গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি : পকেট ভারী হবে কার?

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ১৩ মার্চ ২০১৯

এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দুই বার্নার চুলায় ১ হাজার ৪৪০ ও এক বার্নার চুলায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এ প্রস্তাবনার কথা জানানো হয়। গৃহস্থালি পর্যায়ে দুই বার্নার চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৪০ এবং এক বার্নার চুলার দাম ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় শিল্প ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের দাম বাড়াতে গত (সোমবার) থেকে গণশুনানি শুরু করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। প্রথম দিন গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেয় পেট্রোবাংলা।

এছাড়া গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করে জিটিসিএল। তবে গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনরা। গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাসে বড় অংকের একটা ভর্তুকি দেয় সরকার। সেই ভর্তুকিটা ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্যাসে দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের লাভ হবে তা নয়।

অধিকাংশ যানবাহন এবং ট্রাক, লরি এখন গ্যাসচালিত। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যাত্রীভাড়া বাড়বে। বাড়বে পণ্য-দ্রব্য বহনের খরচও। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে। এই বৃদ্ধির কুফল মানুষজনকে নানা ভাবে ভোগাবে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও শুল্ক সংগ্রহের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ এ খাতের উদ্ধৃত্ত অর্থ দিয়েই তা করা সম্ভব। এছাড়া ভর্তুকি কমানোর বিষয়টিও অনেক সময় সামনে নিয়ে আসা হয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় চলে। অথচ দুর্নীতি কমানো, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানাবিধ উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুণতে হতো না।

খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব।

মনে রাখা প্রয়োজন গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ। এর মজুদ অফুরন্ত নয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলতে পারছেন না কতদিনের গ্যাস মজুদ আছে। তাছাড়া বাসাবাড়িতে ও শিল্পকারখানায়ও চাহিদামত গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছেনা। এখনো জ্বালানি নীতিও ঠিক হয়নি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে। মূল্যবান গ্যাস প্রাইভেটকারের জ্বালানি হবে, গণপরিবহনে ব্যবহৃত হবে, চুলায় জ্বলবে, নাকি শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হবে। তাছাড়া গ্যাস সরবরাহের পদ্ধতিই বা কি হবে পাইপলাইনের মাধ্যমে-নাকি সিলিন্ডারে- ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। এখন থেকেই কাজ করতে হবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

এইচআর/জেআইএম

খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।