ডায়রিয়ার প্রকোপ : বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দূর করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৮

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতেও আসে কিছু অনিবার্য পরিবর্তন। গ্রীষ্মের শুরুতেই দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে লোকজন। বিশেষ করে ডায়রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিশুরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশব্যাপীই ডায়রিয়ার প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। গত তিন দিনের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি দুই মিনিটে একজন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের ৩০ শতাংশই শিশু। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ রোগী আসছে তীব্র ডায়রিয়ার লক্ষণ নিয়ে। তীব্র ডায়রিয়ায় শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়। অল্প সময়ে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, গত বছর এই সময়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম ছিল। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, দক্ষিণখান, বাড্ডা, লালবাগ, মিরপুর, মুলাইদ, মোহাম্মদপুর, রমনা থেকে বেশি রোগী হাসপাতালে আসছে। কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকেও রোগী আসছে।

আইসিডিডিআর’বির চিকিৎসকরা বলছেন ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দূষিত পানি পান ও খাবার খাওয়ার ফলে পানিবাহিত এ রোগটি হচ্ছে। জীবিকার সন্ধানে ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। অত্যধিক গরমের কারণে মানুষ প্রচুর পরিমাণে ঘামছে। গরমে স্বস্তি পেতে রাস্তার ধারে বরফমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের শরবত ও ফলমূল (আখ, লেবু, বেল, আনারস, আম ইত্যাদি) খাচ্ছেন। দূষিত পানির শরবত ও খোলা পরিবেশে ধুলাবালি মিশ্রিত ফলমূল খেয়ে ডায়রিয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরি।

গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে বেশি বেশি পানি পান করার কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিশুদ্ধ পানিরও সংকট। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য রাস্তার ধারের দোকান থেকে যে পানি বা শরবত পান করছে তা বিশুদ্ধ নয়। এ কারণে রোগ সারার বদলে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এই অস্বাস্থ্যকর শরবত বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তারও আগে করতে হবে বিশুদ্ধ পানির সংস্থান। পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। ডায়রিয়া দেখা দিলে বিধি মেনে স্যালাইন খেতে হবে। অবস্থার উন্নতি না হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যেতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব আছে। নিরাপদ পানির সংকট আছে, এমন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি সরবরাহ করতে হবে। ওয়াসাকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ওয়াসার পানি নিয়েও নানা কথা আছে। এ ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সহজলভ্য করতে হবে স্যালাইন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা যেন চিকিৎসা পায় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও। ডায়রিয়া সম্পর্কে সচেতনামূলক প্রচারণাও চালাতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

‘গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে বেশি বেশি পানি পান করার কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিশুদ্ধ পানিরও সংকট। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য রাস্তার ধারের দোকান থেকে যে পানি বা শরবত পান করছে তা বিশুদ্ধ নয়।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।