শেখ হাসিনা : বাংলার মা
তিনি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ছবির দিকে যখন তাকাই তখন বিস্মিত হই। তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে আজকে তিনি কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন,তাই ভাবি। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির কন্যা-তাঁকে দেখে কি তা বোঝা যায়?
তাঁর অবয়বে নেই কোন চাকচিক্য। তাঁর ধ্যান জ্ঞান সবজুড়ে আছে কেবল কাজ। এ দেশকে গড়ার স্বপ্ন। আমিও একজন সাহসী ব্যক্তির মেয়ে। ১৪ বছর আগে আমার বাবাকে হারিয়েছি পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় অনেক সময় অনেক কাজে (আমার যেখানে অংশগ্রহণের দরকার আছে) সেখানে অংশ নিতে পারিনা। পিছু হটে আসি।
তার জন্য অনুতপ্তও হই। নিজের অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে চলি। কিন্তু আমি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির দিকে তাকাই তখন তাঁকে স্যালুট দেই। ভাবি-কিভাবে তিনি পেরেছিলেন পুরো পরিবারকে হারিয়ে এতটা শোকের ভেতরে এই দেশের জন্য দলের হাল ধরতে? এতো সাহস কিভাবে ধারণ করেন তিনি!
তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তাঁর কাজে নেই কোনো তাড়াহুড়ো। দেখি নিয়মতান্ত্রিকতা। দেখি আইনের প্রতি প্রবল শ্রদ্ধাবোধ। তাইতো নিজের বাবার হত্যার বিচারে পুরো আইনি প্রক্রিয়ার জন্য যতক্ষণ সময় লেগেছে ততখানি সময়ই তিনি দিয়েছেন। আজকের বাংলাদেশে পুরোনো বাংলাদেশের ইতিহাসকে জানতে এক মুহূর্তে হাতের এক আঙ্গুলের স্পর্শে আমাদের চোখের সামনে এনে দিয়েছেন কে? তিনি শেখ হাসিনা।
আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশের জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত জানতে পারছি। দুর্নীতি ,অরাজকতায় ঢেকে গিয়েছিল যে বাংলাদেশ সে বাংলাদেশ আজ তরুণ প্রজন্মের চোখে দিচ্ছে আশার আলো। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা আমরা কোনদিন পাবো বলে ভেবেছি কি? আজ আমাদের মতো দেশের অফিসগুলো পেপারলেস করার চিন্তাভাবনা চলছে।
এই যে সকল কাজকে সহজ করার চিন্তা,ফাইলে বন্দি না রেখে সব রেকর্ড ডিজিটালি সংরক্ষণ করার চিন্তা তা কার চিন্তার ফসল? তা-শেখ হাসিনার। তিনি স্বার্থান্ধ বুদ্ধিজীবীদের কথা কখনো মাথায় নেন না। আর তা নিলে দেশের উন্নয়নের জন্যে কখনই বড় কোন প্রজেক্ট তিনি হাতে নিতে পারতেন না।
তিনি ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করতে পারতেন না। এ বিষয়ে নানা সমালোচনা আছে নিশ্চয়। কিন্তু সরকারও নিশ্চয় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব যাচাই বাছাই না করে এত বড় প্রকল্প হাতে নেয়নি! কিন্তু এ বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কত মানুষের ঘর আলোকোজ্জ্বল হবে তা কেউ ভেবেছেন কি? ঢাকা শহর যে আজ ফ্লাইওভার দিয়ে ঘেরা থাকবে, ঢাকায় হবে মেট্রোরেল তা সাধারণ বাংলাদেশীরা ভেবেছিলাম কি কখনও?
পদ্মা সেতু করার মতো সাহসী রাজনীতিবিদ তিনি ছাড়া আর এ বাংলায় কে আছেন? আজ আমরা ভাগ্যবান,আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে কেবল তাঁর হাত ধরেই। আজ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৯টি, প্রাইভেট ১০৩টি। আমাদের দেশে রয়েছে আজ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েছে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েছে আর্ন্তজাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ।
দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর রয়েছে সুচিন্তিত নির্দেশ। এর কারণ একটাই। তিনি চান শিক্ষিত জাতি। নারীর ক্ষমতায়নে তিনি নিচ্ছেন নানা পদক্ষেপ। যার উদাহরণ সরকারি-সামরিক উচ্চ পর্যায়ে আজ আমাদের নারীদের স্থান।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এতদিন কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল । তাই তিনি নিয়েছেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কওমী মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান করা হয়েছে ,যা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে পুরো জাতিকে চমকে দিয়েছেন।
তিনি যত অব্যবস্থা তার প্রতি সোচ্চার। নিজের জীবনের পরোয়া না করে ,বিদেশী রক্তচক্ষুকে না ডরিয়ে অবিরামভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের কোন সেক্টরকেই তিনি ন্যূনতম অবহেলা করেন না। অটিজমে আক্রান্তদের অবহেলা প্রাপ্য নয় দরকার ভালবাসা আর চিকিৎসা।
তৃতীয় লিঙ্গদের জায়গা কেবল এথায় সেথায় ঘুরে বেড়ানো নয়। তাদের দরকার স্বীকৃতি। তা তিনিই এনে দিয়েছেন। তাঁর কঠোর নির্দেশে বাস্তবায়নের কারণে জঙ্গিবাদ আমাদের দেশে মাথাচাড়া নিয়ে উঠতে পারেনি। তিনি যে মা। তিনি জানেন জঙ্গিবাদে জড়ানো মানেই কিছু বিভ্রান্ত তরুণ যুবকের শেষ পরিণতি। যার মন্দ প্রভাব পড়বে সেই সন্তানের মাবাবার প্রতিই।
নিজেকে ধূপকাঠির মতো পুড়িয়ে সোনার বাংলা গড়ার কাজে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা আর সাহসকে পুঁজি করে চলেছেন। আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের তিনি যখন উজ্জীবিত করেন তখন মনে হয় না তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। মনে হয় তিনি তাদের মা যেন।
সারল্য তাঁর ব্যক্তিত্বে। তাঁর গুণের জন্যই আজ বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর মহিলার নামের মধ্যে তাঁর নামটি জ্বল জ্বল করে ওঠে। আমরা তাঁর নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের সক্ষমতা অর্জন করেছি। করেছি সমুদ্রজয়। তিনি বুকে তুলে নিয়েছেন আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের। করেছেন তাদের পুনর্বাসন তিনি অলোকসামান্যা। তিনি আমাদের এ বাংলার বাতিঘর। তিনি আমাদের আশ্রয় যেন। চলুন বাংলার মায়ের সাথেই থাকি।
এইচআর/পিআর