তাঁর দেখানো পথেই হাঁটতে হবে
আজ ১৫ আগস্ট। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শোকসন্তপ্ত জাতি আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির মহান দিশারী বঙ্গবন্ধুকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে।
যাঁর গৌরবময় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল ঘাতকরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতক দল ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর নাম ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলবে। কিন্তু তাদের সে হীন চক্রান্ত সফল হয়নি। হিংস্র ঘাতকের দর্পচূর্ণ করে বাংলাদেশ আজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নৃতৃত্বে। আত্মস্বীকৃত ঘাতকরা তাদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামক কালো আইন বাতিল করে ঘাতকের বিচার করেছে। ঘৃণ্য খুনিদের পাঁচ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু দণ্ডিত বাকি ৬ খুনি এখনো পালিয়ে বেড়ানোয় তারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই ১৫ আগস্টের ক্ষত বাঙালির হৃদয় থেকে এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। সব ঘাতকের শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়েই এই ক্ষত`র উপশম হতে পারে।
যে বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হয়েছেন সেই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন জাতির অন্যতম আবেগময় স্মৃতিচিহ্নে পরিণত হয়েছে। আর তিনি হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস । মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকে দেশকে সরিয়ে বিপরীতমুখি করার উদ্দেশ্য ছিল ঘাতকদের একটি বড় লক্ষ্য। তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলিয়ে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করা এবং যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটা নস্যাৎ করে দেয়া।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে শুরু হয় এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারিরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে বঙ্গবন্ধুর নামটাও জাতীয় প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হতে পারত না। ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল। তরুণদের দীর্ঘকাল জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুকে শুধু অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু কুচক্রীদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাঁর স্থান; কোনো হুকুম বা ফরমান দিয়ে তাঁর নাম মুছে ফেলা যায় না, তাঁর অবদানকে খাটো করা যায় না। দেশকে তিনি ভালোবেসেছেন অকৃত্রিমভাবে, দেশের মানুষও তাঁকে দিয়েছে হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা। তাই খুনি, ঘাতকচক্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের সব চক্রান্ত, চেষ্টা, অপতৎপরতা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে আজ না থাকলেও মানুষের হৃদয়জুড়ে তাঁর অবস্থান। জাতীয় শোক দিবসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নিঃস্বার্থপরতা, মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, সর্বোপরি ঘাতকের বুলেটের সামনে বাংলাদেশসম বুক পেতে দিয়ে দেশপ্রেমের যে নিদর্শন তিনি দেখিয়ে গেছেন সে পথেই হাঁটতে হবে। যে কোনো সংকটে এবং সম্ভাবনায় বঙ্গবন্ধু হোক আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
এইচআর/পিআর