লাম্পট্যের দহনে নুসরাতের প্রস্থান
নাসরীন গীতি নাসরীন গীতি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯
অবশেষে চলেই গেল প্রতিবাদী নুসরাত, সেই ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। মায়ের বুকফাটা আহাজারী, বাবার আর্তনাদ কিংবা ভাইদের ভালবাসার টান- কোনো মায়ার বন্ধনই আর ধরে রাখতে পারলো না তাকে।
সুন্দর জীবন নিয়ে বাঁচার নিগূঢ় ভালবাসাতেই হয়তো এ পৃথিবীর মায়া-মমতায় বাঁচতে চেয়েছিল নুসরাত। কিন্তু হায়, নিষ্ঠুরতার বিষবাষ্পে পুড়ে বিদায় নিল সে। কিন্তু যার লাম্পট্যের শিকার হতে চায়নি বলে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছিল, সেই যৌন নিপীড়ক, লম্পট মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌল্লাহ’র সহযোগীরা কেরোসিন ঢেলে আগুনে ঝলসে দিয়েছিল নুসরাতের পুরো শরীর, তার কি সাজা হবে? মানুষরূপী পিশাচদের মুখোশ উন্মোচনে, যে আইনের দ্বারস্থ হয়েছিল, সেই আইন কি প্রকৃত সঙ্গী হতে পেরেছিল নুসরাতের?
গত বুধবার (১০ এপ্রিল, ২০১৯) রাতে নুসরাতের মৃত্যুর খবরে এমনই প্রশ্ন জাগছে বিবেকবানদের মনে। কেউ প্রকাশ করছে ক্ষুব্ধ হয়ে, কেউ ডুকরে কাঁদছে হৃদয়ের রক্তক্ষরণে। তবে ব্যথাতুর হৃদয়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় হতাশ হয়ে কেউ কেউ বলছেন, এদের শাস্তি আর কি হবে, বড়জোর যাবজ্জীবন। কিন্তু এই অমানুষ কি কোনদিন বুঝবে তার নির্লজ্জতায় পুরো জাতির মুখে কালিমা পড়েছে। কিংবা নুসরাতের দগ্ধ শরীরের খানিক বেদনাও কি সে অনুভব করবে?
এগুলোর কোনটাই সেই যৌন নিপীড়ক সিরাজ উদ-দৌল্লাহ’র মধ্যে কাজ করবে না। তাই তার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত আগুনে ঝলসে দেয়া। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এটা কেমনতর দাবি। তবে সত্য কি জানেন, মানুষ মরলে মানুষ কাঁদবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অমানুষের জন্য মানবিক হওয়াটা জরুরি নয়। কারণ সে নিজেই মানুষের মুখোশের আড়ালে হায়েনা সেজে সমাজের সুন্দর মুখে কালি মাখছে।
সেই ১৯৯৫-এ দিনাজপুরের ইয়াসমিন থেকে শুরু করে এই একবিংশ শতাব্দীর চূড়ান্ত উন্নয়ন লগ্নে এসেও তনু, তমা, পারুলের মতো নুসরাতও পাড়ি দিল পরপারে। যেখানে হয়তো এই পৃথিবীর নরক নেই। আর কত (!) আর কত, নারীবলীর ঘটনা ঘটলে এই বঙ্গভূমি তথা বাংলাদেশ থেকে মানুষখেকো দানবগুলো বিতাড়িত বা নির্মূল হবে! হয়তো এর কোন সঠিক জবাব আমরা কেউই দিতে পারবো না।
এমনকি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসন থেকেও এরকম বর্বরতা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হবে না। তবে এটুকু প্রত্যাশা তো আমরা করতেই পারি, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক সাজার মধ্য দিয়ে সেই ভ্রান্তি কেটে যাবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হবে, নিরাপদ দেশে নির্বিঘ্ন হবে আমাদের পদযাত্রা।
লেখক : সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বাংলাভিশন।
এইচআর/জেআইএম
এটুকু প্রত্যাশা তো আমরা করতেই পারি, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক সাজার মধ্য দিয়ে সেই ভ্রান্তি কেটে যাবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হবে, নিরাপদ দেশে নির্বিঘ্ন হবে আমাদের পদযাত্রা।