মৃত্যু, ক্ষোভ, অবরোধে স্থবির ঢাকা!

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৮

আবারো দুর্ঘটনা, আবারো মৃত্যু, আবারো অবরোধ, আবারো সীমাহীন দুর্ভোগ। এই নগরে মানুষের এটাই হয়েছে ললাট লিখন। যেন কোথাও কেউ নেই। রজীবের হাত, রোজিনার পা যাবে। যাবে জীবনও। এভাবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাবে। কদিন হা-হুতাশ চলবে তারপর সব আগের মতই। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে। কিন্তু কারো টনক নড়ছে না। এবার দুইবাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেল দুই কলেজ শিক্ষার্থীর। ক্ষোভ, বেদনা, হাহাকার। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন আচরণ সংকটকে আরো ঘনীভূত করে। কাল রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, স্থবির। পায়ে হেঁটেও গন্তব্যে যাওয়া ছিল কঠিন ব্যাপার। এইসব দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মানুষজন কবে রেহাই পাবেন-সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই ওঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর। চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন। এছাড়া আহত হন আরও ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দুইজন হলেন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে; নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে; শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে; সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নয় দফা দাবি জানিয়েছে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে সড়ক অবরোধের হুমকিও দিয়েছে তারা। গতকাল সোমবার (৩০ জুলাই) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম আপন এসব দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে; নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে; শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে; সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে; শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদেরকে নিতে হবে; শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে; ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশা করি। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। তাদের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বেপরোয়া গাড়ির গতিতে আর কারো জীবন পিষ্ট হওয়া বন্ধ করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক, সড়ক হোক নিরাপদ।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।