ব্যস্ততা এবং সুস্থতা
এখনও ঈদের আমেজ চলছে দেশব্যাপী। চলবে আরো কয়েকদিন। সেই সাথে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। মিলেমিশে দারুণ আনন্দ নিয়ে সময় পার করছে দেশবাসী। যদিও কিছু অঞ্চলে বন্যার পানিতে মানুষ কষ্টে আছে। সেখানে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাক, মানুষের কষ্ট লাঘব হোক— সে কামনা করছি।
শহর এখন অনেকটাই ফাঁকা। শহর ছেড়ে সবাই এখন গ্রামে আছে। আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে খাওয়া দাওয়া এবং ঘোরাঘুরি করে সময় পার করছে। দু’একদিন পরেই আবার ফিরে আসতে হবে যার যার কর্মক্ষেত্রে। শহর হয়ে উঠবে কর্মব্যস্ত। নতুন উদ্যমে আবার কাজে নেমে পড়তে হবে। ছুটির এ সময়েও তাই শারীরিক সুস্থতা খুবই দরকার।
উন্নয়নশীল দেশে হলেও এটা এখন দিনের আলোর মতো সত্য যে আমাদের দেশে অনেকেই এখন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন। অননেকে প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে আছেন। বয়স্ক নন; অল্প বয়সীরাও এখন এ রোগে বেশ আক্রান্ত হচ্ছেন। ঝুঁকিতেও তারাই প্রায় সামনের কাতারে চলে আসছে।
প্রথমেই তাই এ রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপায় বলে নিই। এখন অবশ্য অনেকেই জানেন কিভাবে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হয়। আর যারা এ রোগে ভুগছেন তারাও জানেন যে কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তবুও বলি। কারণ এটা বারবার করে বলতে হবে।
নিজেকে এবং আশপাশের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা বা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেটা দরকার সেটা হচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম। আর পরিমিত খাবার গ্রহণ। ফাস্টফুড, চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া এবং খাবারে বাড়তি লবণ এড়িয়ে চলা।
বড় বড় শহরে শারীরিক পরিশ্রম করা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খোলা মাঠ নেই। নির্মল বাতাস নেই। আছে বিশুদ্ধ পানিরও অভাব। এ অবস্থার ফলে অসংক্রামক এ ব্যাধি এখন সহজেই শরীরে খুঁটি গেড়ে বসতে পারছে।
তাই যারা এখনও গ্রামে আছেন তারা ইজিবাইক, ভ্যান এসবে না চড়ে বরং পারলে অল্প দূরত্বে হেঁটেই যান। এতে শরীরে জমা হওয়া বাড়তি ক্যালরি ক্ষয় হবে সহজেই। তাতে ডায়াবেটিস এবং প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
যে কোনো উৎসব বা আনন্দের সময় আমরা অনেক সময় ভুলে যাই আমাদের শারীরিক অসুস্থতার কথা। ভুলে যাই খাবার এবং ওষুধ খাওয়ার নিয়ম কানুন মেনে চলা বা বিধি নিষেধ যদি কিছু থাকে তা পালনের কথা। মনে হয় , মাত্র দু’একদিনই তো! দুই একদিন নিয়ম না মানলে বা এদিক ওদিক করে ওষুধ খেলে কি আর এমন ক্ষতি হবে! আর উৎসবের সময় এরকম একটু আধটু তো হয়ই!
কিন্তু এমন অবহেলার ফলে মনে রাখবেন জীবন সংশয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে অন্যান্য দিনের মতোই কিন্তু খাবার দাবার গ্রহণের বাধ্যবাধকতা যতটা সম্ভব পারা যায় সেটা মেনে চলতে হবে। আর ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে কিন্তু বিন্দুমাত্রও ঢিলেমি করা যাবে না। কারণ, তাতে আপনার ঈদ আনন্দ আয়োজন কিন্তু পন্ড হয়ে যেতে পারে।
ধরুন একজন ডায়াবেটিসের রোগী। তিনি সকালে ওষুধ খেলেন না। বা ইনসুলিন নিলেন না। আবার ইচ্ছেমতো মিষ্টি, সেমাই , কোল্ড ড্রিংক্স এসব খেলেন। তাহলে খুব দ্রুত কিন্তু রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। অথবা ডায়াবেটিসের রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়েছেন বা ইনসুলিন নিয়েছেন কিন্তু যথাসময়ে খাবার না খেলেও অবস্থা কিন্তু ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, এতে রক্তে চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত কমে গিয়ে প্রাণহানির সমূহ আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
আবার একজন উচ্চরক্তচাপের রোগী যদি ঠিকমতো ওষুধ না খান তাহলে কিন্তু রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। এতে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া এর সাথে যাদের আগে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হয়েছে বা খুব বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা নিয়মমেনে পরিমিত খাবার যেমন খাবেন তেমনিভাবে ওষুধও খেয়ে যাবেন। একদম অবহেলা করবেন না।
হৃদরোগীরা যতটা সম্ভব তেল, চর্বি জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংক্স, আইসক্রিম এগুলো এড়িয়ে চলুন। অন্ততপক্ষে একবারে বেশি খাবেন না।
ঈদ আনন্দে নিজের এবং পরিবারের অসুস্থ মানুষটির কথা ভুলে যাবেন না। প্রয়োজনীয় ওষুধ তিনি খাচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করুন। পরিবার, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন সকলে মিলেমিশে সুন্দর পরিবেশে এবং সুস্থ দেহে ঈদ আনন্দ উদযাপন করুন- সে কামনা করছি।
লেখক : চিকিৎসক ও শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।
এইচআর/এমএস