সংলাপ ও সমঝোতাই গণতন্ত্রের পথ

মীর আব্দুল আলীম
মীর আব্দুল আলীম মীর আব্দুল আলীম , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০২:৩৭ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

দেশের মানুষ শান্তি চায়; রাজনৈতিক বিবাদ চায় না। হরতাল অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও চায় না। এ জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ হচ্ছে, সংলাপ সফল হবে, সংঘাত হবে না এটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট প্রস্তুতি নিচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে থাকা সাবেক শাসক দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক দল কার্যত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে নানা শর্ত বিরোধী শিবিরের। এসব মানা না মানা নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ ক্রমশই ঘোলা হচ্ছিলো।

এমন সময় সিলেটের জনসভার পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংলাপ চেয়ে চিঠি পাঠান গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। চিঠির উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১টি লক্ষ সংযুক্ত হয়েছে। চিঠির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের দাবি জানিয়ে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন রাখঢাক না রেখেই সংলাপে বসতে রাজি হয়েছেন। একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি হিসেবে শাসক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে সংলাপ চেয়ে চিঠি পাঠানোর ঘটনাকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা অবশ্যই দেশের জনগণের কল্যাণের স্বার্থেই। কেন না এক এগারোর মতো কোন পরিস্থিতি এদেশে জনগণ আশা করে না। সংলাপ সবসময় যে কোন সমস্যা সমাধানের উত্তম পন্থা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপ হতেই পারে। তবে শর্তসাপেক্ষে সংলাপ কখনো সমঝোতার পক্ষে শুভ নয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। সংলাপ নাকি সংঘাত। সংঘাতের পথ ধরেই হাঁটছিলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের শান্তির লক্ষ্যে এ মুহূর্তে সংলাপের বিকল্প নাই। তবে শুধু সংলাপের জন্য সংলাপ নয়; সংলাপ হোক দেশ ও জাতির স্বার্থে। সংলাপের ব্যাপারে এ তাগিদ বিভিন্ন দেশের। সংঘাতময় এ মুহূর্তে রাজনৈতিক সমঝোতা খুবই প্রয়োজন। এ জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ হচ্ছে, সংলাপ সফল হবে আর তাতেই জনগণ তথা দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে।

গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে তাদের মধ্যে সহনশীলতা অবশ্যই কাম্য। দেশের কথা, জনগণের কথাও ভাবতে হবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে। ধৈর্য মহৎ গুণ। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও শুধু নিজেদের অবস্থানে অনড় না থেকে জনগণের কথা ভেবে পরস্পর আলোচনায় বসতে হবে।

ধৈর্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি বর্তমান রাজনীতিতে বেশি করে চর্চা করার জন্য আমাদের জোর দাবি তুলতে হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে দেশ আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, যা জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য কখনোই কাম্য নয়।

শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে আমরা রাজপথে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা চাই না। সংঘাত নয়, সংলাপ ও সমঝোতাই গণতন্ত্রের পথ। সংলাপের জন্য উভয় পক্ষে মুক্তমন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর সেই প্রত্যাশাই রইলাম আমরা।
লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/জেআইএম

সংলাপ সবসময় যে কোন সমস্যা সমাধানের উত্তম পন্থা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপ হতেই পারে। তবে শর্তসাপেক্ষে সংলাপ কখনো সমঝোতার পক্ষে শুভ নয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।