শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা : জাত-পাতের বৈষম্য দূর হোক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:১০ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন। একই দিনে বুদ্ধের বোধি লাভ আর মহাপরিনির্বাণও হয়। দিনটির তাৎপর্য তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে আরো বেশি। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’-এই ঐকান্তিক শুভ কামনার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আজ পালন করছেন পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমা। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে উৎসব পালন হচ্ছে বুদ্ধপূজা ও শীল গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ রোববার সরকারি ছুটি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হোক-এটিই প্রত্যাশা।

বৌদ্ধ ধর্মমতে, আজ থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ সালে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বর্তমান নেপালে শাক্যরাজ শুদ্ধোধন ও রানী মহামায়ার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। জন্মের কিছু দিন পরই সিদ্ধার্থের মা ইহলোক ত্যাগ করেন। তখন মাসী মহাপ্রজাপতি গৌতমী সিদ্ধার্থের লালন-পালন করেন। এ কারণে সিদ্ধার্থ `গৌতম` নামে পরিচিতি পান। গৌতম তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন ত্যাগেই জীবন সার্থক ও সুন্দর হতে পারে। তিনি হয়ে ওঠেন মুক্তির নির্দেশনাদাতা-গৌতম বুদ্ধ।

গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন ৮০ বছর বয়সে। সঠিকভাবে বললে আজ থেকে (২৫৬১+৮০), ২৬৪১ বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিস্টের জন্মের ৬২৩ বছর আগে সিদ্ধার্থের (পরবর্তী সময়ে গৌতম বুদ্ধ) জন্ম হয়। তিনি ৩৫ বছর বয়সে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে বুদ্ধত্ব জ্ঞান বা বোধিজ্ঞান লাভ করেন। আর মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন (৬২৩-৮০) খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে।

বুদ্ধপূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। ইদানীং বিশ্বব্যাপী ঘটা করে বুদ্ধপূর্ণিমা পালিত হতে দেখা যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের মতো মহান ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা এখন সর্বজনীন উৎসব।

জগৎ অনাচার, পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ আর হিংসায় মানুষ যখন মেতে উঠল, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন। তিনি মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁর সাধনা ও সুখ কামনা ছিল সব প্রাণীর জন্য।

বৌদ্ধ ধর্ম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মগুলোর অন্যতম। সকল প্রাণী সুখী হোক, এর চেয়ে মহান উচ্চারণ আর হয় না। বাংলাদেশে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম একটি। বলা দরকার, এ ভূখণ্ডের প্রাচীনতম ধর্মও বটে। বৌদ্ধদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করে দেখা যায়, তাঁরা আন্তরিকভাবে সেবাধর্মে খুবই বিশ্বাসী। এবং মানুষের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা তাঁদের অসুখী করে। এ রকম চিন্তা করা কারও উচিত নয় বলেই তাঁরা মনে করেন।

বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে। এদিনে সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমাদের প্রত্যাশা শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

এইচআর/এমএস

‘বৌদ্ধদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করে দেখা যায়, তাঁরা আন্তরিকভাবে সেবাধর্মে খুবই বিশ্বাসী। এবং মানুষের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা তাঁদের অসুখী করে। এ রকম চিন্তা করা কারও উচিত নয় বলেই তাঁরা মনে করেন।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।