ওয়ারিতে শিশু হত্যা : নরক আর কত দূর?

শান্তা মারিয়া
শান্তা মারিয়া শান্তা মারিয়া , কবি ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ০৭ জুলাই ২০১৯

বসন্তের শহর। বাতাসে বৃষ্টিভেজা অচেনা ফুলের সুবাস। কিন্তু মন হাহাকার করে উঠছে। কেবলই কান্না শুনতে পাচ্ছি। শিশুর কান্না। যেন ওরই সঙ্গে কাঁদছে বাংলাদেশ। সাত বছরের ছোট্ট একটি শিশু। খেলতে যাচ্ছিল প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে। অথচ তাকে হত্যা করা হলো ধর্ষণের পর। শ্বাসরোধে। তার ছোট্ট দেহটি ছিল রক্তাক্ত। আঘাতের চিহ্ন নিয়ে সে মরে পড়েছিল একটি খালি ফ্ল্যাটের মেঝেতে। ঘটনাটির কথা যতই ভাবছি বুকের ভেতরটা আতঙ্কে হিম হয়ে যাচ্ছে। ছোট্ট শিশুটি তার মৃত্যুর মুহূর্তে কত যন্ত্রণাই না পেয়েছে। কত অসহায় হয়েই না সে ডাকতে চেয়েছিল তার বাবা-মাকে। শিশুটির বাবা-মা, ভাই-বোনদের শোকের তীব্রতা কল্পনাও করা যায় না।

রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোতে তো সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকার কথা। তাহলে ওয়ারির হতভাগ্য শিশুটির হত্যাকারীকে খুঁজে বের করাটা খুব কঠিন না হওয়াই সম্ভব। আশাকরি এবং দাবি জানাই যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীকে গ্রেফতার করে তাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। এই জঘন্য নরাধম কোনোক্রমেই যেন রেহাই না পায়। দ্রুত থেকে দ্রুততর সময়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হোক।

বাংলাদেশে কি ধর্ষণ ও হত্যার মহামারি শুরু হলো? ছোট শিশুদেরও রেহাই নেই এসব নরপিশাচদের হাত থেকে। কোথায় নিরাপদ আমাদের শিশুরা? কোথায় নিরাপদ নারীরা? পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পাঁচ সন্তানের জননী পর্যন্ত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। গ্রামে, শহরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পথে, গণপরিবহনে এমনকি মসজিদের ভেতরেও ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে শিশু ও নারীকে। কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই।

ওয়ারিতে শিশুটিকে হত্যা করা হলো নিজ আবাসিক ভবনের ভেতরেই। একটি ধর্ষণের ঘটনার বিচারহীনতা জন্ম নিচ্ছে আরও অনেকগুলো নারকীয় ঘটনার। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত তাহলে সম্ভাব্য ধর্ষক ও হত্যাকারীরা সতর্ক হতো। শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় হয় অপরাধী ধরাই পড়ে না, অথবা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে। কিংবা বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলে থাকে। শাস্তি বাস্তবায়নের সংখ্যাও অতি নগণ্য। এ কারণেই ধর্ষণের ও হত্যার সংখ্যা বাড়ছে। দরকার দ্রুত বিচারের। বিশেষ দ্রুতবিচার ব্যবস্থায় নারী ও শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার করা দরকার। অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার, দ্রুতবিচার ও দ্রুত কঠোর শাস্তি কার্যকর করলে অপরাধ সংঘটনের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমতো।

চীনে দেখেছি দ্রুতবিচার কাকে বলে। ধর্ষণের শাস্তি এখানে মৃত্যুদণ্ড। ডিএনএ টেস্টে বা অন্যভাবে যদি ধর্ষণ, হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে আর দেরি করা হয় না। অতিদ্রুত বিচার এবং দ্রুত শাস্তি কার্যকর করে ফেলা হয়। বাংলাদেশেও ধর্ষণ ও হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে। কিন্তু নারী ও শিশুসহ সকল মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়ন ও অর্জন মূল্যহীন। ধর্ষণের মহামারি থেকে শিশুহত্যার সর্বনাশ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতেই হবে। ধর্ষকের দেশ, শিশুহত্যার দেশ হিসেবে আমরা পরিচিত হতে চাই না। এমন একটি দিনও যাচ্ছে না যেদিন কোনো না কোনো ধর্ষণের ঘটনা না ঘটছে।

হত্যা ও ধর্ষণ যেন ডালভাতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৪ শিশু। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩৯৬ নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

এই হত্যাকারী ও ধর্ষকদের কারণে আমাদের মাতৃভূমি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। সোনার বাংলা নরকে পর্যবসিত হতে যাচ্ছে। যে দেশে নরপিশাচদের থাবা থেকে শিশুরাও রেহাই পায় না তা থেকে নরকের দূরত্ব আর কতটুকু?

লেখক : কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক।

এইচআর/বিএ/জেআইএম

বাংলাদেশেও ধর্ষণ ও হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে।

গ্রামে, শহরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পথে, গণপরিবহনে এমনকি মসজিদেও ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে শিশু ও নারীকে। কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।