কাইযেন সহজ সরল সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুত সমন্বিত সোপান

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম
কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম , কৃষিবিদ ও লেখক
প্রকাশিত: ০২:২৪ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

নাম দিয়ে বুঝা যাবে না কাম দিয়ে বুঝা যাবে। কাইযেন (KAIZEN) এখন বাংলাদেশে অতিপরিচিত না হলেও বেশ প্রতিশ্রুত অবদান রেখে চলছে দেশময়। বিশেষ আন্তরিকতা আর উদ্যোগ নিলে জাপানি এ কৌশল অবলম্বনে আমরাও এগিয়ে যাবো সন্মুখপানে জাপানের মতো সমৃদ্ধ সুখী দেশ গড়তে।

কাইযেন একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ অদম্য অব্যাহত নিরবচ্ছিন্ন পথচলা, অব্যাহত উন্নয়ন সুনিশ্চিতকরণ। নীতি ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে যৌক্তিক সেবা প্রদানের লক্ষে কর্মপরিবেশের উন্নয়নে সেবাসমূহ সহজীকরণ, সেবা গ্রহণে আকৃষ্টকরণ, এসবের সহজ সরল ঘাটতি পূরণে একটি কার্যকর ফলপ্রসূ উপায়।

কাইযেন সহজ পন্থা যেটি যে কেউ যে কোন স্থানে যে কোন সময়ে করতে পারেন অনায়াসে। এ ক্ষেত্রে অনেক সম্পদ টাকা অর্থ সুযোগ এসবের দরকার হয় না। শুধু দরকার সৃষ্টিশীল ইতিবাচক উদ্যোগী সুদৃঢ় সহনশীল লক্ষমাত্রা নির্দিষ্ট করে এগিয়ে যাবার মানসিকতা।

এটি বিশ্বস্ততার সাথে নিজের কার্যক্ষমতাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়, অনায়াসে কাজের স্বীকৃতি পাওয়া যায়, যা সামাজিক এবং মানসিক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রচলিত ধারণা চিত্র আশ্চার্যজনকভাবে পাল্টে দেয়। এটি সঠিক সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে আশাতীতভাবে।

কাইযেন বাস্তবায়নে বাস্তবসম্মত সময়ের মধ্যে একটি PDCA চার পর্যায়ের চক্র অনুসরণ করতে হয়- চক্রটি হলো:- ০১. Plan পরিকল্পনা করা, ০২. Do বাস্তবায়ন করা, ০৩. Check খতিয়ে দেখা এবং ০৪. Action প্রয়োজনীয় সংশোধন করার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে প্রত্যেকবারই PDCA চক্র সম্পন্ন করতে হবে যৌক্তিকভাবে। KAIZEN হলো দুটি জাপানি শব্দের সমন্বয়। KAI অর্থ পরিবর্তন আর ZEN অর্থ আরো ভালো। তাহলে দাঁড়ালো কী? আরো/অধিকতর ভালোর জন্য অব্যাহত পরিবর্তন উন্নয়ন, সুপরিবর্তন।

সাথে যোগ হতে পারে সহজ সরলভাবে নিজস্ব যোগ্যতা দক্ষতা কর্মক্ষমতা প্রাপ্তি প্রচলিত শুদ্ধতার যৌক্তিক বিনিয়োগ আর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুত সুবাসিত ধারার প্রচলন। অন্যভাবে বলা যায় কাইযেন ভালো কিছু করার একটি দর্শন।

কাইযেন অতিরিক্ত কোন কাজ নয় বরং নিয়মিত কাজকে আরো সুপরিকল্পিতভাবে সহজে সাবলীলভাবে করার শুভ সুন্দর সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টা। কাইযেন দিয়ে যে কোন কাজই আরো নিখুঁত ভালোভাবে করা যায়; ইতিবাচক মানসিকতা দিয়ে সুপরিবর্তন সম্ভব হয়। কাইযেনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নয়ন যা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা ও সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত অর্জন নিশ্চিত করা। চলমান বা বিদ্যমান সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে কাইযেন ব্যবহার করা যায়। অতিরিক্ত পরিশ্রম নয়, বুদ্ধিমত্তার সাথে কম পরিশ্রমে কাজ করাই কাইযেন এর আসল রূপ।

কাইযেনের দৃষ্টিভঙ্গী হলো সব ধরনের অপচয় যেমন: সময়; টাকা; অর্থ; মালামাল; চলাফেরা/আনা নেওয়া এসবের অপচয় রোধ করা। কর্মক্ষেত্রে সব ধরনের কষ্ট ও ক্লান্তি দূর করে সহজ উপায়ে আন্তরিকভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করা। কাজের ভুল ভ্রান্তি শোধরিয়ে দুর্বলতা দূর করা এবং সঠিককাজ সঠিকসময়ে সঠিকভাবে করা। কাইযেন/ক্ষুদ্র উন্নয়ন পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র উন্নয়ন দল (SIT) গঠন করা। যে বিষয়ের ওপর কাজ করা হবে তা দলগতভাবে নিধার্রণ করা। তবে এ ক্ষেত্রে যা বিবেচ্য তা হলো:- ভোক্তার দৃষ্টিভঙ্গী সঠিকভাবে অনুধাবন।

ভোক্তা কিসে সন্তুষ্ট আনন্দিত হবে? কোনটা নিজের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত সেটা নিশ্চিত করা। কাজটা কি নিজেরাই নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে সম্পাদন করতে পারি কিনা? বিদ্যমান সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজটি কিভাবে করতে পারি? কাইযেন হলো আগের অবস্থা এবং পরবর্তী অবস্থা বিশ্লেষণ বর্ণনা করা। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মুখ্য কর্মসম্পাদন নির্দেশক (KPI) নির্ধারণ করা। মূল কাজগুলো বাস্তবায়নের সময়সূচি প্রস্তুত করা।

কাইযেন আমাদের চলমান কাজকে ভালোভাবে এবং সহজভাবে করার; সীমিত সম্পদ ও জনশক্তির সর্বোচ্চ যৌক্তিক ব্যবহার করার উপায় বাতলিয়ে দেয়। সীমিত সম্পদ ও জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করে জনগণের কাঙ্খিত চাহিদা মেটানোর কার্যকর পদ্ধতি বাতলিয়ে দেয়। এটি মোট কাজকে সহজ সরল নিখুঁতভাবে সমৃদ্ধ করে জনগণকে চাহিদাভিত্তিক সস্তুষ্ট করে। কাইযেনের মাধ্যমে সাধারণ জ্ঞান মেধা দক্ষতা মনন যথাযথ কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

এটি বিশেষ কোন ব্যক্তির মাধ্যমে হঠাৎ উন্নয়ন নয়। সীমিত সহজ প্রাপ্য সম্পদের যৌক্তিক ও সুষ্ঠু ব্যবহার যেখানে অতিরিক্ত বা বাড়তি খরচের দরকার বা সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে নিজস্ব উদ্যোগ, বাহিরের ধারণা বা উদ্যোগ নয় নিজেদের সব; কঠিনভাবে নয় সহজ সরলভাবে, জটিলভাবে নয় সরলতার সাথে আন্তরিকতার সাথে করা।

কাইযেনের সাথে আরেকটি অংশ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তা হলো Total Quality Management-TQM মানে সামগ্রিক মান ব্যবস্থাপনা। এটি জাপানে বহুবছর ধরে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে যা প্রক্রিয়াগত ব্যবস্থাপনাকে কাঙ্খিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করে। টিকিউএম বাস্তবায়িত হলে কাজের সততা স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা কাঙ্খিত ফলাফল সুনিশ্চিত হয়। জাপান ছাড়াও সিঙ্গাপুর হংকং যুক্তরাজ্য টিকিউএম অনুসরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।

টিকিউএম চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত সেবা প্রদান, নিয়মিত পরিমিত সেবার মানোন্নয়ন হালনাগাদকরণ, খরচ কমানো সময় কমানো এবং সংশ্লিষ্টদের কাজের উৎসাহ প্রদান সুনিশ্চিত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কখনো কখনো টিকিউএম অন্তরায় বাধা সমস্যা কষ্ট হতে পারে। কিন্তু নিজেদের ইচ্ছা শক্তি প্রবল তীব্র হলে কোন কিছুই ঠেকে না সুসম্পন্ন হয়ই। চূড়ান্ত ফলাফল অনেক বেশি শুভ সুন্দর বিস্তৃত হয়। কেননা টিকিউএমর মাধ্যমে কাজ লাগসই প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণে সহজ সরল দ্রুত কম খরচি স্মার্টলি সম্পন্ন হয়। সে কারণেই এর জনপ্রিয়তা বাড়বে অব্যাহতভাবে কমবে না কখনো।

টিসিবি অনুসরণে অর্থাৎ T মানে Time বা সময় বাঁচানো, C মানে Cost বা খরচ কমানো এবং V মানে Visit অর্থাৎ অফিসে আসার সংখ্যা কমিয়ে প্রাপ্য সুবিধাদি ও সেবা গ্রহীতাকে তুলনামূলক সাশ্রয় সুবিধা পেতে সহায়তা প্রদান করে কাইযেন।

জনসেবার মানোন্নয়ন সবার কাছে কাঙ্খিত প্রত্যাশা হলো টিকিউএম। যা ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে জনসেবার মানোন্নয়নকে সব সময় উৎসাহ দেয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ জুন পর্যন্ত জাপানের জাইকা, বার্ড কুমিল্লা, আরডিএ বগুড়া, নায়েম ঢাকা, এনএপিডি ঢাকা এবং এনআইএলজি, ঢাকা, বিপিএটিসি সাভারের সাথে একযোগে কাজ করছে সমন্বিতভাবে।

২০২১, ২০৪১ সালে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বদ্ধ পরিকর। সে প্রেক্ষাপটে দেশের দপ্তর সেবা কৌশল আর সামাজিক কর্মকাণ্ডকে টিকিউএম-কাইযেন এর সুসমন্বিত কার্যকর ও ফলপ্রসূ লাগসই উপায় হিসেবে সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট করে এগিয়ে যেতে পারলে জনগণের কাঙ্খিত সেবা সুনিশ্চিত হবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ হবে দেশ উন্নতির শিখড়ে অবস্থান করতে পারবে।

আমরাও মাথা উঁচু করে বলতে পারবো আমি আমরা সোনার বাংলার গর্বিত নাগরিক। এ ধারণা ব্যবহার বাস্তবায়নে আমাদের দুর্বল সেবা সবল হবে, জটিল কাজ সহজ হবে, বিশৃঙ্খল সুশৃঙ্খল হবে, জীবন যাত্রা পরিশুদ্ধ পরিবেশ মানববান্ধব হবে। অবহেলিত তথ্য প্রযুক্তি সম্পদ মূল্যবান সম্পদে পরিগণিত হবে। সবচেয়ে বড়কথা আমরা আমাদের কাঙ্খিত সীমানা স্পর্শ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো।

এতে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকারিতার উন্নয়ন ঘটানো, অনুকূল কর্মপরিবেশ সুনিশ্চিত করা, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রয়াস চালানো সংশ্লিষ্টদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে চাহিদাভিত্তিক জনসেবাকে আরো গতিময় ও মানসম্মত করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির সন্তুষ্টি অর্জনে প্রয়াস চালানোর সুদীপ্ত কৌশল।

কাইযেন-টিকিউএম এর সফল বাস্তবায়নে গত কয়েক বছরের কিছু সাফল্যগাথা আমাদের অনেক আশাবাদী সাহসী করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন অবস্থার উন্নয়ন কিশোরগঞ্জ উপজেলা; সাবরেজিস্ট্রি অফিসকে জনবান্ধবকরণ কিশোরগঞ্জ উপজেলা; ভূমি অফিস কাজ জনবান্ধকরণ শিবগঞ্জ, বগুড়া; জন অংশগ্রহণের মাধ্যমে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল; ইউনিয়ন কৃষি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি ডাক্তারি সেবা প্রদান, যশোর জেলা; নিরাপদ পোলট্রি নিশ্চিতকরণ শ্রীপুর, গাজীপুরের সাথে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়ন; গবাদি পশুর টিকা প্রদানের হার বাড়ানো; যুবঋণ আদায়ের হার বাড়ানো; জনগণের আস্থা অর্জন নীলফামারি সদর;

স্কুল কলেজেরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো; রেকর্ডরুম ব্যবস্থাপনা বগুড়া সদর; ভূমি অফিস জনবান্ধবকরণ পবা, রাজশাহী; জিডি ও প্রয়োজনীয় ফরমের নমুনা অফিস চত্বরে প্রদর্শন ও অফিস ফাইল সাজানো লৌহজং মুন্সিগঞ্জ; জনবান্ধব পুলিশ সেবা উত্তরা পুলিশ কন্ট্রোল রুম; পেনশনাদের জন্য মাসে ৩দিন স্বাস্থ্য সেবা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ গাজীপুর; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিউবওয়েল যথাযথভাবে নিয়মিত সচল রাখা বগুড়া; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ মৌলভীবাজার; পরিচ্ছন্ন বিদ্যালয়ের জন্য অনাকাঙ্খিত লেখালেখি বন্ধকরণ ভেদেরগঞ্জ, শরীয়তপুর; বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা ফরিদপুর; জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজীকরণ গাজীপুর; সমাজসেবা অফিসে আগতদের বসার ব্যবস্থা ও

প্রতিবন্ধীদের চলাচলে র‌্যাম্প তৈরিকরণ, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ; খাদ্য ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স সংখ্যা বাড়ানো নোয়াখালী; সব উপজেলায় একটি করে উৎপাদনমুখী মডেল সমবায় সমিতি গঠন, ফরিদপুর; জনগণকে দ্রুত তথ্য সেবা প্রদানের জন্য তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ফরিদপুর; ৩টি ইউনিয়নে পরিষদে বিআরডিবিভুক্ত সমবায় সমিতি তথ্য ইউপি কার্যালয়ে প্রদর্শন, নোয়াখালী; কলেজ ব্যবস্থাপনা সহায়তায় কলেজ প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ সদর, শরীয়তপুর; আনসার ভিডিপি সদস্যদের তথ্য ডাটাবেইজে অর্ন্তভুক্তকরণ, ফরিদপুর; যুবকদের মাঝে যৌতুক বিরোধী সচেতনতা বাড়ানো, যশোর; নিরাপদ প্রসব সেবার জন্য রেফারেন্স তৈরি ও ব্যবহার, টাঙ্গাইল; নদীতে খাচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ ও গুণগত মান বাড়ানো সদর, নরসিংদী।

এসবের সফল বাস্তবায়ন করে প্রমাণিত উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে সন্তুষ্ট করেছে জ্যামিতিক হারে। এছাড়া আরো হতে পারে-থানায়-হাসপাতালে-অফিসে অধিকার বোর্ড স্থান। এতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং ক্লায়েন্ট সবার কষ্ট কমবে সময় বাঁচবে জটিলতা ভীড় কমবে, লাভ বেশি হবে। তাছাড়া অফিসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নামফলক নির্দেশনা স্থাপন; তাৎক্ষণিক সেবা দান, শুদ্ধাচার, শুদ্ধিকরণ,

সেবা ঘোষণা, সময় সচেতনতা, দিনের কাজ দিনে শেষ করা, অফিস সজ্জিতকরণ, ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানের ডাস্টবিনে ফেলা এবং রিসাইক্লিং; যৌতুক বন্ধ, নারী নির্যাতন রোধ, দুস্থদের সেবা সহযোগিতা প্রদান; নেশা মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়ানো; ধূমপান বন্ধকরণ, ভিক্ষুক মুক্তকরণ/পুনর্বাসন, অফিসে সাপ্তাহিক হৃদ্যতাপূর্ণ বিশেষ মিটিং, পাবলিক স্যানেটারি স্থাপন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ; রাস্তা ঘাটে ছায়া বিশ্রামাগার, সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণসহ আরো কত কী।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি ভূবনে আছে হাজারো প্রযুক্তি কৌশল যা অনুসরণ বাস্তবায়ন করলে কৃষি আরো জেগে উঠবে, এগিয়ে যাবে গতি পাবে। এর মধ্যে ভাসমান কৃষি কার্যক্রম, সর্জান পদ্ধতিতে আবাদ, ছাদকৃষি, বসতবাড়িতে মিশ্র ফসলের আবাদ, আইল/রাস্তার ধারে ফসল, বেড়াফসল আবাদ, জীবন্তবেড়া, বহুস্তরী ফসল আবাদ, এলসিসি, ড্রামসীডার, এডাব্লিওডি, লগোপদ্ধতি, পার্চিং, আলোরফাঁদ, সেক্সফেরোমেন, ফ্রুটব্যাগিং, উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, সমন্বিত কৃষি, জৈবকৃষি ও পরিবেশবান্ধব কৃষি, মালচিং, ভার্মি/কুইক কম্পোস্টিং, সৌরটেবিল, সৌর বিদ্যুৎ সেচ, কুমড়া জাতীয় ফসলে হাত পরাগায়ন, বায়োগ্যাস-বায়োস্লারি তৈরি ও ব্যবহার, শুকনা বীজতলা, সবুজসার, জীবাণুসার, গুটিইউরিয়া, মিশ্রসার ব্যবহার,

বীজতলায় পোকা দমনে ছাইয়ের ব্যবহার, জমিতে কাকতাড়ুয়া পলিথিন কলাগাছের ব্যবহার, টিনের পাতে ইুঁদর দমন, মৌমাছি পালন, বালু দিয়ে আলু সংরক্ষণ, পেয়ারার ডাল বাঁকা করে নতুনডালে নতুন/বেশি ফল আনা, বিভিন্ন চিপস তৈরি, ফলের জ্যাম জেলি জুস তৈরি, ফলে গরম পানির ট্রিটমেন্ট, লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ, রঙধনু পুষ্টি চার্ট অনুসরণ, পুষ্টিসম্মত রান্নার কৌশল, পাট পলিব্যাগ ব্যবহার, পাটের রিবন পদ্ধতি, আইপিএম-আইসিএম-আইএফএমসি অনুসরণ, বীজ বাছাই, বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা, বীজ শোধন, বীজতলা/মাটি শোধন, হলুদ ফাঁদ ব্যবহারসহ আরো হাজারো প্রযুক্তি কৌশল অবলম্বন। এগুলো অবলম্বন করলে খরচ যেমন কমে যাবে সময় বাঁচবে, লাভ হবে অনেকগুণ বেশি পরিবেশ থাকবে সুসমন্নত।

কাইযেন পারে কৃষকদের সংগঠিতকরণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি বার্তা দ্রুত সম্প্রসারণ, উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণে সক্ষম করে তোলা হয়। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি পক্ষে, প্রতি মাসে নতুন বিশেষ কিছু করা, ছোট ছোট কিছু করা, কাজের পরিকল্পনা রেকর্ড তৈরি করা, তদারকি মূল্যায়ন নিয়মিত পরিমিত করা, কাজের চক্র তৈরি করা যাতে সেবা গ্রহণকারীগণ আপন গতিতে সহজে নিজে সেবা নিতে আসবেন এবং অন্যকে সেবা নিতে উৎসাহিত করবেন।

এ যাবৎ ২৪টি জাতিগঠনমূলক সংস্থা বিভাগে ৪০টির বেশি জেলা তাদের কিছু কিছু সেবা কাইযেনভুক্ত করেছে। ২০১৮ শেষ নাগাদ দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে। ২০১৩ থেকে বিপিএটিসি জাইকার সমন্বয়ে আইপিএস-টিকিউএম প্রকল্প হতে অনেককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য কাইযেন রোল মডেল হিসেবে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এতে কাজের মান পরিসর আগ্রহ দক্ষতা অনেক বেড়েছে।

স্মরণ করতে হবে আমাদের সৃষ্টিশীল ধ্যান ধারণা, মানবীয় ধৈর্য ধীশক্তি, সুপরিকল্পিত সুষ্ঠু কার্যকর বাস্তবায়ন আমাদের কাঙ্খিত শুভ সুন্দর বিস্তৃত গর্বিত সফলতা এনে দেয়। মনে রাখতে হবে দেশজ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে দেশে সচেতন দক্ষ যোগ্য মেধাবী আগ্রহী জনশক্তি। এদের ভালো সহজ সরল কৌশুল শিখনসমূহ আত্মস্থ করিয়ে বাস্তবায়নে নিবেদিত করতে পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সুনিশ্চিত হবে। সাথে সাথে ভালো কার্যকর শিখনের প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নয়ন পরিকল্পনা কর্মসূচি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি বেসরকারি

সম্মিলিতভাবে সেবার মানোন্নয়ন করে জনসমষ্টি ও জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। কাইযেন সহজ সরল কম খরচি, কম সময়ের প্রাপ্য সম্পদের ভিত্তিতে সহজে করার মতো কৌশুলি সন্নিবেশিত উদ্যোগ। আমাদের নিজেদের প্রাপ্যতা, পরিকল্পনা, হিম্মত, ইচ্ছে, উদ্যোগ, আগ্রহ, উচ্ছ্বাস আর উদ্দমকে সহায়ক শক্তি এবং ছায়াসঙ্গী হিসেবে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলে কাইযেনের যাত্রা মাত্রা পাবে বাস্তবায়িত হয়ে আমাদের সুখ সমৃদ্ধি বেড়ে বর্ণিল আশার আলোর মুখ দেখাবে।

শক্তি আমাদের বিশ্বাস। টিকিউএম-কাইযেন বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আমরা যদি আমাদের নিত্য দিনের কাজ কর্মের সাথে আবশ্যকীয়ভাবে সম্পৃক্ত সংযুক্ত করতে পারি তাহলে এ দেশ নিয়ে আমরা অনেকটুকু এগিয়ে যেতে পারবো। আলোকিত সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারবো। তখন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং জনবান্ধব সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদ্দিক আশার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটবে। আমরাও বলবো সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এ দেশে।

লেখক : কৃষিবিদ, অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এইচআর/জেআইএম

‘মনে রাখতে হবে দেশজ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে দেশে সচেতন দক্ষ যোগ্য মেধাবী আগ্রহী জনশক্তি। এদের ভালো সহজ সরল কৌশুল শিখনসমূহ আত্মস্থ করিয়ে বাস্তবায়নে নিবেদিত করতে পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সুনিশ্চিত হবে। সাথে সাথে ভালো কার্যকর শিখনের প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নয়ন পরিকল্পনা কর্মসূচি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি বেসরকারি’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।