ডেঙ্গু : বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসা হোক
ডেঙ্গু এমন এক অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে যে এর হাত থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আর কতজনকে প্রাণ দিতে হবে? এর কি কোনো প্রতিকার নেই?
রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চলতি বছরের সর্বোচ্চ ৮২৪ জন ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি দুই মিনিটেরও কম সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে একজন করে ডেঙ্গু রোগী। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৮৩ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৫৪ জন। তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মোট আক্রান্তের মধ্যে চলতি মাসের ২৮ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী। হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরা ভিড় করছে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষাসহ স্যালাইন বিনামূল্যে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য ডেঙ্গু জ্বরের এন এস ওয়ানসহ তিন ধরনের পরীক্ষা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সাধারণত প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। এছাড়া আক্রান্তরা পিঠ, দাঁত, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব করে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার আগে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ারও দরকার নেই। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে সচেতনতার কথাও বলেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।
বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে আসা বৃষ্টির কারণেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে এবং সে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১০২ ডিগ্রি ও এরচেয়ে বেশি জ্বর, সঙ্গেই তীব্র মাথা ও শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ে, তীব্র পেট ব্যথা, স্কিন র্যাশ ইত্যাদির সঙ্গে বমিভাব ও ক্ষুদামন্দা থাকলে তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে এন্টিবায়োটিকসহ নানান ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর প্রশমনে কেবল প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি খেলেই চলে। তবে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হতে হবে যাতে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
এইচআর/এমকেএইচ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষাসহ স্যালাইন বিনামূল্যে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য ডেঙ্গু জ্বরের এন এস ওয়ানসহ তিন ধরনের পরীক্ষা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।