সৌরভের উৎসবে সৌরভ বাহিনীর জল
ইডেনে পিঙ্ক টেস্টের আগে মুন্নী জানতে চাইলো- ‘আচ্ছা, গোলাপি টেস্টের মাহাত্ম্য কী?’ আমিও বিস্তারিত জানি না। তবুও বললাম, ‘আগে টেস্ট খেলা হতো দিনে এবং লাল বলে। এখন কিছু টেস্ট হয় দিনে-রাতে এবং সেটা হয় গোলাপি বলে।’ তখন তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘ইডেনেই কি প্রথম গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট হচ্ছে?’ আমি বললাম, ‘না, গোলাপি বলে ডে-নাইট টেস্ট আগেও হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এবং ভারত এই প্রথম গোলাপি বলে খেলছে।’
তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘তাহলে ইডেনের পিঙ্ক টেস্ট নিয়ে এত হৈচৈ কেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না। সম্ভবত সৌরভ গোলাপি টেস্টকে ধরে টেস্ট ম্যাচকেই ইভেন্ট বানিয়ে ফেলেছেন এবং সৌরভ প্রমাণ করেছেন, অধিনায়ক হিসেবে যেমন ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছিলেন, তেমনি প্রশাসক হিসেবেও নতুন মাত্রায় তুলতে যাচ্ছেন। প্রশাসক হিসেবে অভিষেক ম্যাচেও তিনিই আসল ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি আসার পর বিশ্বজুড়েই টেস্টের আকর্ষণ কমে গেছে। যে স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উপচেপড়া ভিড়, সে স্টেডিয়ামই টেস্টে বিরাণভূমি। সেই চ্যালেঞ্জ উতড়ে সৌরভ গাঙ্গুলি ইডেন টেস্টকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়। দুই বাংলায় এই টেস্ট নিয়ে যে মাতামাতি, তা সাম্প্রতিককালে অন্য কোনো ইভেন্ট নিয়ে দেখা যায়নি। যেখানে তিন দিনেই টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা, সেখানে পাঁচ দিনের টিকিটই ‘সোল্ড আউট’ হয়ে যাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর।
শেষ কবে এমন হাউজফুল স্টেডিয়ামে টেস্ট হয়েছে, ক্রিকেট রোমান্টিকরা ইতিহাস ঘেটে দেখতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেট ভুলে যাওয়া দর্শককে মাঠে টেনে এনেছেন ম্যাজিশিয়ান সৌরভ গাঙ্গুলি। লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি উড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে সাবালক বানিয়ে দিয়েছিলেন গাঙ্গুলি। এবার নিজের ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে টেস্ট ক্রিকেটের দর্শক ফিরিয়ে আনলেন।
ইডেন টেস্ট দ্বিতীয় দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারত। নিছক মুশফিক প্রতিরোধের দেয়াল গড়েছেন বলেই ম্যাচটি তৃতীয় দিনে গেল। ভেবেছিলাম ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যাওয়া এই ম্যাচ দেখতে তৃতীয় দিনে কেউ আসবে না। কিন্তু ইডেনে গিয়ে আমার ভুল ভাঙলো। ইডেনের সামনে সকাল থেকেই লম্বা লাইন। সাধারণত টেস্ট ম্যাচে দর্শকরা একটু আস্তে ধীরে মাঠে ঢোকেন রসিয়ে রসিয়ে খেলা দেখবেন বলে। কিন্তু রোববার সকালে ইডেনে সবার তাড়া, খেলা কতক্ষণ হয় তার তো গ্যারান্টি নেই।
ইডেনের বাইরে অনেকের সাথে কথা হলো। ভারতীয় এক সমর্থকের চাওয়া হলো, ভারতীয় বোলাররা যেন আস্তে বল করে, যাতে কিছুক্ষণ অন্তত খেলা দেখা যায়। আর বাংলাদেশ থেকে আসা এক ক্ষুব্ধ তরুণের চাওয়া, খেলা যেন ১০ ওভারেই শেষ হয়ে যায়, যাতে ভারতীয়দের টিকিটগুলো নষ্ট হয় আর ছুটির দিনটা মাটি হয়ে যায়।
বোঝাই যাচ্ছে তীব্র রাগ আর অভিমানে তিনি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে চাইছেন। ভারতীয়দের আনন্দটা তার সইছিল না। শেষে অবশ্য বললেন, ‘অন্তত মুশফিকের সেঞ্চুরিটা যেন হয়।’ কিন্তু তাও হয়নি। তিনি সান্ত্বনা পেতে পারেন, তার অভিমানের চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে। তবে সেটা পুরো হয়নি, তৃতীয় দিনের খেলা ১০ ওভারও হয়নি। তৃতীয় দিনে ৮ ওভার ৪ বলেই খেলা শেষ।
আমার কিন্তু ভারতীয় সমর্থকদের জন্য খারাপই লাগল। এত কষ্ট করে, আয়োজন করে, লম্বা লাইন পেরিয়ে মাঠে ঢুকতে না ঢুকতেই খেলা শেষ! সৌরভের উৎসবে জল ঢেলে দিলেন সৌরভ বাহিনী। দুই ইনিংসেই শূন্য করা বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়ক, মুমিনুল হকের ডাক নামও যে সৌরভ।
এইচআর/বিএ/পিআর