কী দেবে চীন: ফিরে যাবে রোহিঙ্গারা?

মোস্তফা কামাল
মোস্তফা কামাল মোস্তফা কামাল , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৯

কঠিন এক বাস্তবতায় অর্থবছরের প্রথম দিন পয়লা জুলাই চীন সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরবেন ৬ জুলাই। তার এবারের হাই-প্রোফাইল চীন সফরের আসল টার্গেট মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করা। রোহিঙ্গার নাটাই বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ চীনের হাতে। তাদের ওপরই নির্ভর করছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এর নেপথ্যে নানা স্বার্থ। মিয়ানমারের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বলবর্ধকের আসনে প্রতিবেশী চীন। আবার ভারতের সঙ্গেও চমৎকার সম্পর্ক মিয়ানমারের। যার জেরে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর দ্বি-পক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করেও ফল আসছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও মিয়ানমারকে প্রোটেকশন দিচ্ছে চীন। এসব কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে চীনের সহযোগিতার বিকল্প নেই। সেইক্ষেত্রে চীনকে আয়ত্বে নেয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতিও নেই।

দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে। এতে বাংলাদেশে চীনের বিশাল ব্যবসা ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়তে পারে-চীনকে এমন বার্তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু, চীনের প্রতিক্রিয়া বা মতিগতি এখনো রহস্যাবৃত। এই বাস্তবতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দিনের চীন সফর। এখন পর্যন্ত খবর হচ্ছে-সফরকালে বাংলাদেশ এবং চীন অর্থনৈতিক, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ৮টি চুক্তি সই হবে। কিন্তু, মিয়ানমারকে দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চীন কী ভূমিকা নেবে? এ সংক্রান্ত কী শুভসংবাদ নিয়ে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী? সেই খবর তোলাই থাকছে। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এরপরও আশায় বুক বাঁধতে হবে প্রধানমন্ত্রীর ফিরে আসা পর্যন্ত। এমন কি তারপরও। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের অধীর প্রতিক্ষাও তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের ফলাফলের দিকে। 

চীনকে বোঝা বরাবরই কঠিন। কখনো কখনো আন্দাজও করা যায় না। দেশটির নেতৃত্বের মতিগতিও রহস্যঘেরা। বাংলাদেশের নির্বাচন পরবর্তী বিষয়ে চীনের ভূমিকা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে বিশেষ কৌতূহল । বেশির ভাগ ইস্যুতে চীনের নীতিনির্ধারকেরা বরাবরই খুব সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া দেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকেরা চীনের গতিবিধি বুঝতে বেশ সময় নেন। চারদিকের আলামত বোঝার চেষ্টা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও চীনের ভূমিকায় অনেক কিছুই স্পষ্ট। এ অস্পষ্টতার মধ্যেই মোটামুটি নিশ্চিৎ চীন না চাইলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে না। 

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রাচীন। প্রায় তিন হাজার বৎসরের। বাঙালি সভ্যতা ও চীনা সভ্যতার মাঝে খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে থেকে যোগাযোগ আছে। প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে চীন এবং বাংলায় মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে চীন বাংলাদেশের আধুনিক কূটনৈতিক সম্পর্কের গোড়া পত্তন হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম পার্টনার চীন। শেখ হাসিনার টানা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে ভাবনমুনায় সেটার আলামত রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি চীন অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। নতুন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ায় শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং। শেখ হাসিনাকে তাদের তড়িঘড়ি অভিনন্দন জানানোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রতিযোগিতার নমুনা ভেবেছেন অনেকে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের পরদিনই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বার্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে যান। শেখ হাসিনার হাতে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন নৌকার মডেল ।

বাংলাদেশেও চীনের স্বার্থ কম নয়। এক হিসাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঢাকা সফর করার পর ২ হাজার কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশকে আগে কখনোই একসঙ্গে এতো অর্থসহায়তা দেয়নি অন্য কোনো দেশ। অতি ঋণে বাংলাদেশ চীনের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অতি ঋণের ফাঁদের বিষয়ে অবগত এবং সজাগও আছে সরকার। উপকার হবে না এমন কোনো ঋণ যেন কেউ জোর করে গছাতে না পারে সেই ব্যাপারে সতর্কতার কথাও জানান তিনি।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য কতো বড় বোঝা এবং ঝুঁকি সেটা এতদিন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও কিছুদিন আগ থেকে বলা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। চীন যাত্রার কয়েকদিন আগে তিনি সংসদে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অতিদ্রুত ফেরত না পাঠাতে পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারের ১১ লক্ষাধিক নাগরিকের জন্য অনির্দিষ্টকাল অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা দুরূহ ব্যাপার। এ রকম অবস্থায় তার চীন সফরটি তাৎপর্যে ঠাসা। আর বাকিটা ভবিষ্যত।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য কতো বড় বোঝা এবং ঝুঁকি সেটা এতোদিন বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও কিছুদিন আগ থেকে বলা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। চীন যাত্রার কয়েকদিন আগে তিনি সংসদে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অতিদ্রুত ফেরত না পাঠাতে পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারের ১১ লক্ষাধিক নাগরিকের জন্য অনির্দিষ্টকাল অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা দুরূহ ব্যাপার। এ রকম অবস্থায় তার চীন সফরটি তাৎপর্যে ঠাসা। আর বাকিটা ভবিষ্যত।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।