ঈদ এলেই

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৮

উৎসব পার্বণ উপলক্ষে সাধারণত বিশেষ বিশেষ পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী চাহিদা বাড়লে সেই জিনিসের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে তাহলে দামও ঠিক থাকার কথা। বরঞ্চ বেশি বিক্রি হওয়ায় অল্প লাভ করে বিক্রি করলেও তাতে মুনাফা হয় বেশি। কিন্তু আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় এই বিষয়টি কার্যকর নেই। বরং যে জিনিস যতো বেশি চলবে তার দামও হবে আকাশচুম্বী। এই প্রবণতা এবারও দেখা যাচ্ছে বাজারে। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বাজারে মসলার দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। অথচ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ফলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশি পেঁয়াজের বাইরে বর্তমানে ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হয় ভারত থেকে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানিতেও কোনো সমস্যা নেই। ২০১৬ সাল থেকে সরকার পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজও রয়েছে। তার পরও এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। মূলত আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজের দাম, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভোক্তাসাধারণ।

বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বেনাপোল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী বিক্রেতাদের কারসাজির কারণে অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ক্রেতাসাধারণ। ভারতের রপ্তানিমূল্যে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৭ হাজার ২০০ টাকা। এই হিসাবে কেজিপ্রতি আমদানি খরচ পড়ছে ১৮ টাকা। এলসি খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজ পৌঁছাতে খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দর থেকে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের হিসাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২২-২৩ লাখ টন। আমাদের উৎপাদন যা তাতে ৩/৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর এই সুযোগেই মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠু মনিটরিং এর অভাবে খুচরা বাজারে পণ্যমূল্য দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনেক সময় অনেক নির্দেশনা জারি করে। টিসিবিকে সক্রিয় করে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়। কিন্তু আখেরে কাজ দেয় না কিছুই। ফলে সিন্ডিকেটচক্র অবাধে মুনাফা লুট করার সুযোগ পায়।

যদি সত্যিকার অর্থে বাজার ব্যবস্থাপনা বলে কিছু থাকতো তাহলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট খালি করতে পারতো না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, আজ পর্যন্ত বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। অন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির কারণে কারও শাস্তিও হয়নি। এই কারণে মৌসুম বুঝে ব্যবসা করেই যাচ্ছে ওই চক্র। ঈদ বা কোনো পার্বণ উপলক্ষ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের মুনাফা। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। শুধু আইন-কানুন দিয়েও কিছু হবে না। ন্যায়-নীতি বোধেরও উন্মেষ ঘটাতে হবে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

কোনো উৎসব বা পার্বণ যাতে মানুষজন ভালোভাবে পালন করতে পারে সেটির নিশ্চয়তা দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

এইচআর/জেআইএম

যদি সত্যিকার অর্থে বাজার ব্যবস্থাপনা বলে কিছু থাকতো তাহলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট খালি করতে পারতো না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, আজ পর্যন্ত বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। অন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির কারণে কারও শাস্তিও হয়নি। এই কারণে মৌসুম বুঝে ব্যবসা করেই যাচ্ছে ওই চক্র। ঈদ বা কোনো পার্বণ উপলক্ষ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের মুনাফা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।