রমজানে স্বস্তির সড়ক হবে কি?

নাসরীন গীতি
নাসরীন গীতি নাসরীন গীতি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ০৭ মে ২০১৯

রমজানে জনভোগান্তি দূর করার একটা দাবি থাকে সবসময়। সিয়াম সাধনার এই মাসটি নির্বিঘ্নে পালনে মুসল্লীরা ইফতার-সাহরীসহ খাবার সামগ্রীর বাজার সদাইসহ সবকিছুরই প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সংযমের এই মাসটি যথাযথভাবে পালনে, পরিবর্তন আনে অফিসের সময়-সূচিতেও। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয় রোজার মাসজুড়ে। কিন্তু তারপরও কি কমে যানজট?

এ বছর আরবী রমজান মাস এসেছে বাংলার গ্রীষ্মকালে, যে কালটিতে উষ্ণতার মাত্রা তীব্রতর হয়। তারপর বেশিরভাগেরই থাকে বাসায় ইফতার করার তাড়া। পাশাপাশি নাগরিক জীবনে বিভিন্ন সংগঠনের থাকে ইফতার আয়োজন। থাকে রোজা শেষে ঈদ-উল ফিতর উদযাপনের জন্য কেনাকাটা।

সব মিলিয়ে নগরের সড়কগুলোর উপর চাপ অনেকটাই বাড়ে। প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায় রোজার মাসে সর্বোচ্চ চাপ পড়ে সড়কে। বিশেষ করে সময়মতো বাসায় ফিরে ইফতারি করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে নগরবাসীর জন্য। এসময় সড়কে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে মাঠে সর্বশক্তি নিয়োগ করে পুলিশের ট্রাফিক শাখা। আর প্রতিবার নগরবাসীর প্রত্যাশাও থাকে এত কিছুর পরও সড়ক দেখভালের দায়িত্ব প্রাপ্তরা এই একটা মাস অন্তত নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক চলাচল নিশ্চিত করবেন। কিন্তু আদৌ কি প্রত্যাশার প্রাপ্তি মিলবে।

স্বাভাবিক চলাচলের জন্য একটি শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা জরুরি, এমনটাই বলে থাকেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। যদিও রাজধানী ঢাকায় রাস্তা আছে তার আয়তনের মাত্র আট ভাগ। এর ওপর যত্রতত্র পার্কিং, অবৈধ বাজার, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা কারণে সরু হতে হতে সড়ক ব্যবস্থা ক্রমেই পৌঁছেছে শোচনীয় অবস্থায়। এরকম এক সময়ে দাঁড়িয়ে এবারের রমজানে সড়ক কতখানি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে তা একটু চিন্তার বিষয় বৈকি!

এবারের পরিস্থিতি জটিল হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলছে উন্নয়ন কাজ। বিশেষ করে পুরোদমে মেট্রোরেলের কাজ চলছে বৃহত্তর মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন এলাকায় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত।

এছাড়া, এবারের রমজান মাস যাবে বর্ষা মৌসুমে। ফলে বেশ ভোগাতে পারে জলাবদ্ধতাও। সব মিলিয়ে রমজানে সড়ক নাজুক হওয়ার লক্ষণ দেখছেন সাধারণরা। আমাকে প্রতিদিনই ন্যূনতম দুইবার বাইরে বের হতে হয়। আর প্রতিদিনই অফিস আর বাসায় আসা-যাওয়ায় পোহাতে হয় পথের বিড়ম্বনা। আজও আমার এক সহকর্মী, যানজটসহ সর্বোচ্চ একঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়েছেন প্রায় পৌণে তিন ঘণ্টায়। এ যদি হয়, রমজানের আগ মুহূর্তের চিত্র, রমজান শুরু হলে কি হবে?

উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটু রাজধানীর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের পরিসংখ্যানটা জানা প্রয়োজন। আগে সড়কের পরিমাণ বলেছি। বিআরটিএ'র তথ্যমতে, রাজধানীতে প্রতিদিন রাস্তায় নামছে প্রায় সাড়ে চারশ' যানবাহন, যার অধিকাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি। যা যানজটকে আরো বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তার সাথে আগের ফিটনেসবিহীন গাড়িও চলছে। আছে রিক্সা, মোটরসাইকেল, সাইকেল। একই সড়কে চলে ভ্যানসহ নানা যানবাহন।

তবে এবারও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখলাম যে, সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিয়েছেন রোজার মাসে জনভোগান্তি কমাতে সাধ্যমত ভূমিকা রাখবেন তারা। এখন নগরবাসীর এটাই দেখার বিষয় রমজানে সড়ক কতটা স্বস্তির হয়। শুধু নগরেই নয়, ঈদ উদযাপনে বাড়ি যেতেও স্বস্তির সড়ক চান জনগণ।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/এমকেএইচ

প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায় রোজার মাসে সর্বোচ্চ চাপ পড়ে সড়কে। বিশেষ করে সময়মতো বাসায় ফিরে ইফতারি করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে নগরবাসীর জন্য।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।