ বলছে ‘মেয়েটি কেন সন্ধ্যায় বের হলো? মেয়েরা কেন সন্ধ্যার পর বের হবে’? ওদেরকে চিনে রাখুন ওরাই ধর্ষক এবং ধর্ষকের সহকারী। ওরা সবসময় ধর্ষিতা তথা নারীর বিপক্ষে কথা বলে। ওরা এই সমাজেরই নামধারী তথাকথিত শিক্ষিত লোক। ওরা কোনোদিন নারীদের ভালো চায় না, এই সমাজের ভালো চায় না, দেশের ভালো চায় না।
তবে কি পিতামাতার ঘরে কন্যাসন্তান থাকলে সে উচ্চশিক্ষিত হবে না? সে চাকরি করবে না? কাজ শেষে সে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবে না? ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরা পড়াশোনা করবে না? মেয়েরা কি নিজ দায়িত্বে কোনোদিন চলা শিখবে না? তারা কি পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবে না? তারা কি সমাজের দায়িত্ব নেবে না? তারা কি দেশের কাজ করবে না?
মেয়েরা কাজ করবে, রাস্তায় চলবে, কেনাকাটা করবে, কাজ শেষ হলে নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরবে, তা সন্ধ্যা কিংবা রাত যখনই হোক না কেন। এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি, আজ আপনি সজাগ না হলে হয়তো দিনে দিনে মানুষের চেয়ে ধর্ষকের সংখ্যাই বেশি হয়ে যাবে একদিন। আসুন, ঘুরে দাঁড়াবার সময় এসেছে সকলের।
যে দেশে ত্রিশ বছর ধরে নারী সরকার এবং যে দেশে সরকারের বড় বড় দায়িত্ব পালন করছেন নারী, সে দেশে এখনও নারী ধর্ষিত হয় এটা মেনে নেয়া যায় না! নাকি এটা এক ধরনের প্রতিযোগিতা? যারা সামনে আসার যোগ্যতা রাখে না তারা সুকৌশলে নারীকে পেছন থেকে অবদমিত করতে চায়! এটি কী ধরনের হীনমন্যতা! যুগেযুগে ধর্ষকরা এভাবেই শিকড় গজিয়ে যাচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এটা সমাজের বিষফোঁড়া। এরাই সমাজকে নষ্ট করছে, কলুষিত করছে। দেশকে কলঙ্কিত করছে। এ ফোঁড়া অপারেশনের সময় এসে গেছে।
আর যে মেয়েটি ধর্ষিত হলো তাকে বলছি, ‘তুমি উঠে দাঁড়াও বোন। তুমি তো কোনো দোষ করোনি। তুমি কোনো অন্যায় করোনি। ধর্ষিত হয়েছো বলে তোমার জীবন থেমে যাবে তা নয়। তুমি আরও প্রোজ্জ্বল হও, জ্বলে ওঠো, তোমার সাথে তোমার বোনেরা আছে, ভাইয়েরা আছে, সমাজ আছে, পুরো দেশ আছে। চোখের পানি মুছে ফেলো। তুমিই বদলে দিতে পারো আজকের এ কলুষিত পৃথিবী’!
আর দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ, ধর্ষিতার দিক থেকে আপনারা আপনাদের আঙুল, চোখ, ইশারা, জিহ্বা, কানাকানি বন্ধ করুন। ধর্ষিতা আপনারই মেয়ে, আপনারই বোন। সে কোনো অপরাধী নয়। তাকে তার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিন।
এদেশে আগে আরও অনেক হত্যা, খুন, ধর্ষণ হয়েছে। এদেশে আট মাসের শিশুও ধর্ষিত হয়েছে। যদি বিগত সকল ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা হতো তাহলে হয়তো সমাজে এত ধর্ষকের মতো আগাছা বেড়ে উঠত না! মাননীয় সরকার আপনি একজন নারী। আপনার কাছে অনুরোধ কঠোর আইন ও তার প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষকের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করুন! আমরা একটি ধর্ষণমুক্ত দেশ চাই।
লেখক : কবি ও শিক্ষক।
এইচআর/বিএ/জেআইএম