আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও জনআকাঙ্ক্ষা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিয়মমাফিক সম্মেলন এবং দলের নেতা নির্বাচন– বিষয়টি ঠিক এমন নয় এবার। একটা নতুন প্রেক্ষাপট আছে, নতুন প্রতিজ্ঞা আছে।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ থেকে পালিত হবে মুজিববর্ষ। এর আগে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে নজরকাড়া ২১তম সম্মেলন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আছে দল ও দলের নানা অঙ্গ সংগঠনে শুদ্ধতা আনয়নের প্রচেষ্টা। এই দুই বিষয় সামনে রেখে জাতীয় সম্মেলন নিয়ে অনেক ভাবনা।
এরই মধ্যে সভামঞ্চটির একটি ছবি পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, বহমান পদ্মার বুকে ৪০টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর নিচে বিশাল জলরাশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। একটি ছোট জাহাজও ভাসছে। একপাশে চরে কাশবন দেখা যাচ্ছে। বিশালাকার এক পাল তোলা নৌকাও ভাসছে নিজের গতিতে। পদ্মা সেতুর ওপর বিশালাকৃতির দলীয় প্রতীক নৌকা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি ধারণ করেছে নৌকাটি। নৌকাটির মাঝে বড় করে লেখা- ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯।
বর্তমান প্রধান শেখ হাসিনা আবারও সভাপতি হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। এটি যতটা না দলীয় নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা, তারচেয়েও বেশি রাষ্ট্রীয় বাস্তবতা। শেখ হাসিনা ছাড়া শুধু দল নয়, বাংলাদেশকেই নিপুণভাবে পরিচালিত করা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক এখন ওবায়দুল কাদের। অনেক ধরনের জল্পনা কল্পনা আছে, কিন্তু একটি কথা মাথায় রাখতেই হবে, আওয়ামী লীগ পর পর তিন বার এখন ক্ষমতায় এবং দলের নেতৃত্ব শেখ হাসিনা সেভাবেই নির্বাচিত করবেন যেভাবে দেশ ও দল দুটোই সামনে এগুবে প্রতিবন্ধকতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে।
রাজনীতি সরলরেখায় চলে না। তাই আমরা যা ভাবছি সেভাবে রাজনীতির আগামীকাল অথবা পরশুর গতিপ্রকৃতির পূর্বাভাস করা কঠিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, পরপর তিনবারের জন্য আছে, তাই এ দলের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলবে, তা স্বাভাবিক। তবে নিয়মিত সম্মেলন করা, দলকে আরও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেয়ার প্রচেষ্টায় এ সম্মেলন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের নিয়মমাফিক কাজ শুধু নয় কেবল, বরং কর্মী সবার মনোবল বাড়ানোর এক বড় আয়োজন।
সমাজ বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তন আসছে নানা দিক দিয়ে। এই পরিবর্তন উপেক্ষা করা অসম্ভব। পরিবর্তনের বাস্তবতাকে মাথায় নিয়ে দ্রুত ধাবমান বর্তমানের ইতিহাস আর অতীতের বিশ্লেষণ করে আগামীর স্বরূপ পরিবর্তনের ইতিহাস সাজাতে এ সম্মেলন থেকে কি আহ্বান আসে সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আমাদের সবার।
আওয়ামী লীগ জনভিত্তিক দল হিসেবে গণরাজনীতি করে। তাই এই দলকে মনে রাখতে হয় অনেক কিছু। একটি বড় কাজ হলো সমাজে হিংসা বা সহিংসতা কমানো। এক নতুন বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাজ নির্মাণের দায় আছে আওয়ামী লীগের। সাধারণ নাগরিকের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, নারীর অধিকার আর পাহাড়সম প্রত্যাশা নিয়ে দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করছে দলটি। এমন একটি গণরাজনীতি করা দলের শাসনকৌশল হলো অন্যায়ের প্রতিকার করা।
কিন্তু আমার কাছে আওয়ামী লীগের কাছে বেশি চাওয়া একটি সঠিক রাজনৈতিক সমাজ নির্মাণ করার প্রত্যয়। দলের দীর্ঘমেয়াদি রণনীতি হতে হবে দেশে একটি উদার ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই রাজনীতি তাৎক্ষণিক, কৌশল-নির্ভরশীল শুধু নয়, এই রাজনীতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের রাজনীতি যেন এমন হয় যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মাঝে একমত হওয়ার জায়গা বাড়ে, সংঘর্ষের উপাদান কমে। তাই ন্যায়ের নিরিখে কথোপকথন চালানো প্রয়োজন। ধৈর্য ধরে যত দূর সম্ভব কথোপকথনের বহুত্বকে, জনমুখী প্রবণতাকে সুযোগ দিতে হবে দলের ভেতর।
রাতারাতি চমকপ্রদ কিছু করা সম্ভব নয়। জনসাধারণ সে আশাও করে না। কিন্তু শাসক দল মানুষের প্রয়োজন আর সমাজের গতিশীলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে গতিশীল করবে এমন একটা চাওয়া সব স্তরেই বাড়ছে।
লেখক : প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।
এইচআর/এমএস