প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সড়ক দুর্ঘটনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। নির্বিকারভাবেই চলছে সবকিছু। ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ৫২ জনের। এই মৃত্যু কি অনিবার্য? এমনই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন যা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। সংশ্লিষ্টদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যর ভূমিকা নেয়ার বিকল্প নেই।
গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- ড্রাইভার ও হেলপারদের (চালকের সহকারী) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। লং ডিস্টেন্স (দূর পাল্লার) ড্রাইভিং যারা করেন সেখানে বিকল্প ড্রাইভারের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ একজন ড্রাইভারের গাড়ি চালনা একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি যেন না হয়। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা নিয়ম, যে একজন ড্রাইভার দূরপাল্লায় ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবে না। রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার থাকবে ‘যেখানে ড্রাইভাররা বিশ্রাম নিতে পারবেন এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে।’
এছাড়া রাস্তায় পারাপারের ক্ষেত্রে পথচারীদের অনিয়মতান্ত্রিক পারাপার বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। রাস্তায় সিগন্যাল যেন চালু থাকে। লোকজন যেন সিগন্যাল যেন মেনে চলে সেই ব্যবস্থা করা। জেব্রা ক্রসিং পথচারীদের জন্য অপরিহার্য করা। গাড়িতে যাত্রী ও চালকের সিটবেল্ট পরা নিয়ন্ত্রণ, যাতে তারা অবশ্যই সিটবেল্ট পরার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিষয়গুলো আরও নিবিড়ভাবে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রীকে মাঝে মধ্যে বসে বিষয়টি পরিবীক্ষণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সড়ক দুর্ঘটনা কিছুতেই কমছে না, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অবস্থা ‘মহামারী’ আকার ধারণ করেছে বললেও অত্যুক্তি হবে নাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর থাকছে। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়।
দুর্ঘটনার কারণগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই কমবেশি জানেন। এর মধ্যে রয়েছে- দেশে সড়ক অবকাঠামো এবং স্থলভাগের আয়তন অনুপাতে জনসংখ্যার চাপ বেশি। সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন। উপরন্তু সড়ক ও মহাসড়কগুলো ত্রুটিপূর্ণ। দেশব্যাপী মহাসড়কের অনেক স্থানেই রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। এসব বাঁকের কারণে প্রায়শই সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রতিবার দুর্ঘটনার পর পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদন কোনদিন আলোর মুখ দেখে না। আর সঙ্গত কারণেই দোষীদের শাস্তিও হয় না। সমাজের উঁচু স্তর থেকে নিচু শ্রেণির মানুষ- যারাই দুর্ঘটনার শিকার হন না কেন কোন একটি ঘটনার বিচার হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার। আর বিচারহীন, প্রতিকারহীন অবস্থায় কোন কিছু চলতে থাকলে সেটির পুনরাবৃত্তিও তো ঘটবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কত প্রাণ গেলে, মৃত্যুর মিছিল কত দীর্ঘ হলে তবে থামবে এই হত্যাযজ্ঞ?
সড়ক দুর্ঘটনা হয় না এমন দেশ নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভাল যান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, সড়ক ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করার বিষয়গুলো তো রয়েছেই। এর সঙ্গে দুর্ঘটনায় পতিতদের ত্বরিত চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/এমএস