অবহেলিত রেলের প্রয়োজন ‘আদর’

তুষার আবদুল্লাহ তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৯:০২ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

বাহন হিসেবে বরাবর প্রথমে রাখি রেল। স্বচ্ছন্দ, নিরাপত্তা দুটোর জন্যই রেল তুলনাহীন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখার পরও অন্ধ প্রেমিকের মতো আমি রেলকে ভালোবাসি। নিশ্চিন্তে তার কোলে নিদ্রা যাই। এমন স্বপ্নময় ঘুম রেলের ডিব্বা ছাড়া আর কোথাও সম্ভব? সোমবার রাতে উদয়নের যাত্রীরাও বুঝি এমন ঘুমে ছিল? আমি যেমন ঘুম ভোরে ইস্টিশনে নেমে প্রিয়জনের মুখ দেখার তাড়নায় থাকি, তারাও তেমন তাড়াতেই ছিলেন। কিন্তু ঘুম ভাঙার আগেই, হেমন্তের ভোর দেখার আগেই, স্বপ্নের মৃত্যু। তূর্ণা নিশীথার চালকের ভুল, অসতর্কতা কেড়ে নিলো ষোলোটি প্রাণ।

আহত হয়েছেন যারা, তাদের কেউ কেউ হয়তো। জীবন ভর পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াবেন । কোন শিশু বাবা- মা দুজনকে হারিয়েই এক অপার নিঃসঙ্গতায় নিমজ্জিত হলো। কেন দুর্ঘটনা? চারটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। চিরায়ত পদ্ধতিতে কমিটিগুলো রিপোর্টও জমা দেবে। গণমাধ্যম বা জনগণের অগোচরে রয়ে যাবে মূল কারণ। তবে, দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রেলের পরিচিত জন, যারা রেল ট্রাফিকিং এর হর্তাকর্তা, তাদের আচরণের মধ্যে কিছু লুকানোর পাঁয়তারার আঁচ পেয়েছি।

বিজ্ঞাপন

তাৎক্ষণিকভাবে তারা বলেছেন- দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশীথার চালক, পরিচালকরা দায়ী। সিগন্যাল ঠিক দেয়ার পরেও, তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল মানেননি।সাধারণভাবে বলা হয় দুর্ঘটনার জন্য তিনটি স্তরে ভুল দায়ী থাকে। সিগন্যাল, অপারেশন এবং ট্রাফিক। রেলবিভাগ বলছে তিনটি স্তরই সোমবার নির্ভুল ছিল। চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বা অমনোযোগী ছিলেন। প্রশ্ন হলো তাহলে তার সহকারী বা পরিচালক কি দায় এড়াতে পারেন? প্রশ্ন থেকে যায় তিনি দীর্ঘ সময় কাজে থাকায় ক্লান্ত ছিলেন কি-না? আবার এই সংশয়ও তৈরি হয়েছে সত্যি কি সিগন্যাল যথাযথভাবে কাজ করেছে? চালক, সহকারী এবং পরিচালক পলাতক থাকায়, চালক ওই সময় কি অবস্থাতে ছিলেন তা এখনও জানা যাচ্ছে না। তাদের খোঁজ পাওয়া গেলে প্রকৃত কারণের হদিস হয়তো পাওয়া যাবে। তবে রেলের দুর্ঘটনার জন্য যে শুধু ব্যক্তি বা কোন একটি বিভাগ দায়ী তা নয়।

এজন্য রাষ্ট্রীয় নীতিও অনেকাংশে দায়ী। কারণ রেল খাত দীর্ঘদিন অবহেলার শিকার হয়ে আসছে। রেলকে গুরুত্ব কম দিয়ে বেশ কিছু রুট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এখন অবশ্য নতুন নতুন রুট খোলা হচ্ছে। নতুন লাইন বসছে। বগি কেনা হচ্ছে নতুন। রেলের ডুয়েল গেজ বসানো হচ্ছে। কিন্তু সিগন্যাল ব্যবস্থার এখনো সার্বিক আধুনিকায়ন হয়নি। ঘাটতি রয়েছে লোকোমোটিভের।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে দ্বৈত লাইনের। একক লাইনকে অবলম্বন করেই আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। সিগন্যাল আধুনিকায়ন না করে একক লাইনে আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াও সিগন্যাল কাঠামোতে চাপ ফেলছে। দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ এবং নিয়মিত বিরতিতে দুর্ঘটনার কারণ লেভেল ক্রসিং না থাকা, লেভেল ক্রসিং দেখভালে অবহেলা। গত তিন বছরে যে এক হাজার রেল দুর্ঘটনা হয়েছো তার মূলকারণ লেভেল ক্রসিং।

রেলের দক্ষকর্মীর অভাব যেমন আছে, তেমনি আছে দুর্নীতিও। রেলের বগি, লোকোমোটিভ কেনা, রেললাইন স্থাপন সকল পর্যায়েই দুর্নীতি ও অপচয়ের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় এ খাতে সুশাসনের ঘাটতি আছে। দীর্ঘদিনের যে অবহেলা , সেখান থেকে রেলকে নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণের উপযুক্ত করতে, তাকে যাত্রীসহ নীতি নির্ধারকদের আদর প্রয়োজন। তাহলেই অসতর্কতা মূলক দুর্ঘটনা শূন্যমুখী করা সম্ভব।

লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।