চারদিকে গুজব ও ম্যাচকাঠি আমরা!

মনদীপ ঘরাই
মনদীপ ঘরাই মনদীপ ঘরাই
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

অনেকেই ইনবক্সে অনুরোধ করেছেন কিংবা জানতে চেয়েছেন, গুজব নিয়ে কিছু লিখতে কিংবা এখনো কেন লিখছি না? সত্যি বলতে কি, গুজব নিয়ে লেখাটাও এখন আতঙ্কের। বলা তো যায় না, লেখার কোন অংশ না জানি আবার গুজব হয়ে দেখা দেয়। তবে, চারপাশে গুজবের আকারটা এতটাই পেটমোটা হচ্ছে, যে আর কলম না ধরে পারলাম না।

নিশ্চয়ই লেখা পড়তে পড়তে শিরোনামের একটা শব্দের দিকে চোখ আটকেছে: " ম্যাচকাঠি"। এ ব্যাখ্যাটা লেখার পরের অংশে দেব। তবে এখন জানানো প্রয়োজন কোন্ গুজবটা আমাকে লেখায় টেনে আনলো? না। পেছনের দিনগুলোর কোন গুজব না। লিখতে বসেছি হারপিক আর ব্লিচিং পাউডারের গুজবটা দেখে। রাগে গা জ্বলছে!

কতটা নির্বুদ্ধিতা থেকে বলা যায়, হারপিক ও ব্লিচিং পাউডার বেসিনে ঢেলে মশার বংশ ধ্বংস হবে! সত্যিই ভাবনা-চিন্তার বাইরের একটা ব্যাপার। তবে, অতসব ভাববার সময় আমাদের কোথায়! বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির আইডি থেকেও দেদারসে শেয়ার হয়েছে এই মিথ্যাচার। এটা ঠেকাতে আবার কাউন্টার শেয়ার করতে হচ্ছে শুভ বুদ্ধির সবাইকে।

তা না হয় করলাম, কিন্তু ভাগ্যিস এই গুজবে তো তবু শুক্রবার দিনের কথা উল্লেখ ছিল বলে কাউন্টার করার সময় মিলেছে। ছেলেধরা গুজবে তো সে সময়ও মেলে নি একেবারে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝরে গেছে রেনুর মত নির্দোষ মায়ের প্রাণ।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, শিক্ষিত মানুষের কাজ এটা হতেই পারে না! আমারও তো শুরুতে শুরুতে তাই মনে হতো। আস্তে আস্তে ভুল ভাঙ্গছে। কজন অশিক্ষিত গন্ড মুর্খ আছে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে? তবু তো ইনবক্স ভরে যাচ্ছে গুজবে। কারণটা তবে কি?

কারণটা বিশ্বাস। আমরা ফেসবুকে কিছু দেখলেই বিশ্বাস করে বসি অবলীলায়। অদ্ভুত কোন এক কারণে ফেসবুক এই বিশ্বাসটা অর্জন করে নিতে পেরেছে, যা কিনা এত বছরেও পারে নি আমাদের প্রিয়জনেরা পর্যন্ত!

এই জাদুর নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গেলে ঘাম ছুটতে পারে। একটু করে বলে দেই। জীবনের সব পর্ব ফেসবুকে যেদিন থেকে টেনে নিয়ে আসলাম আমরা, সেদিন থেকে ফেসবুক লুটে নিয়েছে আমাদের বিশ্বাস। এ তো গেল ফেসবুকের কথা। আর আমাদের কি অবস্থান হলো বর্তমান সময়ে?

আমরা হয়ে গেলাম "ম্যাচকাঠি"। আজব তুলনা, তাই তো? ব্যাখ্যা দেই, আশাকরি মেনে নেবেন। আমরা ম্যাচের কাঠির মতো মাথা অর্থ্যাৎ মস্তিষ্ক ঘঁষে দিচ্ছি আগুন বাক্সে বা ফেসবুকের গুজবে। ফলাফল? প্রথমে জ্বলে উঠছে নিজের মাথা। এরপর ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।অবাক হবেন না যেন,ম্যাচকাঠির কাজই তো তাই!

আর নিজের মস্তিষ্কের আগুন নিভে যাচ্ছে অন্য আগুন ছড়িয়ে দেবার পরপরই। তবে, ও আগুন নিভতেই জ্বলে ওঠে নতুন কাঠি, ছড়ায় নতুন আগুন। কল্লা কাটা থেকে হারপিক- এভাবেই তো ছড়াচ্ছে!

এসব ম্যাচকাঠিসম মানুষদের আমরা এত গুরুত্ব না দিলেই পারি!উত্তর হলো,পারবেন না। কারণ,ঐতিহ্যগতভাবে আমরা ম্যাচকাঠিকে গুরুত্ব দেয়া জনগোষ্ঠী। কিভাবে?
একটা ম্যাচকাঠির খরচ বাঁচাতে এই আমরাই তো জ্বালিয়ে রেখেছি গ্যাসের চুলো, ঘন্টার পর ঘন্টা।
চুলো জ্বলেই চলেছে। পুড়িয়ে চলেছে আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান। নতুন নতুন কাঠিতে ধরছে গুজবের আগুন।

দয়া করে একটু ভাবুন, একটা সাদা কাগজ এনে দিলে চোখ বন্ধ করে স্বাক্ষর করবেন? উত্তর না হবে জানি। তবে কেন, অনলাইনের দুনিয়ায় আপনার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে অন্যের পাপ!

গুজব প্রতিহত করুন। সয়ে যাওয়াও কিন্তু অপরাধ।

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

এইচআর/পিআর

জীবনের সব পর্ব ফেসবুকে যেদিন থেকে টেনে নিয়ে আসলাম আমরা, সেদিন থেকে ফেসবুক লুটে নিয়েছে আমাদের বিশ্বাস। এ তো গেল ফেসবুকের কথা। আর আমাদের কি অবস্থান হলো বর্তমান সময়ে?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।