জাহিদের শপথ ও রাজনীতিতে বিএনপির প্রাসঙ্গিক থাকার সংগ্রাম

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা , প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি।
প্রকাশিত: ১২:১৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে তাঁকে শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ নিয়ে দুজন ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে শপথ নিলেন। আরেকজন গণফোরাসম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট আটজন নির্বাচিত হন। তার মধ্যে বিএনপি থেকে ছয়জন ও গণফোরাম থেকে দুজন নির্বাচিত হন।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো মির্জা ফখরুল ছাড়া আর কাউকেই দলটি আটকে রাখতে পারবে না শপথ নেয়া থেকে। তবে দলের অনির্বাচিত নেতাদের হুমকি ধামকি চলতেই থাকবে। গয়েশ্বর রায় বলেছেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন তারা গণদুশমন হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রশ্ন হলো, গয়েশ্বর নিজে, কিংবা ড. খন্দকার মোশরাফ হোসেন, মওদুদ আহমেদের মত নেতারা নির্বাচিত হলে কি শপথে এত বিলম্ব হত? অথবা শপথ নিলে গণদুশমন বলা হত?

বিএনপি নেতারা বলে চলেছেন যে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাহিদুর রহমান সংসদে গেছেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তটা কি? কে নেয়? কিভাবে নেয়া হয়? সিদ্ধান্ত নেয়ার কেন্দ্র কোথায় – ঢাকা না লন্ডন? এসব প্রশ্নের উত্তর আসলে খোদ বিএনপির ভেতরেই নাই।

জাহিদুর রহমানের মত যারা শপথ নিতে চান তারা তাদের নিজের এলাকার ভোটারদের প্রতি অঙ্গীকার রক্ষা করতে চান। সংসদে গিয়ে দলের এবং দেশের কথা বলতে চান। আরেকটি বিষয় রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল – সংসদে না যাওয়ার বিনিময়ে দল তাদের জন্য কি রেখেছে?

যদি এমন হত যে, দল রাজপথে এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি করেছে যা সংসদে যাওয়ার চেয়ে আকর্ষণীয় তাহলেও তারা বিবেচনা করতে পারতেন। জনগণের জন্য এমন কোন কর্মসূচিতে নেই দল যে, তারা সেসবে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেন বা নিজেদের কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন।

জাহিদুর রহমান বলেছেন দল তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি দল ছাড়বেন না। আর সংসদে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলবেন। যদি তা হয়, তাহলে সংসদে প্রথমবারের মত বেগম জিয়ার মুক্তির কথা উচ্চারিত হতে যাচ্ছে।

যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি সবাই সংসদে যান, তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এক নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। প্রথমতঃ দলীয় শৃঙ্খলার কথা বলে এদের বহিষ্কার করা হবে। ফলে সেই পাঁচটি জেলায় ভাঙ্গনের মুখে পড়বে বিএনপি। দ্বিতীয়তঃ এরা নিজেরা আলাদা বিএনপি গঠন করবে যাকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির আরেকটি দল হিসেবে দেখা হবে।

রাজনীতি সরলরেখায় চলে না। তাই, আজ বা কাল দুই একজনের সংসদে যোগদানের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির আগামীকাল অথবা পরশুর গতিপ্রকৃতির পূর্বাভাস করা যাচ্ছেনা। তবে, রাজনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলবে এটাই স্বাভাবিক।

গত বছর ৩০ ডিসেম্বরে হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোট ও রেকর্ড সংখ্যক আসন নিয়ে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। এদিকে দলীয়ভাবে মাত্র ৬টি এবং জোটগত মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে ৮টি আসন পেয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। এই জোটের অন্যতম শরীক গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজনও সংসদে গেছেন। দল তাদের আটকাতে পারেনি।

বলতে গেলে এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলে কোন জোটের অস্তিত্ব আর নেই। দল হিসেবে বিএনপি নিজের গঠিন সময় পার করছে। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। সেই সঙ্গে তার ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে। তিনিও একজন পালাতক আসামী।

এ অবস্থায় ড. কামাল হোসেনই ছিলেন একমাত্র ভরসা। তাই তার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল দলটি। কিন্তু সেই জোটও অস্তিত্বহীন হয়ে, ভোটের ফলাফলে মনোবল হারিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীরা দিশাহারা।

সবাই জানতে চায় কি করবে বিএনপি? এমন প্রশ্ন এখন দলের নেতা-কর্মী সহ অনেকের। স্পষ্টতই, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট নেতারা রাজনৈতিক সমুদ্রের জল মাপতে পারেননি। এখন না পাওয়ার জেদ প্রদর্শন করছেন সংসদে শপথ না নেয়ার কথা বলে। তবে যারা যেতে চাচ্ছেন তারা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন, তারা জানেন, একটি নির্বাচনের ফলাফলকে, এর প্রাপ্যকে গুরুত্ব দিতে হবেই।

সংখ্যায় তারা হবেন খুবই স্বল্প সংখ্যক। কিন্তু সংসদে তাদের অংশগ্রহণ শুধু নিয়ম রক্ষা নয়, তারা লড়াই করবেন সংসদের ভেতরে এবং নিজেদের এলাকায়। কাজেই, গণমাধ্যম ও সমাজের নজর এদের দিকে থাকবে।

বিএনপি যদি চায় দেশের রাজনীতিতে সে প্রাসঙ্গিক থাকবে, তাহলে তাকে রাজনীতির পরিসর বাড়াতে হবে। আর তার জন্য সংসদে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই।

একদিকে জনসমর্থন ধরে রাখা, অন্যদিকে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নেতৃত্ব ঠিক করা, ঢাকা না লন্ডন - সেই ফোকাল পয়েন্ট নিশ্চিত করার উপর নির্ভর করছে, দল কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে রাজনীতির ময়দানে।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।

এইচআর/জেআইএম

বিএনপি যদি চায় দেশের রাজনীতিতে সে প্রাসঙ্গিক থাকবে, তাহলে তাকে রাজনীতির পরিসর বাড়াতে হবে। আর তার জন্য সংসদে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।