হ্যাঁ ভাই আসিতেছে, রূপালী পর্দায়…

প্রভাষ আমিন
প্রভাষ আমিন প্রভাষ আমিন , হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ
প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ১০ জুন ২০১৯

আবীর শ্রেষ্ঠ উদ্যমী, তারুণ্যে ভরপুর। সারাক্ষণই কিছু না কিছু করছেন। মাথায় সিনেমার পোকা কামড়ায়, সারাক্ষণই ছটফট করেন। তারা টি-সিনেমার ব্যানারে ‘গণঅংশগ্রহণে স্বাধীন চলচ্চিত্রযাত্রা’ শুরু করেছেন। তাদের স্লোগান হলো ‘জনগণের সিনেমা, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য।’ কদিন আগে তারা শিল্পকলা একাডেমিতে টি-সিনেমার উদ্যোগে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন । সে আয়োজনে সিনেমা বিষয়ক আলাপও ছিল।

আবীর শ্রেষ্ঠ সেই আলাপের এক পর্বে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বসেন। প্রথমে ভেবেছি, ভুলে আমাকে বলছেন। কারণ দর্শক ছাড়া সিনেমার ব্যাপারে আমার আর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আবীর তাতেও দমলেন না। বললেন, দর্শক হিসেবেই বলুন। আমি বললাম, দর্শকও তো সাবেক। তাতেও আপত্তি নেই। অনুরোধে ঢেকি গিলে সময়মত গেলাম। গিয়ে দেখি আগের সেশনের আলাপ চলছে তখনও। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জুনায়েদ হালিমের মত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা কথা বলছিলেন। পেছনে বসে শুনতে শুনতে একাধিকবার মনে হলো, ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যাই। কারণ আমার সেশনেও দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আছেন। আর দর্শক সারির সবাইও চলচ্চিত্রবোদ্ধা, আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। এদের সামনে বলার মত সিনেমা জ্ঞান আমার নেই। বরং বলতে গেলে নিজের মূর্খতাটা ওপেন হয়ে যাবে।

তবে পালাতে পারিনি, ফাঁদে পড়া আমাকেও বলতে হয়েছে। যথারীতি আমি দর্শক হিসেবে বলেছি, শিল্পকলায় উপস্থিত শ্রোতারা হয়তো তৃণমূলের দর্শকের কথা শুনে হেসেছেন। কদিন আগে আমার এক তরুণ সহকর্মীর সাথে সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি জানালেন, সারাজীবনে তিনি হলে গিয়ে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমা দেখেছেন। তাও তার দৌড় বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স পর্যন্ত। শুনে মায়াই লাগলো। আহারে বেচারা সিনেমা দেখার আনন্দটাই পেলো না। মারামারি করে ব্ল্যাকে টিকেট কেটে ভ্যাপসা গরমে হলে বসে সিনেমা দেখার আনন্দের সাথে কি মেলানো যাবে সিনেপ্লেক্সে করপোরেট পরিবেশে পপ কর্ন খেতে খেতে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতাকে? আসলে আমাদের সময়ে সিনেমা দেখাই ছিল বিনোদনের মূল উৎস।

আশির দশকে ভিসিআর আসার আগ পর্যন্ত ছিল একমাত্র উৎস। ভিসিআর আসার পরও হারিয়ে যায়নি হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আনন্দ। আমি প্রথম সিনেমা দেখেছিলাম সম্ভবত ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের গুলজার হলে। দেখেছিলাম বড় বোনের কোলে বসে। `রাজদুলারী’ নামের সেই সিনেমার কিছুই মনে রাখার বয়সও ছিল না তখন। নায়িকা ছিলেন শাবানা, নায়ক সম্ভবত ওয়াসিম। তবে হল থেকে বেরিয়ে ঝকঝকে রোদ্দুর দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম। হলের ভেতরে রাত, বাইরে দিন- এ কেমন জাদু।

চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হলে সপরিবারে দেখতে গিয়েছিলাম সোহেল রানা-ববিতার ‘মিন্টু আমার নাম’। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অর্ধেক দেখেই ফিরে আসতে হয়েছিল। আমরা প্রয়োজনে সারারাত অপেক্ষা করতেও রাজি ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পর আব্বার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছিল। অর্ধেক সিনেমা দেখে ফিরে আসার সেই কষ্টের কোনো তুলনা নেই। এখনকার ছেলেমেয়েরা সেই কষ্টটা বুঝবেই না। শুনলে হাসবে, ইউটিউবে দেখে নিলেই হলো। কিন্তু অনেক খুঁজেও `মিন্টু আমার নাম’ এর কোনো কপি কোথাও পাইনি।

তারপর টুকটাক দেখলেও আশির দশকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময়ের দুই বছরে কয়েকশ’ সিনেমা দেখে ফেলেছিলাম। ১২টা, ৩টা, ৬টা, ৯টা এই ছিল সিনেমার শো। শুক্রবারে মর্নিং শো। পরীক্ষা থাকলে কোনো কোনো দিন একাধিক শো দেখার অমানবিক অভিজ্ঞতাও আছে। দীপিকায় এক শো শেষ করে দৌড়ে চলে যেতাম লিবার্টিতে। কুমিল্লায় তখন ৫টি সিনেমা হল ছিল- দীপিকা, লিবার্টি, রূপকথা, মধুমতি, রূপালি। সবগুলোতেই ছিল আমার নিয়মিত যাতায়াত। দীপিকা ভেঙ্গে ফেলেছে। লিবার্টি অনেক আগেই পরিত্যক্ত। রূপকথা-রূপালীর খবর জানি না, তখনই পরিত্যক্তপ্রায় ছিল। মধুমতিই যা একটু ভদ্রস্থ ছিল।

সিনেমা দেখার টাকা নাকি ভূতে জোগায়। আসলেই ভূতে জোগায়। হোস্টেলে থাকার জন্য আব্বা গুণে গুণে টাকা দিতেন। সেই টাকা থেকে কিভাবে সিনেমা দেখার টাকা বের করতাম, এখনও ভেবে পাই না। কোনো দক্ষ সিএফও’ও সে হিসাব মেলাতে পারবে না। হিসাব মেলাতে রিয়ার স্টলেও অনেক সিনেমা দেখেছি। আগে বাংলাদেশে একটা আলাদা পেশাই ছিল- ব্ল্যাকার। তারা সুপারহিট সিনেমার টিকেট ব্ল্যাকে মানে কালোবাজারে বিক্রি করতো বাড়তি দামে। সেই বাড়তি টাকা বাঁচাতে আগে গিয়ে লম্বা লাইন ধরে টিকেট কিনতে হতো। তাও সবসময় পাওয়া যেতো না। না পেলে ব্ল্যাকারই ভরসা। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো সিনেমা হিট করতো, তাই‘ব্ল্যাকার’ পেশাটাও বেশ আকর্ষণীয় ছিল।

এখন সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। সেই সিনেমাও নেই, বিলুপ্তি ঘটেছে সেই ‘ব্ল্যাকার’ পেশারও। ‘হাউসফুল’ লেখা বোর্ডও এখন আর দেখা যায় না। ঢাকা আসার পর আস্তে আস্তে আমার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে আর ঢাকাই সিনেমার অধঃপতন ঘটতে থাকে। এখন তো শুনি এফডিসি প্রাণহীন কিছু ভবন মাত্র। আগে যে এফডিসির গেটে কয়েকশ লোক দাঁড়িয়ে থাকতো, এখন নাকি তাও থাকে না। ঢাকা আসার পর গত ২৮ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি ছবি দেখেছি। ইদানিং তো বিশেষ সিনেমার প্রিমিয়ার শো ছাড়া হলে যাওয়াই হয় না। যাওয়া যে হয় না, তার জন্য ব্যস্ততা কিছুটা দায়ী, তারচেয়ে বেশি দায়ী অনীহা।

আমি মোটেই উন্নাসিক নই। সুযোগ পেলে এখনও টিভিতে পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমা দেখি। হলে টেনে নেয়ার মত সিনেমা বানালে নিশ্চয়ই যাবো। এমনিতে আমি অনেক আশাবাদী মানুষ। কিন্তু বাংলা সিনেমার ব্যাপারে আমি আশাবাদী হওয়ার মত কোনো সুযোগ দেখছি না। অথচ বিশ্বজুড়ে এখনও সিনেমার রমরমা। কদিন আগে এই ঢাকাতেই অ্যাভেঞ্জার্স সিনেমার টিকেটের জন্য তরুণ প্রজন্ম রাত জেগে হলের সামনে লাইন দিয়েছে। ভালো সিনেমা হলে নিশ্চয়ই তারা বাংলা সিনেমা দেখার জন্যও লাইন দিতো। বাংলাদেশের সিনেমা পথ হারালো কবে? সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তবে অন্তত তিন ধারায় বিভক্তি সিনেমাকে দুর্বল করেছে। একসময়ের এফডিসিকেন্দ্রিক মূলধারা এখন মৃতপ্রায়। আশির দশকে শুরু হওয়া বিকল্প ধারার সিনেমাও এখন দুর্বল। আর এফডিসিকে নাক সিটকে সম্প্রতি টেলিভিশনকেন্দ্রিক সিনেমার ধারাটিই কিছুটা টিমটিম করে জ্বলছে।

আশির দশকে ‘আগামী’, ‘হুলিয়া’ দিয়ে এফডিসির বাইরে স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমার যে যাত্রা শুরু, সেটি আমাদের সিনেমার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তবে বিকল্পধারার নামে সিনেমাকে এফডিসির বাইরে নিয়ে আসাটা কতটা ভালো হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার কিছু সংশয় আছে। আমি সবসময় এফডিসি দখল করে সিনেমা বদলে দেয়ার পক্ষে, বের করে আনার নামে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার নয়। বিকল্পধারার সিনেমার গুরু আলমগীর কবির কিন্তু দাপটের সাথে এফডিসি শাসন করেছেন। আলমগীর কবিরের বানানো মূলধারার সিনেমা ‘সীমানা পেরিয়ে’ বা ‘রূপালী সৈকতে’ দেখার আনন্দের স্মৃতি এখনও ম্লান হয়নি। তবে সিনেমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন, যারা এখন সিনেমার জন্য সবচেয়ে বেশি মায়াকান্না কাঁদেন, তারা। তারা সিনেমাকে বড় পরিসরের হল থেকে টেলিভিশনের পর্দায় বন্দী করে ফেলেছেন।

সিনেমাকে এখান থেকে মুক্ত করে আবার বড় পর্দায় সাধারণ মানুষের কাছে নিতে পারলেই সিনেমা বাঁচবে। বিকল্পধারার নামে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচানোর কথা বলছেন, তাদের আন্তরিকতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জীবনে বহু আলতু ফালতু সিনেমা দেখেছি। কিছু ভালো সিনেমাও দেখেছি। আমার কাছে সিনেমা দেখে আনন্দ পাওয়াটাই সার। সিনেমার গ্রামার বুঝি না। তবে একটা জিনিস বুঝেছি সিনেমা আর টেলিভিশনে আকাশ পাতাল ফারাক আছে। আপনার সিনেমা বোঝার দরকার নেই।

বিদেশি চ্যানেল সার্ফ করার সময় নাম বা অভিনেতা-অভিনেত্রী না দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন কোনটা সিনেমা আর কোনটা নাটক। কিন্তু বাংলাদেশে এখন সিনেমা আর নাটকের পার্থক্য ঘুঁচে যাচ্ছে। সারা জীবন দেখে এসেছি, সিনেমা আগে হলে মুক্তি পায়। তারপর পুরোনো হলে সেগুলো টিভিতে দেখানো হয়। আর ইদানিং ঘটছে উল্টো ঘটনা। এখন সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় টিভি পর্দায়। তারপর দুয়েকটা হলে দুয়েক সপ্তাহ চলে বা না চলে। এগুলোকে বলা হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা। দৈর্ঘ্যে হয়ত পূর্ণ, কিন্তু আসলে সিনেমাই নয়।

টেলিভিশনের নাটককে একটু লম্বা করে তার গালভরা নাম দেওয়া হয় টেলিফিল্ম। আর সেই টেলিফিল্মে দুটি গান জুড়ে দিলেই হয়ে যায় পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা! এই তথাকথিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা’র দৌরাত্ম্যে মূলধারার বাংলা সিনেমার প্রাণ যায় যায়। এইসব তথাকথিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা’র হিসাব অন্যরকম। তারা অনেক কম টাকায় সিনেমা বানিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিভির নায়ক-নায়িকাদের নেওয়া হয়। প্রোডাকশনও হয় টিভি মানের, সিনেমা মানের নয়।

চলচ্চিত্রকে হল থেকে টিভিতে বন্দি করার কৃতিত্ব (!) তাদের। কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য এদের কান্নাটা বেশি। সিনেমা গেল গেল বলে শোরগোল তুলে এরা সিনেমা বাঁচানোর দায়িত্ব তুলে নেন কাঁধে। বাঁচানোর নয়, আসলে ধ্বংসের। এই ধারার সিনেমার মূল ব্যবসাটা নাকি অন্য। অমুক নিবেদিত, তমুক প্রযোজিত ইত্যাদি ইত্যাদি নামে নানা কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। গানের অ্যালবাম বিক্রি করে টাকা নেওয়া হয়। টিভিতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করার সময়ও বিজ্ঞাপন নেওয়া হয়। তাই এইসব সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগেই প্রযোজকদের টাকা উঠে আসে। এরপর ভদ্রতা করে হলে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয় বটে, তবে দর্শক দেখল কি দেখল না তাতে কিছু যায় আসে না। বক্স অফিস জানেই না, কিন্তু সিনেমা সুপারহিট।

এই সিনেমাপ্রেমীরা মূলধারার বাংলা সিনেমার ব্যবসা কঠিন করে দিচ্ছে। আবার কিছু বাংলা সিনেমা আছে বাংলাদেশে মুক্তিই পায় না বা পেলেও অনেক পরে। শুরু করে নানা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে। সেখান থেকে নানা পুরস্কার-টুরস্কার নিয়ে আমাদের গর্বিত করে যখন দেশে ফিরে, তখন দেখি আরে এতো সিনেমাই নয়, বড় দৈর্ঘ্যের টেলিফিল্ম। বাংলাদেশের সিনেমার মান অনেক খারাপ, কিন্তু খারাপ হলেও তো সেটা সিনেমা। কিন্তু এখন যেসব সিনেমা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সেগুলো তো আসলে সিনেমাই নয়। বাংলাদেশের এখনকার সিনেমা প্রেমিকরা এফডিসির নাম শুনলেই নাক সিটকান। কিন্তু আমি, বলে রাখছি, এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমার পুনর্জাগরণ ঘটাতে না পারলে সিনেমা শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকারই থাকবে।

তবে আশার কথা হলো, প্রতিভাবান তরুণরাও এখন সিনেমার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, সিনেমা শখ করে বানানোর জিনিস নয়। আপনি শখ করে কবিতা লিখতে পারবেন, গল্প লিখতে পারবেন। বন্ধু-বান্ধব থাকলে ছাপতেও পারবেন। কিন্তু সিনেমা মানেই কোটি টাকার মামলা। মায়ের গয়না বিক্রি করে সিনেমা হয় না। তাই এমন সিনেমা বানাতে হবে, যাতে দর্শক দেখে, প্রযোজকের লগ্নি ফিরে আসে। জনগণের কাছে যেতে হবে।

আপনি খুবই প্রতিভাবান, বুদ্ধিজীবী। দুর্দান্ত সিনেমা বানালেন। আপনার বন্ধুরা রিভিউ দিয়ে ফেসবুক ভাসিয়ে ফেললো। আর আমাদের মত সাধারণ মানুষের মাথার ওপর দিয়ে গেল। তাতে কিন্তু কোনো লাভ নেই। দর্শকরা পকেটের পয়সা দিয়ে সিনেমা দেখতে আসবে, আপনার আঁতলামি দেখতে বা লেকচার শুনতে নয়। আপনি যদি দর্শককে কোনো বার্তা দিতে চান, সমাজ বদলাতে চান; সেটাও কিন্তু গল্পের মধ্যেই দিতে হবে। আমির খানের সিনেমা দেখতেও ভালো লাগে, আবার ভাবায়ও। আপনার বানান না তেমন সিনেমা।

দর্শকদের ওপর দোষ দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা,সীমাবদ্ধতাকে ঢাকার চেষ্টা করবেন না। এখন ভালো সিনেমা হলে দর্শক হলে যায়। হঠাৎ বৃষ্টি থেকে শুরু করে মনপুরা, হালের ঢাকা অ্যাটাক, আয়নাবাজী দেখতে তো দর্শকের অভাব হয়নি। ৩৫/৪০ বছর আগে দেখা অনন্ত প্রেম, ছুটির ঘণ্টা, অশিক্ষিত, নয়নমনির সংলাপসহ এখন মানুষের মুখস্থ। সেই আমলের গান এখন গুনগুন করি। আপনার তেমন সিনেমা বানান, তেমন গান বাধুন। আমরা পকেটের পয়সা দিয়ে, লাইন ধরে গিয়ে সিনেমা দেখবো। যে সিনেমা বোঝার জন্য অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করতে হবে, সেটা দিয়ে সিনেমা বাঁচবে না। ভালো সিনেমা বানালে দর্শকরাই আপনাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করবে।

এই যে একটা ঈদ গেল। আগে ঈদ মানেই ছিল সিনেমার জন্য রমরমা সময়। ঈদের সময় কোন দুটি সিনেমা মুক্তি পাবে, তা নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। ঈদে মুক্তি মানেই সুপারহিট। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে দুটি করে সিনেমা মুক্তি পেতো। শুক্রবারে পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকতো সিনেমার বিজ্ঞাপন। চিত্রালী, পূর্বাণীর পাতা কেটে মানুষ ঘর সাজাতো। বেতারে ভেসে বেড়াতো মাজহারুল ইসলাম, নাজমুল হুসাইনের কণ্ঠ, ‘ হ্যাঁ ভাই আসিতেছে, রূপালী পর্দায়…।‘ সিনেমাকে সেই জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে।

সিনেমাকে আঁতেলদের টেবিল থেকে সাধারণ মানুষদের কাছে নিতে হবে। সবাই মিলে এফডিসিকেন্দ্রিক ধারাটি সবল করুন, মেধা দিয়ে দখল করুন। আলমগীর কবির যদি ৪৫ বছর আগে পারেন, আপনারা পারবেন না কেন। এফডিসিতে বছরে একশোটা সিনেমা হোক। তার মধ্যে ৯০টা বাণিজ্যিক সিনেমা হলে, ১০টা ভালো সিনেমাও বানানো সম্ভব। সবাই মিলে সেই চেষ্টাটাই করতে হবে। দর্শকদের রুচির মান বাড়াতে হবে ভালো সিনেমা বানিয়েই, লেকচার দিয়ে নয়। দর্শকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। অশ্লীলতাকে কিন্তু দর্শক প্রত্যাখান করেছে। তাই ভালো সিনেমা বানান, সেটা নিয়ে জনগণের কাছে যান। তারা পকেটের পয়সা দিয়েই দেখবে।

এইচআর/এমএস

‘আশির দশকে ভিসিআর আসার আগ পর্যন্ত ছিল একমাত্র উৎস। ভিসিআর আসার পরও হারিয়ে যায়নি হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আনন্দ। আমি প্রথম সিনেমা দেখেছিলাম সম্ভবত ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের গুলজার হলে। দেখেছিলাম বড় বোনের কোলে বসে। `রাজদুলারী’ নামের সেই সিনেমার কিছুই মনে রাখার বয়সও ছিল না তখন। নায়িকা ছিলেন শাবানা, নায়ক সম্ভবত ওয়াসিম। তবে হল থেকে বেরিয়ে ঝকঝকে রোদ্দুর দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম। হলের ভেতরে রাত, বাইরে দিন- এ কেমন জাদু। ’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।