সন্তানদের আবদার রাখতে পারিনি

তুষার আবদুল্লাহ তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২১ মার্চ ২০১৯

সন্তানরা আবার রাজপথে। বিক্ষোভ করছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। আট মাস না পেরোতেই আবারও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ‘ স্লোগান বুকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে হলো। ২০১৮ এর ২৯ জুলাই শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বিমানবন্দর সড়কে পিষে হত্যা করে জাবালে নূর নামে দানব বাস। সেই হত্যার প্রতিক্রিয়ায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়েছিলেন তখনকার নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান। শিক্ষার্থীরা সেই তাচ্ছিল্য মেনে নিতে পারেনি। মানতে পারেনি বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাষ্ট্রের সবাই। দাবি উঠেছিল রাষ্ট্রের মেরামতের। সড়কের বিশৃঙ্খলার কারণ যে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, দফতরের অদক্ষতা এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, সেই সত্যও আঙুল তুলে দেখিয়েছিল আমাদের সন্তানরা। ওদের প্রশ্ন ছিল লাইসেন্স আছে? এই লাইসেন্স শুধু পরিবহনের বা চালকের নয়। আসলে রাষ্ট্রের সব মানুষের কাছেই জিজ্ঞাসা, নৈতিকতা কি আছে আমাদের? নেই বলেই তো সব স্তরে বেপরোয়া আমরা।

শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে তখন রাজনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে অনেকেই আন্দোলনের ফসল নিজ নিজ গোলায় তুলতে চেয়েছে। তাদের মধ্যকার দখল লড়াইয়ের শিকার হয়েছিল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন দমানোর অস্ত্র ছিল গুজব। আবার আন্দোলন ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ারও অস্ত্র ছিল গুজব । শিক্ষার্থীদের সেই সময়ে বহিরাগতদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জেলও খাটতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে।

ওই আন্দোলনের সময় সড়কে বাস, অ্যাম্বুলেন্স ও রিকশার জন্য পৃথক যে লেন তৈরি করে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন সমাপ্তির পরদিনই তা রক্ষা করা যায়নি। যেমন রোধ করা যায়নি বেপরোয়া গতি। ফলে আন্দোলন চলাকালীন এবং তার পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি সড়কের হত্যা কেবল বেড়েছেই। এর মধ্যে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে একাধিক। রাজধানীতে একাধিক শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান। কারণ কিশোর বিদ্রোহের পর হত্যাকারী জাবালে নূর যেমন ভিন্ন নামে এসেছে তেমনি কয়েকগুণ বেপরোয়া হয়েছে পরিবহন। যার প্রমাণ জেব্রাক্রসিংয়ে হত্যার শিকার হলো আবরার।

জুলাই-আগস্টের সেই উত্তাল আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় একাধিকবার পুলিশ পক্ষ সপ্তাহ পালিত হয়েছে। কিন্তু পথচারী এবং বাহন কাউকেই শৃঙ্খলায় ফেরানো যায়নি। সড়ক নিরাপত্তা আইনকেও পাত্তা দেয়নি পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। বরং একের পর এক ধর্মঘট ডেকে দেশ অচল করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক অনুদান, শিক্ষার্থীদের বাস উপহার দেয়া সংকট সমাধানের পথ নয়।

আবরার নিহত হওয়ার পরও দেখলাম সেই পুরনো পথেই হাঁটছি আমরা। আবরারের দাফনের আগেই ওর নামে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা। পরদিনই ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন এসবই রাজনৈতিক চমক। রাজনৈতিক বচন শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার নকশাও। যতো দীর্ঘ হবে সড়কে ওদের অবস্থান ততো ষড়যন্ত্র করবো আমরা বড়োরা।

ব্যর্থ এই বুড়োরা পরিবহন মালিক চালক শ্রমিকদের কাছে কেবল নতজানুই হবো। কখনোই শুরু করতে পারবো না রাষ্ট্র মেরামতের কাজ। খানাখন্দ দিয়ে পরিবহন ছুটতেই থাকবে বেপোরোয়া গতিতে। আমরা, আমাদের সন্তানরা শুধু বরণ করে যাবো হত্যা।

লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।

এইচআর/পিআর

ব্যর্থ এই বুড়োরা পরিবহন মালিক চালক শ্রমিকদের কাছে কেবল নতজানুই হবো। কখনোই শুরু করতে পারবোনা রাষ্ট্রমেরামতের কাজ। খানাখন্দ দিয়ে পরিবহন ছুটতেই থাকবে বেপোরোয়া গতিতে। আমরা, আমাদের সন্তানরা শুধু বরণ করে যাবো হত্যা

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।