এরশাদকে রাজনীতিবিদের স্বীকৃতি দিয়েছে অন্য দলগুলো

অঘোর মন্ডল
অঘোর মন্ডল অঘোর মন্ডল , এডিটর, দীপ্ত টিভি
প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্বই বাংলাদেশের রাজনীতির চালিকাশক্তি। এই ধারার শুরু আশির দশকের গোড়ার দিকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেটা প্রবল থেকে প্রবল হয়েছে। দলের ভেতর গণতন্ত্রের চর্চা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে। দলে যখন গণতন্ত্রের পরিসর ছোট হয়ে যায় তখন রুদ্ধ হয়ে যায় দেশের গণতন্ত্র বিকাশের পথ। এটা বহু চর্চিত। তবুও আবার লিখতে হচ্ছে। কারণ, দিন কয়েক আগে ভাঙনের খেলা খেলে এক জেনারেলের গড়া জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সাইরেন বেজে উঠেছিল। সমঝোতা, আপস নাকি অন্যকোন খেলায় সেই সুর মিলিয়ে গেল। আপাতত 'ক্ষমতা ' নামক সুপারগ্লুতে জোড়া লাগলো জাতীয় পার্টিতে। তবে ফাটলের দাগ থেকে গেল। সে ফাটল পারিবারিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব কর্তৃত্ব আর ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে।

প্রতিষ্ঠা যার অন্যদল ভেঙে তাদের ভাঙনকাল দীর্ঘ হবে এটা স্বাভাবিক। জাতীয় পার্টির ভাঙন শুরু নব্বই দশক থেকে। বার কয়েক ভাঙনের পরও জাতীয় পার্টি মানে এরশাদ। আর গত তিন দশকে এরশাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার এক্স ফ্যাক্টর। তার মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি আর কতোদিন ক্ষমতার এক্স ফ্যাক্টর হয়ে থাকবে, সে ব্যাপারে ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে।

একদিকে এরশাদের স্ত্রী। অন্যদিকে, ভাই। তাদের বিবাদের মাঝে আপস ফ্যাক্টর কী তা নিয়ে মানুষের খুব একটা আগ্রহ বা কৌতূহল আছে তাও নয়। সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের বিরোধী দলের আসন ধরে রাখতে সমঝোতা ছাড়া কোন পথ খোলা ছিল না জাতীয় পার্টির সামনে। তবে নির্বাচন এলে কী হবে তা নিয়ে আগাম কৌতূহল রাজনীতি সচেতন মানুষের মনে। যদিও উত্তরটা খুব বেশি কঠিন তাও না। আবার ভাঙনে পড়তে পারে এরশাদের দল। যে দলটা দিনে দিনে আঞ্চলিক দলে রূপ নিয়েছে। আগামীতে সেটা একুশ শতকের মুসলিম লীগ হয়ে যেতে পারে।

জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল। তবে এদেশে প্রথম গৃহপালিত বিরোধী দলের জন্ম দিয়েছিলেন যারা, আজ সেই দলটাকেই মানুষ মনে করে দেশের দীর্ঘ সময়ের গৃহপালিত দল। এরকম দল দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। জাতীয় পার্টি দেশের গণতন্ত্রকে সংহত করবে সেটা আশা করাও ভুল। কারণ, অন্যের ভুল আর বন্ধুকের নলের মধ্যে দিয়ে যাদের জন্ম তারা কীভাবে গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে উঠবে?

জাতীয় পার্টির জন্ম আর পেছনে ভূমিকা কাদের? কাদের ভুলে আরও একজন জেনারেল এদেশের প্রেসিডেন্ট হলেন। লম্বা সময় দেশ শাসন করলেন। স্বৈরাচার হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও দেশজ রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে থাকলেন এরশাদ। তিনি বৈধ কী অবৈধ সেই প্রশ্নের চেয়ে বড়, এই জেনারেল দেশ শাসন করেছেন সাড়ে নয় বছর। তিনি যাদের জেলে পুরেছিলেন, তারও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাকে পাশে বসিয়ে সভাসমাবেশ করেছেন। জোট করেছেন। মহাজোট করেছেন। তাহলে এরশাদকে রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃতি জনগণ দিলেন নাকি দেশের ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদরা দিলেন।

এরশাদ পতিত স্বৈরাচার। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাগ্যবান রাজনীতিবিদ। কারণ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের কাছেই কদর পেয়েছেন। আজ যখন জাতীয় পার্টির নেতারা বলেন, এরশাদকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আখ্যান অস্পূর্ণ থেকে যাবে। তাদের সেই কথাটাকে গুরুত্ব দিতেই হবে।' স্বৈরাচার' এরশাদকে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের ছাত্র-জনতা ঠিকই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার জন্য ইতিহাসের কালো অধ্যায়কে চিহ্নিত করে রেখেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিবিদরাই তার সেই কালো অধ্যায়কে ক্ষমতার সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তাই এরশাদকে বাদ দিয়ে কেন যেন অস্পূর্ণই মনে হয় এদেশের রাজনীতি।

তবে তার রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টি এবার দেশের অন্য দুটো বড় দলের পথেই হাঁটলো। তারাও দলের নেতৃত্ব বেছে নিলেন পরিবার থেকে। ক্ষমতার ভাগাভাগিটাও করলেন পরিবারে মধ্যে। দেশের তিনটা বড় রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের রিপোর্ট যদি একই হয়, তাহলে দেশের গণতন্ত্রে জনগণ আদৌ কোন ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনায় আসবে কী!

তিনটা দলেরই নেতৃত্ব নির্বাচনের ল্যাবরেটরি একই। সেই ল্যাব থেকে আগামী দিনের দক্ষ-বিচক্ষণ-জনবান্ধব-দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ বেরিয়ে আসবেন সেটা আশা করা কঠিন। বরং অর্থশালী-বিত্তবান-ক্ষমতালিপ্সু মানুষগুলোকেই এদেশের রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারাই সংসদে দলের নেতানেত্রীর প্রশংসা করে নিজেদের আখের গোছাবেন। জনগণ আর তাদের স্বার্থ থেকে যাবে উপেক্ষিত। বাংলাদেশের রাজনীতির এটাই এখন বাস্তবতা।

লেখক : সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক।

এইচআর/পিআর

তিনটা দলেরই নেতৃত্ব নির্বাচনের ল্যাবরেটরি একই। সেই ল্যাব থেকে আগামী দিনের দক্ষ-বিচক্ষণ-জনবান্ধব-দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ বেরিয়ে আসবেন সেটা আশা করা কঠিন। বরং অর্থশালী-বিত্তবান-ক্ষমতালিপ্সু মানুষগুলোকেই এদেশের রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারাই সংসদে দলের নেতানেত্রীর প্রশংসা করে নিজেদের আখের গোছাবেন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।