আবার ডেঙ্গু আতঙ্ক : বাঁচতে হলে জানতে হবে
এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। সাথে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞও তো চলমান আছে। ফলে ঢাকা শহরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। গর্তে পানি জমে যাচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানি বাসাবাড়ির ছাদে, টবেও জমা হচ্ছে। ফলে মশার উপদ্রব বাড়ছে।
ভরসা ছিল এতদিন যে, সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ ছিটিয়ে দিলে এদের উপদ্রব কমবে। তবে, সে আশায়ও এখন বালি পড়েছে। কারণ সম্প্রতি পত্রিকান্তরে জানতে পারলাম সিটি কর্পোরেশন এখন অবধি মশার যে ওষুধ ছিটাচ্ছে তাতে নাকি মশা মরছে না। সমীক্ষাটা করেছে নামকরা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর, বি। তাদের প্রকাশিত ফলাফলেই এমন ভয়ংকর তথ্য মিলেছে।
আমরা জানি, এডিস মশা থেকেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া হয়। ফলে মশার উৎপত্তিস্থল, তার লার্ভা এবং বয়স্ক মশা– এসবই সমূলে নির্মূল না করতে পারলে আমাদের জন্য ভয়াবহ অবস্থা হয়ত সামনে অপেক্ষা করছে। কারণ এরই মধ্যে এডিস মশা নিজে যেমন ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে তেমনিভাবে তার শরীরে বয়ে বেড়ানো ডেঙ্গুর জীবাণুও নতুনরূপ ধারণ করেছে। এখন এ জীবাণু সেরোটাইপ-৩ নিয়ে হাজির হয়েছে; যার অর্থ হচ্ছে পুরোনো জীবাণু আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। এটাই মূলত চিন্তার বিষয়।
ভাইরাল জ্বর সাধারণত তেমন কোনো উদ্বেগের বিষয় না। কিন্তু ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং সেরোটাইপ-৩ কর্তৃক জ্বর হলে তা বেশ চিন্তার কারণ। তাছাড়া বয়স্ক, হার্টের রোগী এবং শিশুদের জন্য এসব জীবাণু বেশ ভয়ংকর । তাই জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন দ্রুত। তাতে অন্তত জ্বরটি ডেঙ্গু কিনা তা নির্ণয় করা সহজ হবে। তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গুর জটিলতা এড়ানো সহজতর হবে।
জুলাই থেকে অক্টোবর— এ সময়ে এডিস মশার বিস্তার বাড়ে।ফলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। এ সময়ে তাই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যা এবং ভোর রাতে এডিস মশা বেশি কামড়ায়। ফলে বিকেলে বা রাতে যখনই শুতে যাচ্ছেন দয়া করে মশারিটা টাঙিয়ে নিন। বাচ্চাদের সুতির ফুল প্যান্ট এবং গায়ে জামা বা গেঞ্জি পরিয়ে দিন।
সন্ধ্যার দিকে ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে মশার স্প্রে করে নিন। তারপর বিশ মিনিটি রুমটি বন্ধ রেখে—অতঃপর জানালা-দরজা খুলে ফ্যান ছেড়ে দিন। ১০ মিনিট পরে রুমে প্রবেশ করুন। এ কারণে একসাথে সব রুমে স্প্রে না করে একটা বাকি রেখে অন্যগুলোতে করুন। কারণ স্প্রে করে সে রুমে থাকাটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মশার কয়েল জ্বালিয়ে যারা ঘুমান তারা এ বদ অভ্যাস দয়া করে ত্যাগ করুন। শরীরের জন্য এটা ক্ষতিকর তো বটেই। মশাও এতে এখন আর মরে না। ফলে মশারির কোনো বিকল্প নেই।
জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের জুস, শরবত, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন পানি খান। তাহলে শরীরে পানিশূন্যতা হবে না। ডেঙ্গুর জটিলতা শুরু হয় শরীরে পানি ঘাটতি শুরু হলেই। সাথে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। আর যদি দেখেন প্রস্রাবের রং লালচে, দাঁত বা মাড়ি থেকে রক্ত বের হচ্ছে, চামড়ার নিচে রক্তবিন্দু তাহলে একদমই দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ দেরি করলে রোগী শকে চলে যেতে পারে। এটা হচ্ছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক এর লক্ষণ।
তাই আসুন নিজে সতর্ক থাকি। অন্যকে সতর্ক করি। আমরা চাই আতঙ্কহীন একটা সুন্দর, সুস্থ ঢাকা। আর চাই দুই সিটির মেয়র মহোদয় আইসিডিডিআরবির প্রতিবেদনকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে মশার যে ওষুধ এতদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরিবর্তনে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিবেন। কারণ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগকে প্রতিরোধ করা সহজেই সম্ভব যদি আমরা মশার বিনাশ করতে পারি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।
এইচআর/জেআইএম